কণাটার চারপাশে ব্যাণ্ডেজের মত জড়িয়ে যায় রস, না? মুসা বলল। খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে। বছরের পর বছর প্রাণীগুলোকে এভাবে জ্যান্তরেখে কষ্ট দেয়া…
মানুষের কাজই তো এরকম। ওই যে, জোর যার মুল্লুক তার। হ্যাঁ, আবার নোট পড়ায় মন দিল রবিন। মুক্তো বড় হলে ঝিনুকের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে পাঠানো হয় বাজারে। কালচার্ড মুক্তোর ব্যবসা জাপানেই বেশি, বড় বড় ফার্ম গড়ে উঠেছে। কালচার্ড হলে কি হবে, দাম কম না, কোন কোনটা কয়েকশো ডলারও ওঠে।
আচ্ছা, কালচার্ড বলে কেন এগুলোকে? জিজ্ঞেস না করে পারল না মুসা। সভ্য কিংবা সাংস্কৃতিমনা ঝিনুকের ভেতরে জম্মায়?
মুসার মোটা বুদ্ধি দেখে হতাশ ভঙ্গিতে ঠোঁট ওল্টালো কিশোর।
না না, অধৈর্য হলো না রবিন। কৃত্রিম বলে এই নাম রাখা হয়েছে।
অ, মাথা দোলাল মুসা, মুক্তোর ফার্মেই কাজ করে তাহলে হ্যারিকিরি, পেছনে বাগবাকুম শুনে ফিরে দেখল, তার দিকেই চেয়ে আছে টম। জালের ফাক দিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে পাখিটাকে আদর করল সে। এজন্যেই ওখানে গার্ডের এত, কড়াকড়ি, মুক্তো যাতে চুরি হতে না পারে, তাই না, কিশোর?
তাই, চেয়ারে হেলান দিল কিশোর। ঢোকার সময় শ্রমিকদের তল্লাশি করা হয় না। তাতেই আইডিয়াটা খেলেছে হ্যারিকিরি আর হ্যারিসের মাথায়। সহজ ফন্দি, মজাটাই ওখানে, বেশি সহজ হওয়াতেই ধোকা খাচ্ছে গার্ডেরা। খাঁচায় ভরে একটা রেসিং হোমারকে ভ্যানে রেখে দিয়ে আসে হ্যারিস। ফার্মে ঢোকার আগে খাঁচা থেকে পাখিটাকে বের করে লাঞ্চ বক্সে ভরে নেয় হ্যারিকিরি, চুপ করল সে।
অপেক্ষা করছে অন্য দুজন।
ঝিনুকে ভাল মুক্তো পেলে সেটা রেখে দেয় হ্যারিকিরি, আবার বলল কিশোর, লাঞ্চের সময় বাক্স থেকে কবুতরটাকে বের করে তার পায়ে ঝিনুক বেঁধে দেয় কোনভাবে, হয়তো ছোট থলিটলিতে ভরে বা অন্য কোনভাবে। আশেপাশে এত পাখির ছড়াছড়ি, বিশেষ কবুতরটাকে খেয়ালই করে না গার্ডের। উড়ে সোজা বাড়ি চলে যায় ওটা, তখন খুলে নেয় রিচার্ড হ্যারিস।
বুঝলাম, বলল রবিন, লাঞ্চের আগে ভাল মুক্তো পাওয়া না গেলে একটা মেসেজ বেঁধে কবুতর ছেড়ে দেয় হ্যারিকিরি। জাপানী ভাষায় মেসেজটাতে লেখা থাকে, আজ মুক্তো নেই, যে রকম পেয়েছি আমরা দু-আঙুলা কবুতরটার পায়ে বাধা। কিন্তু, থামল সে, কিছু একটা ভেবে অবাক হচ্ছে, খাপে খাপে মেলাতে পারছে না বোধহয়। আবার বলল, কিন্তু…
কিন্তু এটা রিচার্ড হ্যারিসের নয়, রবিনের কথাটা শেষ করল কিশোর, ব্লিংকির, এই তো? অন্তত স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টে তার কাছে ছিল ওটা। খাঁচাটাও হ্যারিসের কবুতরের খাঁচার মত; একই ধরনের চীজকুথে মোড়া, হাত বাড়াল সে, দেখি,অন্য বইটা দাও।
দ্বিতীয় যে বইটা লাইব্রেরি থেকে নিয়ে এসেছে রবিন ওটা আসলে ম্যাপ, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার রোড অ্যাটলাস। পাতা উল্টে স্মল-স্কেলের একটা ম্যাপ বের করল কিশোর, তাতে রকি বীচ আর সান্তা মনিকার বিভিন্ন পথ দেখানো রয়েছে। অন্য দুই গোয়েন্দাও প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল ম্যাপের ওপর।
এই যে, এটা উইলস বীচ, ম্যাপের এক জায়গায় আঙুল রাখল কিশোর। ঝিনুকের খামারটা হবে এখানে। আর রিচার্ড হ্যারিসের বাড়ি, উপকূল বরার ধীরে ধীরে আঙুল সরাল কিশোর, রকি বীচে এসে থামল। এই যে, এখানে। ফোন গাইডে তার ঠিকানা পেয়েছি। এটা হলোগে শহরের পশ্চিম সাইড।
ড্রয়ার থেকে একটা রুলার বের করে ফার্ম আর রিচার্ডের বাড়ি, এই দুটো পয়েন্টের ওপর রাখল কিশোর, কি বোঝা যায়?
সরাসরি আকাশ পথ বেশির ভাগটাই সাগরের ওপর দিয়ে, বলে উঠল মুসা। ফার্ম থেকে হ্যারিসের বাড়ি ছয় মাইল!
রেসিং হোমারের জন্যে বড় জোর ছয় মিনিটের পথ, মুসার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল রবিন। দুপুরে বাড়ি গিয়ে হ্যারিসকে মোটেই অপেক্ষা করতে হয় না, মুক্তো কিংবা মেসেজ পেয়ে যায়।
কিন্তু তাহলে মিস কারমাইকেলের বাগানে কবুতর মরে কি করে, মানে রেসিং হোমারের লাশ পাওয়া যায় কিভাবে? প্রশ্ন রাখল মুসা। তাঁর বাড়ি তো শহরের পুবধারে। ম্যাপে আঙুল রাখল, এই যে, এখানে। রিচার্ডের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। কোর্স থেকে এতখানি সরে গিয়েছিল দু-আঙুলা?
হ্যারিসের বাড়িতে যায় ভাবলে সেটা মনে হবে, লার সরিয়ে ফার্ম আর মিস কারমাইকেলের বাড়ির ওপর রাখল কিশোর। কিন্তু যদি এখানে যায়? ম্যাপের আরেক জায়গা নির্দেশ করল সে।
সান্তা মনিকা, বিড় বিড় করল রবিন।
রিংকির বাড়িতে? মুসা বলল।
হতে পারে, রবিনের মনে পড়ল, রিংকি বলেছিল সে সান্তা মনিকায় থাকে…
সুতরাং, আগের কথার খেই ধরল কিশোর, দু-আঙুলার মালিক যদি রিংকি হয়, আর বাড়ি যেতে চায় কবুতরটা তাহলে মিস কারমাইকেলের বাগানের ওপর দিয়ে যেতে হবে। ধরে নিতে অসুবিধে নেই, বাজের কবলে পড়েছে ওটা তখনই। টেবিলে বার দুই টোকা দিল সে। আর, আমার মনে হয় দু-আঙুলাই প্রথম মারা পড়েনি, রিংকির আরও কবুতর মারা পড়েছে মিস কারমাইকেলের বাগানে। মহিলা বলেছেন, এক মাসে তাকে তিনটে মুক্তো এনে দিয়েছিল হীরা। পেল কোথায় পাখিটা? নিশ্চয় বাগানে, মরা কবুতরের পায়ে বাধা, ঠুকরে ঠুকরে কোনভাবে খুলে নিয়ে গেছে মনিবকে উপহার দিতে।
মিলছে, একমত হলো মুসা।
ম্যাপ বই বন্ধ করল কিশোর, ভুরু কেঁচকাল মেলে, যদি হ্যারিস আর রিংকি পার্টনার হয়। তাহলে একদিন হ্যারিসের কবুতর ব্যবহার করবে, আরেক দিন রংকির। আর তা হলেই শুধু হ্যারিসের আজব ব্যবহারের একটা অর্থ করা যায়। ব্রিংকির পাখি মারা পড়ায় পার্টনার হিসেবে সে-ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল, রাতের বেলা তদন্ত করতে গিয়েছিল মিস কারমাইকেলের বাগানে। আমাকে দেখে ভেবেছিল আমিই খুনী, তাই রাগ সামলাতে না পেরে বাড়ি মেরে বসেছে।