ওদিকে না, বাধা দিল কিশোর। স্কাইলাইট দিয়ে বেরিয়ে ওয়ার্কশপের পেছনে গিয়ে নামব, মিটিমিটি হাসছে সে।
জঞ্জালের ওপর দিয়ে নেমে এল ওরা। মেরিচাচী ওদের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে আছেন ওয়ার্কশপে।
আস্তে গিয়ে চাচীর কাঁধে হাত রাখল কিশোর।
চমকে উঠলেন চাচী। ফিরে তাকালেন। এই দেখে শয়তান ছেলের কাণ্ড। এই বেরোলি কোখকেতোরা? ওদিকে তো সব জায়গা খুঁজে এলাম…।
জঞ্জালেতে বাসা আমার, আকাশ দিয়ে পথ,হেঁড়ে গলায় গান ধরল কিশোর, বলো শুনি,লক্ষ্মী চাম, তোমার কি বিপদ।
অবাক হয়ে কিশোরের দিকে চেয়ে রইলেন চাচী। চোখে শঙ্কা, ছেলেটার মাথা-টাতা খারাপ হয়ে যায়নি তো!
ভয় নেই, চাল, হেসে আশ্বস্ত করল রবিন। ওটা দা হাইমন অভ দ্য ব্যাটলের সুর। মিস কারমাইকেলের কাছ থেকে শিখে এসেছে।
কিন্তু শঙ্কা গেল না মেরিচাচীর। তাঁর মনে হতে লাগল, কোথাও কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। সকালে বেশি খেয়ে ফেলায় কিশোরের পেটে পাঁচক রসের ক্ষণে বিঘ্ন ঘটেছে হয়তো, সেটা প্রতিক্রিয়া করেছে মাথায়। বললেন, কিসের সুর বললি?
ব্যাটল অভ দা হাইমস, আবার কাল রবিন।
এই কিশোর, খবরদার, আর কক্ষনো গাইবি না। যার গলায় যেটা মানায় না…।
বেশ গাইব না,শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। তবে কথা দিতে হবে, আর কক্ষনো তুমিও খাওয়ার জন্যে চাপাচাপি করবে না।
ওহহো, ভুলেই গিয়েছি, এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে তাড়াতাড়ি বললেন মেরিচাচী, দুজন লোক দেখা করতে এসেছে তোর সঙ্গে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, বলেই আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন না। থাকলেই আবার কোন ফাঁদে ফেলে দেয় কিশোর। দ্রুত আগলেন।
সেদিকে চেয়ে মুচকি হাসল কিশোর। চলো, হাত নাড়ল দুই সহকারীর দিকে চেয়ে।
গেটের বাইরে রাস্তায় পার্ক করা একটা ভ্যানের কাছে দাঁড়িয়ে আছে লোকগুলো। দুজনেরই বয়েস তিরিশের কাছাকাছি, গায়ে চী-শার্ট, পরনে নী জিনসের প্যান্ট। দুজনেই জাপানী।
তোমরা তিন গোয়েন্দা? এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল একজন। কিশোর, মুসা আর রবিন?
হ্যাঁ, মাথা আঁকাল কিশোর।
মিস্টার মিটসুশিতাকে চেনো?
চিনি, জবাব দিল রবিন। ওই ভদ্রলোকের কাছেই মেসেজ অনুবাদ করাতে নিয়ে গিয়েছিল।
ফিরে সঙ্গীকে কি বলল লোকটা। জাপানী ভাষা, অনুমান করুল কিশোর। একই ভাষায় জবাব দিল সঙ্গী।
ও আমার বন্ধু, দ্বিতীয় লোকটাকে দেখিয়ে বলল প্রথমজন, নাম হ্যারিকিরি। ওর কয়েকটা প্রশ্ন আছে, জবাব দিলে খুব খুশি হবে। ইংরেজী জানে না। ওর হয়ে আমিই প্রশ্ন করছি, কেমন?
সম্মতি জানাল কিশোর।
শুড, বলে লোকটা। জাপানীতে লেখা একটা মেসেজ নিয়ে গিয়েছিলে মিস্টার মিটসশিয়ার কাছে। উনি হ্যারিকিরিকে বলেছেন সেকথা। তার হাতের লেখা চিনতে পেরেছেন।
প্রশ্ন নয়, কাজেই চুপ করে রইল কিশোর।
মেসেজটা কোথায় পেয়েছ? এবার প্রশ্ন।
ভাবছে কিশোর, জবাব না দিলেও পারে সে, তবে দিলে হয়তো তার কয়েকটা প্রশ্নের জবাবও মিলতে পারে। বলল, একটা মরা কবুতরের পায়ে আটকানো ছিল।
হাসল লোকটা। হ্যারিকিরির কাছে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ভ্যান থেকে খানিক দূরে।
চেয়ে আছে রবিন, জাপানী ভাষায় কথা বলছে লোকগুলো। তার মনে হলো, দুজনেরই এক চেহারা, একই রকম কালো চুল, ঠেলে বেরোনো চোয়াল, হালকা বাদামী চামড়া। রাস্তায় হঠাৎ আরেকদিন দেখলে বলতে পারবে না, কে হ্যারিকিরি আর কে অন্য লোকটা!
হয় এ-রকম। এক দেশের লোক অন্য দেশের লোকের চেহারায় বিশেষ তফাৎ দেখতে পায় না—সব ক্ষেত্রে হয় না এটা। তবে সব চেয়ে বেশি হয় আফ্রিকান ও ককেশিয়ানদের, রবিনের তাই ধারণা।
কিশোরও স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে জনের দিকে। ফিসফিস করে বলল, সেই সবুজ ভ্যানটা, স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টে যেটা দেখেছিলাম। এটাকে অনুসরণ করতে পারলে… জাপানী দুজন এখনও আলাপরত, সেদিকে চেয়ে থেকেই বলল সে, রবিন বীপারটা আনতে পারবে? ওরা যাতে সন্দেহ করতে না পারে।
দেখি চেষ্টা করে, ফিসফিসিয়ে জবাব দিল রবিন। কিশোরের কাছ থেকে সরে দাঁড়াল। পেছনে চেয়ে কান পেতে কি যেন শোনার ভঙ্গি করল, তারপর নোক দুজনকে শুনিয়ে জোরে জোরে বলল, কিশোর, মনে হচ্ছে ডাকছেন। যাই, শুনে আসি।
অপেক্ষা করল না রবিন, ঘুরে রওনা হয়ে গেল।
আবার ফিরে এল দুই জাপানী। হ্যারিকিরির সঙ্গী কিশোরকে বলল, আরেকটা প্রশ্ন, কোথায় পেয়েছ কবুতরটা?
এটাও ভেবে দেখল কিশোর। মিথ্যা বলতে বাধে তার, কিন্তু গোয়েন্দাগিরি এমনই একটা কাজ, সময়ে না বলেও পারা যায় না। এক্ষেত্রে মিছে কথা বলার দরকার আছে কিনা, ভাবল। সেটা কি অন্যায় হবে? বোধহয় না। কারণ, তার মক্কেলের সপক্ষে বলতেই হবে তাকে, আর মিস কারমাইকেল তার মক্কেল।
পথের ওপর পেয়েছি, মিছে বলল না কিশোর, কিন্তু খোলাসাও করল না।
কোন পথে?
শহরের পুব ধারের একটা পথ।
আবার হাসল লোকটা। তৃতীয় প্রশ্ন, কি করে মারা গেছে কবুতরটা, জানো?
না, সত্যই জানে না কিশোর। তবে জানতে পারলে ভাল হত।
দেখে কি মনে হয়েছে? গুলি-টুলি করে মেরেছে?
না, মাথা নাড়ল কিশোর। পেছনে পায়ের আওয়াজ শুনে বুঝল, রবিন আসছে। আর যেভাবেই মারা হোক, গুলি নয়, এটা ঠিক।
গুড। থ্যাংক ইউ, বলে হ্যারিকিরিকে নিয়ে গাড়ির দিকে রওনা হলো লোকটা।
পৌঁছে গেল রবিন।