- বইয়ের নামঃ মুক্তোশিকারী
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
মুক্তোশিকারী
১
কোথাও ঢুকে একটা হ্যামবারগার খেয়ে নিলে কেমন হয়? প্রস্তাব দিল মুসা আমান।
গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছে। ওদের প্রিয় সৈকতে সাঁতার কাটতে গিয়েছিল তিন গোয়েন্দা-কিশোর পাশা, মুসা আমান আর রবিন মিলফোর্ড। প্রায় সারাটা দিনই কাটিয়েছে সৈকতে। সাগর পাড়ের রাস্তা ধরে সাইকেলে করে রকি বীচে বাড়ি ফিরছে এখন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলবর্তী ছোট্ট একটা শহর রকি বীচ, সান্তা মনিকা থেকে কয়েক মাইল দূরে।
গোয়েন্দা সহকারীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল রবিন, সাইকেলের গতি বাড়িয়ে পাশাপাশি হলো মুসার।
যে কোন ব্যাপারে ঠাণ্ডা মাথায় ভালমত খতিয়ে দেখা স্বভাব প্রধান গোয়েন্দা কিশোর পাশার। সাইকেল চালিয়ে গরম হয়ে উঠেছে শরীর, সারা দিন সাঁতার কেটে ক্লান্ত। ভেবে দেখল, মুসার কথাটা মন্দ না। তারও খিদে পেয়েছে। সামনেই পথের পাশের পাহাড় চূড়ায় পুরানো স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টটায় থেমে কিছু খেয়ে নিলে ভালই হয়, পেটও ঠাণ্ডা হবে, বিশ্রামও হবে।
কিন্তু হ্যাঁ বলল না কিশোর, আরও খতিয়ে ডাবল। এখন বাজে বিকেল তিনটে, নাস্তা করেছে সেই সকাল ছটায়। কিছু মুখে না দিয়ে বাড়ি ফিরলে–মেরিচাচী যদি শোনেন-এত বেলা পর্যন্ত কিছু খায়নি ওরা, বকা যে কি পরিমাণ দেবেনো, খেয়ে নেয়াই ভাল।
ঠিক আছে, চেঁচিয়ে সামনের দুই সঙ্গীকে বলল কিশোর সামনে থাম। ওশনসাইড রেস্তোরায় খাব।
এ-সময়ে ভিড় থাকে না, এক-দেড় ঘণ্টা আগেই দুপুরের খাওয়া খেয়ে চলে গেছে লোকে। রেস্তোরা প্রায় খালি। রাস্তার দিকে একটা জানালার পাশে বসল তিন গোয়েন্দা। পা লম্বা করে দিয়ে চেয়ারেই আধশোয়া হয়ে পড়ল মুসা। মেনু দেখায় মন দিল রবিন।
ঘরে যে কজন খদের আছে তাদেরকে দেখছে কিশোর। লোকের চেহারা দেখে তাদের স্বভাব অনুমান করা তার হবি। তাছাড়া সব জিনিসই খুব খুঁটিয়ে দেখে সে, কোথাও এতটুকু ফাক রাখতে চায় না।
একটা লোক বিশেষভাবে কিশোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। হালকা-পাতলা, ওদেশের মানুষের তুলনায় বেটেই বলা চলে, পাঁচ ফুট পাঁচের বেশি না। গাঢ় বাদামী সুট পরনে, সাদা শাট-গলার কাছে দুটো বোতাম খোলা, চোখা কালো জুতো, অবিশ্বাস্য রকমের বড় পায়ের পাতা। বুক পকেটে ভঁজ করে রাখা একটা মুক্তোশিকার কাগজ, তার কয়েকটা শব্দ বেরিয়ে আছে, পড়া যায়, তা থেকেই বুঝল কিশোর, লোকটার ঘোড়দৌড়ের নেশা আছে, জুয়াড়ী।
কাউন্টারের সামনে এক কাপ কফি নিয়ে টুলে বসেছে লোকটা, খালি নড়ছে, উসখুস করছে, খানিক পর পরই মাথা বাড়য়ে জানালা দিয়ে উঁকি মারছে রাস্তার দিকে। বেশ বড়সড় টুলে বসেছে, পাশে রেখেছে- চার কোণা একটা বাক্স, একটু পর পরই ছুঁয়ে দেখছে বাক্সটা জায়গামত আছে কিনা। যেন কেউ নিয়ে যাবে ওটা। একটা জালি কাপড় দিয়ে মোড়া বাক্স, কাপড়ের জোড়াগুলো নিপুণভাবে টেপ দিয়ে আটকানো।
আরেকবার জানালার বাইরে লোকটা উঁকি দিতেই কিশোরও মাথা খানিকটা সরিয়ে চট করে দেখে নিল রাস্তায় কি দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে চোখের কোণ দিয়ে লোকটার ওপরও নজর রেখেছে।
কই, তেমন কিছু তো না। প্রায় নিঃশব্দে চলে গেল কয়েকটা লিমোসিন। ওগুলোকে গুরুত্ব দিল না লোকটা। তারপর শোনা গেল মোটরের জোরাল গো গো, আরেকটা গাড়ি আসছে। টুল থেকে লাফিয়ে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইল নোকটা, সতর্ক দৃষ্টি, কারও আসার অপেক্ষা করছে বুঝি। একটা ক্যাম্পার গাড়ি দেখা গেল। আবার এসে টুলে বসে পড়ল সে।
ভারি কোন গাড়ি-ভ্যান বা ট্রাক জাতীয় কিছুর অপেক্ষায় রয়েছে লোকটা-ডাকল কিশোর।
হ্যামবারগার নিয়ে এল ওয়েইটেল। নিজের প্লেট টেনে নিল কিশোর। বন রুটির ওপরের অংশ ছিড়ে আলাদা করে রেখে মাংসসহ বাকিটুকু তুলে নিয়ে কামড় বসাল।
অবাক কাণ্ড! চোখ টিপল লোকটা।হেসে তার জবাব দিল কিশোর।
ব্যাপারটাকে আমন্ত্রণ ধরে নিল লোকটা। চারকোণা বাক্সটা হাত নিয়ে এগিয়ে এল তিন গোয়েন্দার দিকে।
সাঁতার কাটতে গিয়েছিলে? সাধারণ একটা প্রশ্ন, লোকটার বলার পরনে বিশেষ অর্থবহ হয়ে উঠল। চোখও টিপল সেই সঙ্গে।
হ্যাঁ, হ্যামবারগারে মুখ বোঝাই মুসার, হাসতে পারছে না ঠিকমত। উইলস বীচে।
উইলস বীচ? মুসার কথার প্রতিধ্বনি করল যেন লোকটা। এজন্যেই এত খিদে পেয়েছে। চোখ টিপল।
এমনি একটা কথার কথা বলল লোকটা, তাতে হাসির কিছু নেই, কিন্তু হেসে ফেলল তিন গোয়েন্দা। কথার সঙ্গে চোখ টেপাটা বেশ মজার মনে হয়েছে ওদের কাছে।
লোকটাও হাসল।
বসি তোমাদের কাছে? চোখ টিপল লোকটা।
জানালার কাছে রে সরিয়ে নিল কিশোর, তার পাশের খালি চেয়ারে বসল লোকটা। বাক্সটা নামিয়ে রাখল মেঝেতে।
আমার নাম মেটার, অসকার স্লেটার, বলতে বলতেই ডান চোখ টিপল বেশ জোর দিয়ে।
নিজেদের নাম বলল তিন গোয়েন্দা।
পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, স্বাভাবিক কথা, কিন্তু লোকটার চোখ টেপ অস্বাভাবিক করে তুলল কথাটা ভারি এঞ্জিনের শব্দ শোনা যেতেই লাফিয়ে উঠে জানালা দিয়ে উঁকি দিল একটা তেলের ট্রাক চলে গেল। আবার বসে পড়ল সে।