ঠিক আছে, খাইয়ে যদি খুশি হন, অবশেষে বলল কিশোর। আমাদের আপত্তি নেই। থ্যাংক ইউ।
চলো তাহলে, হাঁটতে শুরু করল হ্যারিস। তাকে অনুসরণ করল তিন গোয়েন্দা, যার যার সাইকেল ঠেলে নিয়ে চলেছে।
কিশোরের কাছাকাছি রইল রবিন। ফিসফিস করে বলল, কি কি দেখে এসেছে।
নীরবে মাথা নোয়াল শু কিশোর।
রেস্টুরেন্টের বাইরে সাইকেল স্ট্যাণ্ডে তুলে রাখল ওরা।
ছেলেদেরকে নিয়ে কোণের একটা বড় টেবিলে এসে বসল হ্যারিস।
ওয়েইটার এসে জাপানী ভাষায় কিছু জিজ্ঞেস করল, হ্যারিসও একই ভাষায় জবাব দিল।
বাহ গহনার দোকানের মালিক দেখছি আবার ভাষাবিদও মনে মনে বলল মুসা। তা অর্ডার কি দিল? সাপ-ব্যাঙ না হলেই বঁচি এখন।
জাপানে ছিলাম কয়েক বছর,ছেলেদেরকে জানাল হ্যারিস। মুক্তোর ব্যবসা করতাম। সেখানেই ভাষাটা শিখেছি।
শুরুতেই চা নিয়ে এল ওয়েইটার। সবার কাপে কাপে ঢেলে দিল হ্যারিস। আবার চেয়ারে বসে বলল, জানালাম, তোমরা গোয়েন্দা।
এইবার হাসিটা দেখতে পেল রবিন। কিছু বলল না। অন্য দুজনও চুপ।
মিস কোরিন কারমাইকেল তোমাদের মক্কেণ, আবার বলল হ্যারিস। পাখি খুনের তদন্ত করছ।
মাথা নোয়াল কিশোর।
হ্যারিকিরি বলল একটা মরা কবুতরের পায়ে বাধা, একটা মেসেজ পেয়েছ তোমরা।
আবার মাথা নোয়াল কিশোর, মুখে কিছু বলল না।
বাজারে যে তরকারী সাপ্লাই দেয়, সে ব্যাপারে নাকি কিছু লেখা ছিল।
হ্যাঁ, মুক্তো-পেঁয়াজ, বলল কিশোর।
ওয়েইটার ফিরে আসায় আলোচনায় বাধা পড়ল। ছোট ছোট ডজনখানেক ডিশ টেবিলে নামিয়ে রেখে চলে গেল।
নীরবে খাওয়া চলল কিছুক্ষণ।
কবুতরটা কি মিস কারমাইকেলের বাগানে পেয়েছ? মুখ তুলল হ্যারিস।
না, কিশোরের মুখভর্তি সরু চালের ভাত, স্যামন মাছ, বাঁশের কোড় আর নোনা সালাদ, চমৎকার খাবার। গিলে নিয়ে বলল, রাস্তায় পেয়েছি। হ্যারিকিকে যা যা বলেছে, হ্যারিসকেও ঠিক তাই বলবে।
আবার নীরবে খেয়ে চলল হ্যারিস। শেষ করে ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছল। তারপর হাত ঢোকাল পকেটে।
স্থির হয়ে গেছে মুসা, মুখের সামনে থেমে গেল কাঁটাচামচে গাথা মাছের টুকরো। পিস্তল বের করবে না তো লোকটা? এই প্রকাশ্য জায়গায় সাহস পাবে?
মানিব্যাগ বের করল হ্যারি।
ব্যাপার হলো কি জানো মিস কারমাইকেল আমার খুব ভাল বন্ধু, খুব দামী কাসটোমার, ক্ষণিকের জন্যে উজ্জ্বল হলো তার চোখ। পাখি কিরকম ভালবাসে জানি, ওগুলো মারা পড়লে কতখানি দুঃখ পায় তা-ও জানি। ওকে সাহায্য করতে চাই আমি, যতটা পারি, মানিব্যাগ থেকে পঞ্চাশ উলারের একটা নোট বের করে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরল। নাও, এটা রাখো। তোমাদের ফিরে কিছুটা, আগাম। তদন্ত চালিয়ে যাও। দরকার হলে আরও দেব। কে পাখিগুলোকে খুন করেছে, ব্যাগটা আবার পকেটে রাখতে রাখতে বলল, জানার চেষ্টা করো।
থ্যাংক ইউ, নোটটা নিয়ে পকেটে ঢোকাল কিশোর। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব।
হ্যাঁ, সাধ্যমতই করব, বাইরে বেরিয়ে সাইকেলের তালা খুলতে খুলতে আরেকবার বল কিশোর, চোখ হ্যারিসের দিকে চলে যাচ্ছে গহনার দোকানের মালিক।
নিশ্চয় কর, বলল মুসা, পঞ্চাশ ডলার… থেমে গেল কিশোরের দিকে তাকিয়ে।
চিন্তামগ্ন গোয়েন্দাপ্রধান, তার কথা শুনছে বলে মনে হলো না।
ওর দোকানে টমকে নিয়ে গেলাম, বিড় বিড় করল কিশোর। পায়রাটা তার প্রয়োজন হলে সে বল? হ্যাঁ, চিনেছি। জানি, কার। রেখে যাও, মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসব। মাথা নাড়ল সে, যেন কিছু একটা ব্যাপার বিশ্বাস হচ্ছে না। তা না করে কাল : জীবনে দেখিনি। পায়রাটাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম, তা-ও কিছু বলল না। তারপর, পিস্তল দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল। থামল এক সেকেণ্ড, নিচের ঠেiটে চিমটি কাটতে কাটতে আবার মাথা নাড়ল। মিস কারমাইকেলের বাগানে রাতের অন্ধকারে লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। সবশেষে, আজ ডেকে এনে লাঞ্চ খাওয়াল…ভ্রুকুটি করল। হ্যাঁ, লাঞ্চ খাওয়াল। টাকাও দিল। পাখির খুনীকে ধরে দিতে পারলে আরও টাকা দেবে বলল। অবাকই লাগছে, এতগুলো পরস্পর বিরোধী কাণ্ড। কিন্তু সব চেয়ে অবাক করেছে রিচর্ড হ্যারিস, হঠাৎ যেন বাস্তবে ফিরে এল সে।
কি? খেই ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল রবিন। বলো না, কি? কেন অবাক করল রিচার্ড হ্যারিস?
শুধু রাতের বেলা কালো কাচের চশমা পরে।
৯
কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল মুসা, মাথা নেড়ে বারণ করছে কিশোর। কথা বলা বৃথা এখন। চেঁচামেচির জন্যে বোঝা যাবে না ঠিকমত, অযথা চেঁচিয়ে গলা ফাটানোই সার হবে।
হ্যারিস যেদিন লাঞ্চ খাইয়েছে তার পরদিন শেষ বিকেলের ঘটনা। সাইকেল নিয়ে মিস কারমাইকেলে বাড়ি এসেছে তিন গোয়েন্দা।
লিটল টোকিও থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েই মহিলাকে ফোন করেছিল কিশোর, পরদিন সকালে তার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিল। পেয়েছিল অনুমতি, কিন্তু সকালে বেরোতে পারল না। কোথা থেকে জানি বিশাল এক পুরানো রেফ্রিজারেটর আর কতগুলো বাতিল পুরানো আমলের লোহার চুলা নিয়ে এসেছেন রাশেদ পাশা। বরাবরের মতই চাচী গেছেন রেগে। তাদের ঝগড়া থামাতে হয়েছে কিশোরকেই, এরপর কাজে লাগতে হয়েছে। তার ওপর আগের রাতে হয়েছে বৃষ্টি। বাইরে চত্বরে ফেলে রাখা কিছু জিনিস মুছে গোছগাছ করতে করতে দুপুর। খেয়ে ইয়াভের আরও কিছু জরুরী কাজ সেরে বেরোতে বেরোতে একেবারে বিকেল।