হাসি ছড়িয়ে পড়েছে মেরিচাচীর সারা মুখে। কিশোর, আজ তোদের আমি ফুট কেক খাওয়াব।
কেক না চাচী, আইসক্রীম…
দুটোই বানাতে যাচ্ছি, হেলেদুলে আনন্দে প্রায় নাচতে নাচতে বাড়ির দিকে রওনা হলেন মেরিচাচী।
পুরো দুই ঘণ্টা লাগল পাইপগুলো গোছগাছ করতে। কাজ শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে, খৈয়ের, ওয়ার্কশপে চলে এল তিন গোয়েন্দা।
দুই সুড়ঙ্গের মুখের ধাতব পাত সরিয়ে প্রথমে ঢুকল কিশোর, তার পেছনে রবিন, সব শেষে মুসা।
পাইপের অন্য মুখের ঢাকনা সরিয়ে ট্রেলারের ভেতরে উঁকি দিল কিশোর। প্রথমেই তাকাল জবাব-দেওয়া মেশিনটার দিকে। আলো জ্বলছে না, তানে কোন ফোন আসেনি। হতাশ হলো। উঠে এসে বসল নিজের চেয়ারে।
পুরানো একটা রকিং চেয়ারে বসে ফাইলিং কেবিনেটের ড্রয়ারে পা তুলে দিল মুসা। রবিন কাল একটা টুলে, দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে।
চিরাচরিত নিয়মে আলোচনার সূত্রপাত করল কিশোর। মুক্তা। এই কেসের প্রধান রহস্য।
কবুতরও, খাঁচার ভেতরে বসা পায়রাটাকে দেখিয়ে বলল মুসা। দু-আঙুলে কবুতর, তিন আঙুলে কবুতর, জ্যান্ত কবুতর, মরা কবুতর।
মুক্তো, আবার বলল কিশোর। মেসেজ লেখা : আজ মুক্তো নেই। মিসকোরিন কারমাইকেলের মুক্তোপ্রীতি। তার একটা দোয়েল ছিল, যেটা মুক্তো এনে দিত।
হীরা, মাথা ঝোঁকাল রবিন, নোট বই বের করছে পকেট থেকে। ঠোঁটে করে মুক্তো নিয়ে এল। মিস কারমাইকেল বললেন? এই নিয়ে তিনটে হলো।
তারপর কেউ খুন করল হীরাকে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে চলল কিশোর। হতে পারে রিচার্ড হ্যারিস। তার গহনার দোকান আছে, মুক্তো বিক্রি করে। এই রহস্যের প্রধান বিষয়ব যদি মুক্তো হয় মাঝে মাঝে দুর্বোধ করে কথা বলা তার স্বভাব, আসলে মনে মনে না ভেবে জোরে জোরে ভাবে সে তখন, তাই এমন মনে হয় কথাগুলো, মুক্তোই যদি আসল কথা হয়, তাহলে এর মাঝে কবুতর আসছে কি, করে? কবুতর ডিম পাড়ে, মতো পাড়ে না। যোগাযোগটা কোথায়?
হয়তো পাড়ে। সোনার ডিম-পাড়া রাজহাঁসের কিচ্ছা পড়নি… বাধা পেয়ে থেমে গেল মুসা।
ফোন বেজে উঠেছে।
লাইনের সঙ্গে যুক্ত স্পীকারের সুইচ অন করে দিয়ে রিসিভার তুলে নিল কিশোর। হ্যালো তিন গোৱেন্দা।
হ্যালো, কিশোর পাশা? পরিচিত কণ্ঠ, উদ্বিগ্ন। কিশোরকে চাই।
বলছি।
কিশোর, এক মুহূর্ত নীরবতা, থমকে গেছে বোধহয় লোকটা, কিংবা দ্বিধা করছে, আমাকে চিনতে পারছ? আমি, আমি, ওই যে দুই দিন আগে রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছিল। ভূলে বাক্সটা ফেলে গেছিলাম। পরে ফিরে গিয়ে ওয়েইট্রেসকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, তোমরা নিয়ে গেছ। নানা ঝামেলায় আর খোঁজ নিতে পারিনি।
মাউথ পীসে হাত চাপা দিল কিশোর, ফিসফিস করে উত্তেজিত গলায় বলল, ক্লিকি।
হ্যালো? নার্ভাস মনে হচ্ছে ওপাশের লোকটাকে। হ্যালো। শুনছ?
শুনছি, বলুন, জবাব দিল কিশোর। বাক্সটা নিয়ে এসেছি আমরা, ঠিকই বলেছে ওয়েইট্রেস।
দীর্ঘ আরেক মুহূর্ত নীরবতা। হ্যালো, আছে তো এখন তোমাদের কাছে? আমার বাক্সটা?
আছে। চারকোণা বাক্স, চীজথে মোড়া, সেভাবেই আছে। আপনি ফেলে গেছেন দেখে নিয়ে এসেছিলাম, জানি ফোন করবেনই।
খুব ভাল করেছ, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল স্লেটার। তোমাদের একটা পুরস্কার পাওনা হয়েছে। বাক্সটা যদি নিয়ে আসো, পঞ্চাশ ডলার পাবে।
থ্যাংক ইউ। কোথায় আনব?
আমি জানি তুমি কোথায় থাকো.মানে অনুমান করেছি আরকি। রকি বীচ, না? তাহলে ট্রাসটি ব্যাঙ্কের পারকিং লটে সুবিধে বেশি।
ঠিক আছে। কখন আসব?
আজ রাত নটার দিকে? ঠিক আছে।
তাহলে রাত নটায় দেখা হচ্ছে, আবার নার্ভাস হয়ে পড়েছে লোকটা, কণ্ঠস্বরে সেটা স্পষ্ট।
লাইন কেটে গেল।
রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর।
খাইছে বলে উঠল মুসা, একটা কবুতরের জন্যে পঞ্চাশ ডলার!
জবাব দিল না কিশোর। জোরে জোরে চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে, গভীর ভাবনায় মগ্ন।
চীজক্লথটা রেখে দিয়েছি, বলতে বলতে ফাইলিং কেবিনেট খুলল রবিন। টমকে ছোট খাঁচায় ভরে আবার মোড়াবে?
পুরো এক মিনিট কোন কথা বলল না কিশোর, তারপর মাথা নাড়ল।
ব্লিংকির করাগুলো পর্যালোচনা করে দেখি আগে, জোরে জোরে ভাবতে শুরু করল সে, বলল, আমি জানি তুমি কোথায় থাকো…তারপর শুধরে নিয়ে বলল, মানে অনুমান করেছি আরকি। রকি বীচ, না? এটা জানা আর অনুমানের মধ্যে তফাতটা কোথায়? আমাদের কার্ডে তো রয়েছে কোন নম্বর, ঠিকানা জেনে নেয়াটা কোন ব্যাপারই না। দ্বিধা করেছে, তারমানে মিথ্যে কথা বলেছে, খুব ভালমতই জান, আমরা কোথায় থাকি, অনুমান-টমান কিছু না!
তাহলে সেই কবুতর বদল করেছে, বলল রবিন।
তাই তো মনে হয়। আমি মিছে কথা বলেছি, জানে সে। কিন্তু চেপে গেছে। আবার চীজথে মুড়ে যদি খাঁচাটা নিয়ে যাই, হাতে নিয়ে বলবে, থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ…
এবং পঞ্চাশ ডলার দেবে মনে করিয়ে দিল মুসা।
এবং ভাব দেখাবে, খাঁচার ভেতরে আগের কবুতরটাই আছে, সেভাবেই নিয়ে চলে যাবে। তারপর আর কোন দিন তার দেখা পাব না আমরা। এই কেসের মহামূল্যবান একটি মাত্র সূত্রও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
কি করতে বলে তাহলে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
চূড়ান্ত কিছু একটা করতে হবে। না মুড়েই খাঁচা নিয়ে তার সামনে হাজির হব, তাকে আমাদের কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য করব। তোমার কি মনে হয় মুসা?
মাথা চুলকাল সহকারী-গোয়েন্দা। ঠিক আছে, যা ভাল বোঝে। পঞ্চাশ ডলার, হারাতে রাজি নই আমি। মেলা টাকা। তবে একটা কথা ঠিকই বলেই, এই রহস্যের সমাধান করতে চাইলে রিংকির মুখ খুলতে হবে আমাদের।