আমার নাম স্লেটার বটে, বলল সে, কিন্তু চোখ টিপি বলে সবাই ডাকে রিংকি। বলতে বলতেই আরেকবার চোখ টিপল।
এবার আর হাসি এল না ছেলেদের, খারাপ লাগছে লোকটার জন্যে। চোখ সে ইচ্ছে করে টেপে না, এটা তার মুদ্রাদোষ। চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারে না।
এক সঙ্গে বসে চা খেলো ওরা। একটা দশ ডলারের বিল ওয়েইট্রেসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্লেটার বলল, হ্যামবারগারের দামও রাখুন, চোখ টিপল। না না, মানা কোরো না। আমি তোমাদের খাওয়ালাম। বন্ধু ভাবতে আপত্তি আছে? চোখ টিপল।
কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়েছে ওয়েইট্রেস, স্লেটারের চোখ টেপার কি অর্থ করেছে কে জানে, রাগ দেখা গেল তার চোখে। কিছু বলতে গিয়েও বলল না। নোটটা নিয়ে গটমট করে হেঁটে চলে গেল। বিল রেখে ভাঙতি নিয়ে ফিরে এল।
মেহমানদারীর জন্যে সেটারকে ধন্যবাদ জানাল ছেলেরা।
পরের কয়েক মিনিটেও ভারি কোন এঞ্জিনের শব্দ শোনা গেল না। সেটার উত্তেজিত, কথা বলার পরিবেশ নয়। তাছাড়া কি বলবে? অর্ধেকটা রুটি রেখে দিয়েছিল বলে নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ জানাল এখন কিশোর, চুপচাপ খাচ্ছে ওটা,
কথা বলতে হচ্ছে না উসখুস করছে অন্যেরা।
অবশেষে কিশোরই সহজ করল পরিবেশ। জিজ্ঞেস করল, সান্তা মনিকায় থাকেন আপনি, না?
ঝট করে সোজা হয়ে গেল স্লেটার। হাত চলে গেল বাক্সের ওপর। পরের কয়েকটা সেকেণ্ড তার ডান চোখটা দ্রুত বার বার উঠল নামল। কি করে জানলে? শুকনো কণ্ঠ।
লোকটাকে চমক দিতে চায়নি কিশোর। হাসল। না না, তেমন কিছু ভেবে বলিনি। এটা আমার কাছে খেলা; এক ধরনের খেলা, বুঝিয়ে বলল সে। পার্কিং লটে তিনটে গাড়ি দেখলাম। একটার সামনের সীটে একটা খেলনা ভালুক পড়ে আছে। ধরে নিলাম ওটা ওই মহিলার, ওই যে সলে একটা মেয়ে। আরেকটা গাড়ির ছাতে দেখলাম সাফবোর্ড বাধা। সুগঠিত স্বাস্থ্য, রোদে পোড়া বিবর্ণ চুল এক তরুণ কোক খাচ্ছে কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়ে, তাকে দেখিয়ে বলল গোয়েন্দা প্রধান, ওই গাড়িটা ওর। কি করে বুঝলাম? স্বাস্থ্য আর চুল দেখেছেন? সার্ফবোর্ড নিয়ে ঢেউয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলা ওকেই মানায়, না? স্লেটারের দিকে চেয়ে মাথা নাড়ল সে। বাকি থাকল আর একটা গাড়ি। সান্তা মনিকার নাম্বার প্লেট।
নীরবে কিশোরের দিকে চেয়ে আছে সেটার। চমৎকার খেলা। একেবারে গোয়েন্দাগিরি।
গোয়েন্দাই আমরা, কথাটা গোপন রাখার প্রয়োজন দেখল না কিশোর। এরা দুজন আমার সহকারী।
পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে স্লেটারের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে।
বিড়বিড় করে পড়ল লোকটা, কিশোর পাশা, গোয়েন্দাপ্রধান…মুসা আমান, সহকারী গোয়েন্দা…রবিন মিলফোর্ড, নথি গবেষক।…, টেলিফোন নম্বরটাও পড়ল। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের নম্বর নয়, তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বর। নিজেদের রোজগার থেকে ওটার বিল দেয় ওরা।
আশ্চর্যবোধক চিহ্নগুলো কেন? জিজ্ঞেস করল স্লেটার।
অদ্ভুত সব রকম রহস্যের কিনারা করতে আমরা প্রস্তুত, বিশেষ বিশেষ সময়ে দুর্বোধ করে কথা বলা কিংবা কঠিন শব্দ ব্যবহার করা কিশোরের স্বভাব।
মাথা ঝাঁকাল স্লেটার। কি ভেবে কার্ডটা রেখে দিল পকেটে। খুব বেশি:… থেমে গেল সে।
কি বলতে চেয়েছিল-বেশি রহস্য, বেশি মক্কেল, না বেশি কেস-বোঝা গেল। লাফিয়ে উঠে গিয়ে দাঁড়িয়েছে জানালার কাছে। ভারি মোটরের গর্জন,কানে আসছে। শব্দের অসঙ্গতিই প্রকাশ করে দিচ্ছে, দোষ আছে এঞ্জিনে।
কিশোরও তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। পাহাড়ী পথের মোড় ঘুরে গো গো করতে করতে আসছে একটা গাড়ি। ড্রাইভারকে জাপানী বলে মনে হলো।
স্লেটারের দিকে ফিরল কিশোর। কিন্তু আগের জায়গায় নেই…দরজার কাছে চলে গেছে। আরেক মুহূর্ত পরেই বেরিয়ে ছুটে যাবে পারকিং লটের দিকে।
সবার আগে লাফ দিয়ে উঠল মুসা। নিয়মিত ব্যায়াম করে, শরীরের ক্ষিপ্রতাও তাই অন্য দুজনের চেয়ে বেশি। মেঝেতে রাখা বাক্সটা থাবা দিয়ে তুলে দৌড় দিল লোকটার পেছনে। এই যে, শুনুন, চেঁচিয়ে ডাকল সে, আপনার বাক্স…।
থামল না স্লেটার।
পেছন পেছন দৌড়াল মুসা। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। গাড়িতে উঠে দরজা বন্ধ করছে স্লেটার। স্টার্ট নিয়ে শাঁ করে বেরিয়ে গেল দুই দরজার কালো সিডান গাড়িটা, হাইওয়েতে উঠেই স্পীড বাড়িয়ে দিল।
ফিরে এল মুসা। বাক্সটা নামিয়ে রাখল টেবিলের পাশে।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর, গভীর ভাবনায় মগ্ন। চিমটি কাটে কেন জিজ্ঞেস করেছে মুসা। কিশোরের জবাব, এতে নাকি তার একাগ্রতা আনতে
সুবিধে হয়।
বাক্সটা ওয়েইট্রেসের কাছে রেখে যাব, রবিন বলল। রিংকি শিওর ফিরে আসবে। ওটা নিতে।
মুসাও তার কথায় সায় দিল।
কিন্তু কিশোর চুপ। চিমটি কেটেই চলেছে। সবুজ ভ্যান দেখে স্লেটারের অস্বাভাবিক উত্তেজনা কৌতূহলী করে তুলছে তাকে। তার সদা-সন্দিহান মন সব প্রশ্নের জবাব খোজে, জবাব না পাওয়া পর্যন্ত নিরস্ত হয় না।
আমি বলি কি, বাক্সটা হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া যাক, অবশেষে মুখ খুলল কিশোর, তার ধারণা আরেকটা রোমাঞ্চকর জটিল রহস্যের সন্ধান মিলতে যাচ্ছে। যত্ন করে রেখে দেব। রংকি যোগাযোগ করবেই। ওর কাছে আমাদের ফোন নম্বর আছে। প্রতিবাদ করার জন্যে মুসা মুখ খুলতে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি বলল, তাছাড়া ওয়েইট্রেসের কাছে বাক্সটা ফেলে যায়নি রিংকি, তাই না? আমাদের কাছে রেখে গেছে। আমাদের বিশ্বাস করেছে?