হ্যাঁ, বলুন?
আমার একটা উপকার করবে? অনুনয় করলেন মহিলা। তুমি আর তোমার বন্ধু, মুসা আমান, দয়া করে আসবে একবার ভারড্যান্ট ভ্যালিতে?
ভারড্যান্ট ভ্যালিতে! কেন?
তোমার সঙ্গে কথা বলা খুব জরুরী। আমার চাচাকে দেখেছ তোমরা…ইয়ে, মানে, তার ভূত দেখেছ। দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর মুখ থেকে সব শুনতে চাই। ভূতটা কেমন, কি করেছে, সব… চুপ হয়ে গেলেন দিনারা, বোঝা যাচ্ছে, দ্বিধা করছেন। শেষে বলেই ফেললেন, জানো, আমি…আমিও গতরাতে দেখেছি, এই ভারড্যান্ট ভ্যালিতে। আমার ঘরে।
পাঁচ
কিশোরের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল রবিন।
হ্যাঁ, বলে দেয়ার জন্যে মাথা ঝুঁকিয়ে ইঙ্গিত করল কিশোর।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আসব, মিস কৌন, টেলিফোনে বলল রবিন। মুসাও আসবে হয়তো! অবশ্য যদি আমাদের বাবা-মার কোন আপত্তি না থাকে।
তা তো বটেই, তা তো বটেই, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মহিলা। সেজন্যেই আগে তোমাদের বাড়িতে ফোন করেছি। তোমার মার আপত্তি নেই, মুসার মা-ও রাজি হয়েছেন। ডারড্যান্ট ভ্যালি খুবই সুন্দর জায়গা, বুঝেছ? আর তোমাদের বয়েসী এক নাতি আছে আমার, রিচার্ড মিঙ কৌন, তোমাদের সঙ্গ দিতে পারবে। প্রায় সারাজীবনই চীনে কাটিয়েছে।
কিভাবে কখন যেতে হবে, বিস্তারিত জানালেন মিস কৌন। ছটার প্লেন ধরতে হবে রবিন আর মুসাকে, স্যান ফ্রানসিসকোয় যাবে। এয়ারপোর্টে তাদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি, গাড়িতে করে নিয়ে যাবেন ডারড্যান্ট ভ্যালির বাড়িতে। আরেকবার ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন তিনি।
দারুণ হলো! আনন্দে জ্বলজ্বল করছে রবিন। ভাল একখান জার্নি করে আসা যাবে। হঠাৎ মনে পড়ল তার, কিন্তু তোমাকে তো যেতে বলেনি, কিশোর?
আহত হয়েছে কিশোর অবশ্যই, কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না। আমি ভূত দেখিনি, তোমরা দুজন দেখেছ, তোমাদেরকেই তো বলবে। বললেও অবশ্য আমি এখন যেতে পারতাম না, জরুরী কাজ আছে। বড় ট্রাকটা নিয়ে কাল চাচা-চাচীর সঙ্গে স্যান ডিয়েগো যেতে হবে। নেভির বাতিল মালের একটা লট আছে, দেখেশুনে আনা দরকার।
যা-ই বলো, তোমাকে ছাড়া যেতে ভাল লাগছে না, মুসা আন্তরিক দুঃখিত। আর ধারেকাছে যদি ভূত থাকে তাহলে তো কথাই নেই। তুমি ছাড়া গতি নেই আমাদের।
মুসার কথায় মনে মনে খুশি হলো কিশোর। বলল, হয়তো এটা ভালই হলো। ভারড্যান্ট ভ্যালিতে ভূত দেখা গেল, তোমরা তদন্ত চালাতে পারবে। এদিকে, খোঁজখবর করে রহস্য সমাধানের চেষ্টা করব আমি। টীম ওয়ার্ক করছি আমরা, ঠিক, কিন্তু তিনজনকে একই সঙ্গে একই জায়গায় থেকে কাজ করতে হবে, এটা কোন যুক্তি নয়। একই কাজের জন্যে দরকার পড়লে তিনজনকে তিন জায়গায় যেতে হবে না?
অকাট্য যুক্তি, কিন্তু মুসা আর রবিনের মত খুঁতখুঁত করতেই থাকল। জোর করে ওদেরকে তুলে বাড়ি পাঠাল কিশোর, তৈরি হওয়ার জন্যে।
মুসা আর রবিনের মা সুটকেস গুছিয়ে রেখেছেন। ছেলেরা বাড়তি কিছু জিনিস নিল, একটা করে টর্চ, কিছু চক-রবিন সবুজ রঙের, মুসা নীল-দরকারের সময় দেয়ালে বা অন্য কোন জায়গায় তিন গোয়েন্দার আশ্চর্যবোধক চিহ্ন এঁকে সঙ্কেত রাখার জন্যে।
লস অ্যাঞ্জেলেস এয়ারপোর্টে তাদেরকে তুলে দিতে গেলেন রবিনের মা গাড়ি নিয়ে, সঙ্গে গেল কিশোর।
ফোনে যোগাযোগ রাখবে আমার সঙ্গে, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। কিছু ঘটলে জানাবে। ভূতটা যদি ওখানে আবার দেখা যায়, তেমন বুঝলে আমিও চলে আসব। পরে।
বার বার ছেলেকে হুঁশিয়ার করে দিলেন রবিনের মা, সাবধানে থাকবে। আর দেখো, মহিলার সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার কোরো না।
ও তো কারও সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করে না, আন্টি, প্রতিবাদ করল কিশোর।
জানি, হাসলেন মিসেস মিলফোর্ড, তবু বলছি।
প্লেন ছাড়ল। আকাশে উঠল বিশাল জেট, উড়ে চলল উত্তরমুখো। বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার ভ্রমণ, এরই মাঝে ডিনার আছে, তাই সময়টা আরও কম মনে হয়।
দেখতে দেখতে স্যান ফ্রানসিসকোয় পৌঁছে গেল বিমান, ল্যাণ্ড করল।
লাউঞ্জে মুসার বয়েসী, প্রায় তার সমান লম্বা, চওড়া কাধ, এক কিশোরের সঙ্গে পরিচয় হলো তাদের। এগিয়ে এসে স্বাগত জানাল, চলন-বলন-চেহারায় পাক্কা আমেরিকান ছাপ, চোখ দুটো শুধু চীনা, তা-ও পুরোপুরি না।
পরিচিত হলো রিচার্ড কৌন, মিঙ নামটাই তার পছন্দ, তাই ওটা ধরে ডাকতেই অনুরোধ জানাল নব পরিচিত বন্ধুদের। স্বল্প সময়েই জানিয়ে দিল, তার রক্তের চার ভাগের এক ভাগ চীনা, তবে বয়েসের চার ভাগের তিন ভাগ কাটিয়েছে চীনে, হংকং-এ। মালপত্র বইতে মুসা আর রবিনকে সাহায্য করল সে, পথ দেখিয়ে বের করে নিয়ে এল বিমানবন্দর থেকে। ব্যস্ত রাস্তা পার হয়ে এসে দাঁড়াল বিরাট পার্কিং লটে।
একটা স্টেশন ওয়াগন অপেক্ষা করছে ওদের জন্যে, ছোটখাট একটা বাস বললেই চলে। ড্রাইভিং সীটে বসা এক তরুণ মেকসিকান।
হুগো, লোকটাকে বলল মিঙ, এরাই আমাদের মেহমান। ও রবিন মিলফোর্ড, আর ও মুসা আমান। চলো, সোজা বাড়ি চলো। প্লেনে কি খেয়েছে না খেয়েছে, নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে।
সি, সিনর মিঙ, দরজা খুলে লাফিয়ে নামল হুগো। দুহাতে দুটো ব্যাগ তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়ির পেছনের সীটে রাখল। ফিরে এসে বসল আবার ড্রাইভিং সীটে। তার ঠিক পেছনেই উঠে বসল ছেলেরা, তিনজন একই সীটে পাশাপাশি। গাড়ি ছাড়ল হুগো।