রকি বীচ নিউজ কাগজটায় হাত রেখে বলল কিশোর, এতে লিখেছে, একটা গুদামের বাইরেও দেখা গেছে ভূতটাকে, তারপর এক মহিলার বাড়ির বারান্দায়, এরপর দেখেছে দুজন ট্রাক-ড্রাইভার। পুরানো একটা হোটেলে তখন খাচ্ছিল। ড্রাইভাররা, এই সময়ই বাইরে ট্রাকের কাছে ভূতটাকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে। তারা। তারমানে, বোঝাতে চাইছে, পুরানো আস্তানা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ভূতটা, নতুন আস্তানার খোঁজে আছে।
হ্যাঁ, খুব জোর দিয়ে বলল মুসা, এমনও হতে পারে, রকি বীচ থেকে চলে যাওয়ার তালে আছে সে, ট্রাকে চড়ে, তাই ট্রাকের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল।
ভূত তো এমনিতেই যেখানে খুশি যেতে পারে, চোখের পলকে, তার যানবাহনের দরকার হবে কেন?
আমি কি জানি? দুহাত উল্টাল মুসা।
হাসল কিশোর। যা-ই হোক, খুব রহস্যময় কাণ্ড। আরও তথ্য না পেলে, কিংবা নতুন কিছু না ঘটলে… বাধা পেয়ে থেমে গেল সে।
বাইরে থেকে ডাকছেন মেরিচাচী। রবিন, এই, রবিন, জলদি এসো।
তিন
রবিনের বাবা হঠাৎ করে পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে?
তাড়াহুড়ো করে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরোতে শুরু করল তিন গোয়েন্দা।
দুই সুড়ঙ্গ মানে, একটা লম্বা লোহার মোটা পাইপ। এক মুখ কায়দা করে যোগ করে দেয়া হয়েছে মোবাইল হোমের মেঝের একটা গর্তের সঙ্গে। আরেক মুখ জঞ্জালের বাইরে, একটা লোহার পাত ফেলে সেটা ঢেকে রাখা হয় সারাক্ষণ। হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করতে যাতে অসুবিধে না হয়, সেজন্যে পুরু কার্পেট পেতে
দেয়া হয়েছে পাইপের করতে যাতে অসুবিলে সেটা ঢেকে রাখা, আরেক মুখ
বাইরে বেরোল তিন গোয়েন্দা। জঞ্জালের বেড়ার পাশ দিয়ে ঘুরে বেরিয়ে এল স্যালভিজ ইয়ার্ডের কাঁচে-ঢাকা ছোট্ট অফিসঘরের সামনের আঙিনায়।
অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে লম্বা এক ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছেন মেরিচাচী। বাদামী গোঁফে আঙুল বুলিয়ে উজ্জ্বল চোখের তারা নাচিয়ে বললেন ভদ্রলোক, এই যে, এসে গেছে আপনার তিন আসামী। রবিন, তোমার সঙ্গে ফ্লেচার কথা বলতে চায়। মুসা, তোমার সঙ্গেও।
ঢোক গিলল মুসা। পুলিশ-প্রধান তার সঙ্গে কথা বলতে চান? আগের রাতে যা যা দেখেছে-শুনেছে, দ্রুত গুছিয়ে নিতে শুরু করল মনে।
ঝাঁকড়া চুলে আঙুল বোলাল কিশোর। আংকেল, আমি আসব?
এসো, হাসলেন মিস্টার মিলফোর্ড। এসো, বাইরে গাড়িতে বসে আছে চীফ।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো সিডান। স্টিয়ারিং হুইলে এক হাত রেখে বসে আছেন ইয়ান ফ্লেচার। মোটাসোটা মানুষ, মাথার সামনের দিকটায় টাক, হাসিখুশি। ববের বাবার দিকে চেয়ে হাসলেন। বাড়িতেই পেয়েছ তাহলে। এসো, গাড়িতে ওঠো। দেখো, রজার, আগে থেকেই বলে দিচ্ছি, আমাকে বাঁচাবে জোকগুলোর হাত থেকে। আরিব্বাপ রে বাপ! রিপোর্টার তো না একেকটা…এসো, গাড়িতে ওঠো।
আমিও তো খবরের কাগজের লোক, গাড়িতে উঠে বললেন মিস্টার মিলফোর্ড।
সেজন্যেই তো বলছি। তুমি আমার প্রতিবেশী, সহায়তা করবে আর কি একটু। যেভাবে প্রশ্ন শুরু করে ওরা, মুখ ফসকে কি বলতে কি বলে ফেলি, দেবে ছেপে। যাবে আমার এত বছরের ক্যারিয়ার।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, ভেব না, হাত তুললেন মিস্টার মিলফোর্ড। এক কাজ করি। কৌন ম্যানশনে যেতে যেতেই শুনি ওরা কি কি দেখেছে।
আরও কয়েকজনের মুখে শুনেছি অবশ্য, ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে-দিতে বললেন। ফ্লেচার, তবু আরেকবার শোনা যাক। বলো তোমরা।
সংক্ষেপে সব বলল রবিন, মাঝে মাঝে কথা যোগ করল মুসা। চুপচাপ গাড়ি চালাতে চালাতে শুনলেন পুলিশ-প্রধান। তারপর বললেন, অন্যেরাও এই একই কথা বলেছে। অনেকেই দেখেছে। তবু বিশ্বাস করতাম না, যদি… থেমে গেলেন ফ্লেচার, আরেকটু হলেই দিয়েছিলেন ফাঁস করে।
যদি? সঙ্গে সঙ্গে কথা ধরলেন মিস্টার মিলফোর্ড।
না, কিছু না।
কিছু তো বটেই। ইয়ান, কিছু লুকোচ্ছ তুমি। ভূতটাকে তুমিও দেখেছ, না? এ-কারণেই অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিচ্ছ না।
হ্যাঁ, পথের দিকে তাকিয়ে আছেন ফ্লেচার, আমি দেখেছি। গোরস্থানে। ফারকোপার কৌনের কবরের কাছে, মারবেলের একটা খুঁটিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি এগোতেই মিশে গেল মাটিতে, যেন কবরে ঢুকে পড়ল।
পিঠ খাড়া হয়ে গেছে তিন কিশোরের।
আড়চোখে ফ্লেচারের দিকে তাকালেন মিস্টার মিলফোর্ড, মুচকে হাসলেন, নোট করে নেব?,
না না, আঁতকে উঠলেন ফ্লেচার, ছেলেদের দিকে ফিরলেন। এই, কাউকে কিছু বলবে না। তোমরা আছ ভুলেই গিয়েছিলাম। বলবে না তো?
না, স্যার, বলব না, কিশোর মাথা নাড়ল।
আমি একা নই, চীফ নিশ্চিন্ত হলেন কিনা বোঝা গেল না, আরও অনেকেই দেখেছে, নিশ্চয়ই কাগজ পড়েছ। দুজন ট্রাক-ড্রাইভার দেখেছে। এক মহিলা দেখেছে। এক গুদামের দারোয়ান দেখেছে। আমি দেখেছি, আমার দুজন অফিসার দেখেছে, রবিন আর মুসা দেখেছে।
মোট নজন, হিসাব করলেন মিস্টার মিলফোর্ড।
না, পনেরো, শুধরে দিলেন ফ্লেচার। আরও ছজন ছিল রবিন আর মুসার সঙ্গে। মোট পনেরো জন দেখেছে ভূতুড়ে মূর্তিটাকে।
ছজনই ছিল, ঠিক জানেন? প্রশ্ন করল কিশোর। নাকি সাতজন? মুসা আর রবিন একমত হতে পারছেন না।
আমি শিওর না। চারজনের রিপোর্ট শুনেছি আমরা। তিনজন বলেছে, তোমরা ছাড়া আরও ছজন ছিল। একজন বলেছে সাতজন। অন্য দুই বা তিন, যে-কজনই হোক, ওদের রিপোর্ট নেয়া হয়নি। ওরাও আসেনি। বোধহয় পাবলিসিটি চায় না। পনেরো হোক আর ষোলোই হোক, এতগুলো লোক দেখেছে, চোখের ভুল বলে। উড়িয়ে দেয়া যায় না। নিজের চোখে দেখলাম, মাটিতে মিলিয়ে গেল, অবিশ্বাস করি কি করে?