পুরানো বাড়িটাকে এতদিন কেন বিক্রি করেনি ওরা, সেটা এক রহস্য। কেন এভাবে ফেলে রেখেছিল, সেটাও। এই এতদিন পরে বাড়ি বিক্রি করতে রাজি হয়েছে মিস দিনারা কৌন।
তারপর, মুসা যোগ করল, বাড়ি ভাঙা শুরু হতেই বিরক্ত হয়ে উঠল সবুজ ভূত। গোপন কুঠুরি থেকে বেরিয়ে চেঁচিয়ে সাবধান করল। ভূত অবশ্যই বুঝতে পেরেছে, যত যা-ই করুক, ওই বাড়িতে আর থাকতে পারবে না সে, তাই নতুন আস্তানার খোঁজে বেরিয়েছে।
তোমার তাই ধারণা, কিশোর বলল। ওটা. ফারকোপার বুড়োর ভূত, এতেও নিশ্চয়ই কোন সন্দেহ নেই।
তোমার আছে? ওটা যদি ভূত না হয়, আমার নাম বদলে রাখব।
নামটা শেষে সত্যিই না বদলাতে হয়…
কিশোরের কথায় বাধা দিল রবিন। তোমার কি মনে হয়, ভূত না ওটা? অন্য কিছু ভেবে থাকলে গিয়ে বলো চীফকে, হয়তো পুরস্কার দিয়ে দেবেন।
মানে? চোখ মিটমিট করল কিশোর।
কেন, কাল শোনোনি? সবার সামনেই তো চীফ বলেছেন, ভূতটাকে তিনিও দেখেছেন। পরে বাবাকে বলেছেন, ভূতে বিশ্বাস করেন না তিনি, কিন্তু এই ব্যাপারটাকে অবিশ্বাসও করতে পারছেন না। তাই জোর গলায় হুকুম দিতে পারছেন না সহকারীদের যে, সবুজ জিনিসটাকে ধরে এনে দাও। এখন যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে ওটা ভূত নয়, তাকে পুরস্কার দেবেন না?
হুমম, মাথা দোলাল কিশোর, খুশি মনে হচ্ছে তাকে। তাহলে সবুজ ভূতের কেসটা নিতে পারি আমরা, অন্তত পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে সাহায্য করার জন্যে হলেও। যত সহজ ভাবছ, ব্যাপারটা তত সহজ না-ও হতে পারে। এর পেছনে। অনেক গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে, আমি শিওর।
এক মিনিট, হাত তুলল মুসা। পুলিশ আমাদের সাহায্য চায়নি, এক নম্বর। দুই নম্বর, ওই ভূতপ্রেতের ব্যাপারে নাক গলাতে ব্যক্তিগতভাবে আপত্তি আছে আমার।
রবিন আপত্তি করল না, চুপ করে রইল।
কেন, আপত্তি কেন? ভুরু নাচাল কিশোর। তিন গোয়েন্দার নীতিই তো। হলো, যে-কোন জটিল রহস্য সমাধানের চেষ্টা করা। ভূতরহস্য কি রহস্য নয়? ভূত বিশ্বাস করি না মোটেও, কিন্তু যদি সত্যিই থেকে থাকে, আর একটাকে পাকড়াও করতে পারি, কি রকম সাড়া পড়বে, ভেবেছ? রবিন আর মুসার দিকে তাকিয়ে নিল। একবার করে। হ্যাঁ, গোড়া থেকে শুরু করি। গতরাতে আবার দেখা গিয়েছিল। ভূত?
কাগজে তো কিছু লেখেনি, বলল রবিন। চীফকে জিজ্ঞেস করেছিল বাবা। চীফ জানিয়েছেন, নতুন কোন রিপোর্ট আসেনি থানায়।
সে-রাতে কৌন ম্যানশনে যে কজন ভূতটাকে দেখেছে, সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তোমার বাবা?
নাহ্। চারজনের সঙ্গে বলেছে। বিশালদেহী লোকটা, কুকুরের মালিক, আর কৌনের দুই প্রতিবেশী।
বাকি দুজন?,
কারা ছিল, সেটাই জানা যায়নি। বাবার ধারণা, ওরা পাবলিসিটি চায় না, বন্ধুদের হাসির খোরাক হতে নারাজ। আমি শিওর, দুজন নয়, তিনজনই।
ঠিক আছে, ধরে নিলাম সাতজনই। কৌন ম্যানশনে আসার সাধ জেগেছিল কেন হঠাৎ?
জ্যোৎস্নায় হাঁটাহাঁটি করছিল ফারকোপারের প্রতিবেশীরা, এই সময় দুজন লোক এসে তাদেরকে প্রস্তাব দিন, চাঁদের আলোয় ভাঙা পোড়ো বাড়ি কেমন লাগে, দেখতে যাওয়ার। লোকগুলোকে চেনে না প্রতিবেশীরা। তবে প্রস্তাবটা তাদের মনে ধরল। ড্রাইভওয়েতে ঢুকেই চিৎকার শুনতে পেল ওরা। তারপর কি হয়েছে, সব জানো।
বাড়ি ভাঙা বন্ধ হয়েছে?
আপাতত। গোপন আরও কুঠুরি আছে কিনা, খুঁজেছে পুলিশ। পাওয়া যায়নি। এখনও বাড়িটাকে কড়া পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। বাবা বলছে, ওখানে নতুন বাড়ি করলেও আর বিশেষ সুবিধে হবে না, ভাড়াটে পাওয়া মুশকিল হবে। ভূতের ভয়ে আসতে চাইবে না লোকে।
চুপ হয়ে গেল কিশোর, ধ্যানমগ্ন হয়ে রইল যেন কয়েক মিনিট, দৃষ্টি ছাতের দিকে। অবশেষে মুখ নামিয়ে রবিনকে বলল, টেপরেকর্ডারটা নাও, শুনি আবার ক্যাসেটটা।
রেকর্ডারের সুইচ টিপে দিল রবিন। কানে আঘাত হানল তীক্ষ্ণ বিকট চিৎকার। তারপর লোকের কথাবার্তা। শুনতে শুনতে ভ্রুকুটি করল কিশোর। কিছু একটা রয়েছে টেপে, ঠিক বুঝতে পারছি না, বের করে আনতে পারছি না। আচ্ছা, কুকুরের আওয়াজ যে শুনলাম, কি জাতের কুকুর?
কুকুরের জাত দিয়ে কি হবে? হাত নেড়ে বলল মুসা।
হতেও পারে। কোন কিছুকেই ছোট করে দেখা উচিত হবে না।
ফক্স্ টেরিয়ার, বলল রবিন, রোমশ। ছোট্ট কুকুর। কিছু বুঝলে?
বোঝেনি, বলতে বাধ্য হলো কিশোর। আবার বাজিয়ে শুনল টেপটা, আবার। কি যেন একটা ইঙ্গিত রয়েছে, কিন্তু ধরতে পারছে না সে। টেপরেকর্ডার বন্ধ করে খবরের কাগজের কাটিং পড়ায় মন দিল।
শহরের বাইরে চলে গেছে সবুজ ভূত, বলল মুসা, এতে কোন সন্দেহ নেই। বাড়ি ভাঙা শুরু হতেই সটকে পড়েছে।
জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল কিশোর। ফোন বেজে উঠেছে। রিসিভার তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল।
হ্যালো?
ফোনের সঙ্গে কায়দা করে আটকানো লাউড-স্পীকার জ্যান্ত হয়ে উঠল। সবাই শুনতে পেল কথা। লঙ ডিসট্যান্স কল, বলল মহিলাকণ্ঠ। রবিন মিলফোর্ডকে চাই।
একে অন্যের দিকে তাকাল ছেলেরা।
রবিন, তোমার, বলে রিসিভার বাড়িয়ে ধরল কিশোর।
হ্যাল্লো, রবিন মিলফোর্ড বলছি, উত্তেজনায় গলা মৃদু কাঁপছে তার।
হ্যাল্লো, রবিন, বলল এক মহিলাকণ্ঠ, বৃদ্ধা, আওয়াজেই বোঝা গেল। আমি দিনারা কৌন। ভারড্যান্ট ভ্যালি থেকে বলছি।
দিনারা কৌন! ফারকোপার কৌনের ভাইঝি।