দূর, কী বোকার মত কথা বলছ? হুশিয়ার করতে যাবে কেন এভাবে চিঠি লিখে?
মুসা, প্রণালীটা দেখে আসি। আমার সন্দেহ হচ্ছে। তুমি থাকো এখানে, আসছি এখনি।
কিন্তু একা একা বসে থাকার ইচ্ছে নেই মুসার, রবিনের পেছনে চলল। বলতে বলতে গেল, অযথাই সন্দেহ করছে রবিন, অহেতুক সময় নষ্ট করছে। কিন্তু কিশোরের কাছে শিক্ষা পেয়েছে রবিন, সন্দেহ হলেই সেটা যাচাই করে দেখে সন্দেহমুক্ত হয়ে নেবে।
প্রণালীর মুখে মোটরবোটটা দেখতে পেল ওরা। ওরা ছাড়াও অন্য কেউ উঠেছে দ্বীপে, বুঝতে অসুবিধে হলো না। মুসার দিকে তাকাল রবিন, ফিসফিস করে বলল, দেখলে তো! জিনা আমাদেরকে হুশিয়ারই করেছে! আমার মনে হয় ওই লোকটা, যে দ্বীপ কিনছে, বাক্সটা চেয়ে নিয়ে গেছে জিনার বাবার কাছ থেকে নিশ্চয় ব্যাটা গিয়ে ঢুকেছে। ডানজনে, জিনা আর কিশোরকে আটকেছে। আমরা গেলে আমাদেরকেও আটকাবে। তারপর সোনা নিয়ে সরে পড়বে। আমাদের সবাইকে মেরে রেখে গেলেও অবাক হব না। …তো, এখন কী করা?
পনেরো
হঠাৎ সচল হয়ে উঠল মুসা, রবিনের হাত ধরে তাকে টেনে আনল, এত প্রকাশ্য জায়গায় থাকা ঠিক না এখন। শত্রুরা দেখে ফেলতে পারে। প্রায় ছুটে চলে এল পাথরের ছোট ঘরটায়, যেটায় ঠাই নিয়েছে ওরা। এক কোণে বসে হাপাতে লাগল।
যে-ই এসেছে, ফিসফিস করল রবিন, জোরে বলতে ভয় পাচ্ছে, কিশোর আর জিনাকে আটকে ফেলেছে! কী করব ঠিক বুঝতে পারছি না! এখন ডানজনে যাওয়া উচিত না, বুঝতে পারছি, কিন্তু ওদেরকে উদ্ধারের কী উপায়? ..আরে, আরে, রাফিয়ান কোথায়!
ওরা যখন উত্তেজিত হয়ে ছোটাছুটি করছিল, তখনই এক সময় ফিরে গেছে রাফিয়ান, খেয়াল করেনি দুজনে। জিনাকে অন্ধকারে শত্রুর হাতে ফেলে এসেছে, রাফিয়ান এখানে স্বস্তি পায় কী করে? তাই ফিরে গেছে। কুকুরটা চলে যাওয়াতে অস্বস্তি আরও বাড়ল রবিন আর মুসার।
কী করবে বুঝতে পারছে না দুজনে, ভাবছে। রবিন বলল, নৌকা নিয়ে চলে যেতে পারি আমরা, সাহায্য নিয়ে আসতে পারি।
আমিও ভেবেছি কথাটা, বিষণ্ণ কণ্ঠ গোয়েন্দা-সহকারীর, কিন্তু যাই কী করে? যা পথ, নৌকা বেয়ে নিয়ে যাওয়া আমার কম্ম নয়। পাথরে খোঁচা লাগিয়ে মরব।
মানুষের কণ্ঠস্বরে চমকে উঠল দুজনেই। ভাবেইনি, রাফিয়ান চলে গেছে; শত্রুরা দেখবে তার কলারে চিঠিটা নেই, তবুও আসছে না কেন ছেলে দুটো, দেখতে আসবেই। তা-ই এসেছে।
গলা শুনেই রবিনের হাত ধরে এক টানে তুলে টেনে নিয়ে দৌড় দিল মুসা। চত্বরে বেরিয়ে থমকে গেল ক্ষণিকের জন্যে, কোথায় যাবে? পরক্ষণেই দৌড় দিল কুয়ার দিকে। লুকানোর ওটাই একমাত্র জায়গা।
কুয়ার পাড়ে এসে রবিনকে ঠেলে দিল মুসা। জলদি করো, মই বেয়ে নেমে যাও! কুইক!
দ্বিধা করছে রবিন, আবার তাড়া দিল তাকে মুসা।
লোকগুলোর হাতে পড়লেও বাঁচবে কিনা জানা নেই, কুয়ায় নামলে। আশা অন্তত আছে। আর দেরি করল না রবিন, মই বেয়ে নেমে গেল। তার পিছনেই নামল মুসা।
তুমি পাথরটায় বসো, মুসা বলল। তোমার ভার সইতে পারবে, কিন্তু আমাকেসহ পারবে না। আমি মই ধরেই ঝুলে থাকছি।
ওপরে দুজন মানুষের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। রবিন আর মুসার নাম ধরে ডাকাডাকি করছে, কুয়ার একেবারে কাছেই।
মুসা, রবিন, ডাকল একটা ভারি কণ্ঠ, কোথায় তোমরা? তোমাদের বন্ধুরা ডাকছে। দারুণ খবর আছে। মুসাআআ! রবিইইন!
বাহ্, কী মধুর ডাক! চাপা গলায় বলল মুসা। তা, বাবা, তোমরা। এসেছ কেন? জিনা কিংবা কিশোরই তো আসতে পারত
চুপ! শুনতে পাবে! সাবধান করল রবিন।
আরও কয়েকবার ডাকল লোক দুটো, রেগে যাচ্ছে, ওদের কণ্ঠস্বরেই বোঝা যায়। গেল কোথায়! …নৌকাটাও তো রয়েছে আগের জায়গায়ই। কোথাও লুকিয়ে পড়েছে! …কিন্তু সারা দিন তো ওদের জন্যে বসে থাকা। যায় না।
চলো, কিছু খাবার আর পানি দিয়ে আসি ছেলেমেয়ে দুটোকে, বলল অন্য লোকটা। পাথরের ঘরটায় অনেক আছে, বোধহয় ছেলেরাই নিয়ে এসেছে। অর্ধেক দিয়ে আসব, অর্ধেক থাকবে। যে দুটো লুকিয়েছে, ওদের জন্যে। কি বলো?
যদি পালায়?
নৌকাটা নিয়ে যাব, পালাতে পারবে না।
তা হলে ঠিক আছে। চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি পারি। এসে বারগুলো নিয়ে যাওয়া দরকার। কখন আবার কী বিপত্তি ঘটে যায়, কে জানে!
ওটা কী? .কোনটা? ও, ওটা…কুয়া। ধড়াস করে এক লাফ মারল। রবিনের হৃৎপিণ্ড, কিন্তু পরের কথাটায়ই আবার স্বস্তি ফিরল। কেন, ওই কুয়ায় লুকিয়ে আছে ভেবেছ নাকি? অসম্ভব! যা গম্ভীর হয় এসব কুয়া:..চলো, চলো, যাই।
চলে গেল লোক দুটো। আরও খানিকক্ষণ ওদের কথাবার্তা শোনা গেল দূর থেকে, বোধহয় খাবার নিচ্ছে, কিশোর আর জিনাকে দিয়ে। আসার জন্যে। তারপর একেবারে নীরব হয়ে গেল।
এরপরও অনেকক্ষণ বেরোনোর সাহস পেল না দুই গোয়েন্দা। মই ধরে ঝুলে থাকতে থাকতে হাত ব্যথা হয়ে গেল মুসার, শেষে আর না পেরে বলল, এবার বোধহয় গেছে! চলো, উঠি। আমি আর ধরে থাকতে পারছি না!
চলো।
কুয়ার মুখে মাথা বের করে উঁকি দিল মুসা, চারপাশে দেখল। নির্জন। উঠে এল সে। তার পিছনে রবিন। মোটরবোটের ইঞ্জিনের শব্দ শোনা গেল। দুর্গের এক ধারে চলে এল দুজনে, দেখল বোটটা চলে। যাচ্ছে। তাতে দুজন লোক। কিন্তু নৌকাটা নিল না কেন ওরা? বলল তো নিয়ে যাবে! আগের জায়গায়ই বাধা রয়েছে ফগের নৌকা! নিতে পারল না, নাকি কোন কারণে মত বদলাল ব্যাটারা!