হাসব না বলছেন কি? হাসতে হাসতেই বললেন ক্যাপ্টেন। ভূতে ধরেছিল আমাকে, আপনার ছেলেরা ছাড়িয়েছে।
সর্বনাশ! আঁতকে উঠলেন মেরিচাচী। ছেলেগুলো আপনার মাথাও খেয়েছে। তাহলে? …যাচ্ছেন যে? চা খেয়েছেন?
না, খাইনি। বসব?
বসুন বসুন, আমি এখুনি নিয়ে আসছি। তারপর ভূতের গল্প শুনব।
বড়দের কথায় আর থাকল না তিন গোয়েন্দা, বেরিয়ে এল। রওনা হলো হেডকোয়ার্টারে।
.
তার পরদিন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে এল তিন গোয়েন্দা। তাদেরকে দেখেই বলে উঠলেন তিনি, এই যে, এসে পড়েছ, বসো। খবরের কাগজে পড়েছি সব। দুমিনিট বসো, হাতের কাজটা সেরে নিই, তারপর শুনব।
কাজ শেষ করে কাগজপত্র এক পাশে ঠেলে সরিয়ে রাখলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। হাত বাড়ালেন। ফাইলটা বাড়িয়ে দিল রবিন।
মন দিয়ে রবিনের লেখা রিপোর্ট পড়লেন তিনি। মুখ তুললেন। মিস্টার হুয়াঙের খবর কি? তার কথা তো আর কিছু লেখোনি।
রবিন বলল, আমার ওখানে থাকতেই একদিন মিঙের দাদীমার বাড়িতে এল দুজন চীনা। তারা বলল, নেকলেসটা কোথায় রেখেছিল মুসা দেখিয়ে দিলে মিস্টার হুয়াঙ কিস্তিতে ঋণের টাকা নিতে রাজি আছেন। দেখিয়ে দিল মুসা। নেকলেস পাওয়া যায়নি, তবে ওখানকার সমস্ত ধুলো পোটলা করে নিয়ে গেছে লোকগুলো।
মুক্তোর গুঁড়ো মেশানো ধুলো খেয়েই বেঁচে থাকার ইচ্ছে। হুহ, কতরকম লোক যে আছে দুনিয়ায়। সব কুসংস্কার। কিশোরের দিকে ফিরলেন, কিশোর, কুকুরের উল্লেখ আছে রিপোর্টে, কিন্তু ব্যাখ্যা করা হয়নি। খুলে বলো তো।
কুকুরটার কথা ভাবতে শার্লক হোমসের একটা গল্প মনে পড়ে গেল, বলল কিশোর। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, স্যার, ডক্টর ওয়াটসনকে শার্লক হোমস কি বলেছে, রাতে কুকুরের আচরণ সম্পর্কে?
নিশ্চয়ই! বুঝে ফেললেন চিত্রপরিচালক, চেহারার ভাবেই প্রকাশ পেল সেটা। ডক্টর ওয়াটসন বলছে, রাতে অদ্ভুত কিছুই করে না কুকুরটা। শার্লক হোমসের জবাব, করে না যে সেটাই তো অদ্ভুত।
বুঝেছেন, স্যার।
রিপোর্টের পাতা উল্টে একটা জায়গায় এসে থামলেন চিত্রপরিচালক। এই যে, এখানে লেখা রয়েছে, ছোট্ট কুকুরটা শান্ত ছিল লোকটার কোলে, চেঁচামেচি করেনি। কিশোর, না বলে পারছি না, তোমার ব্রেনটা অসাধারণ। এই অতি সামান্য একটা ব্যাপার থেকে রহস্যের সমাধান করে ফেললে?
মুসা আর রবিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। কিছুই বুঝতে পারছে না। হেঁয়ালি মনে হলো তাদের কাছে কিশোর আর চিত্রপরিচালকের কথাবার্তা।
কুকুরটা শান্ত ছিল, তাতে কি? আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করল মুসা।
কুকুর আর বিড়ালের স্বভাব জানো? বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। রাতের বেলায় ভয় পেলে কিংবা অদ্ভুত কিছু দেখলে কি রকম উত্তেজিত হয়ে ওঠে? রোম খাড়া হয়ে যায়, চিৎকার করে। ছোট্ট কুকুরটা সেরাতে কিছুই করেনি, তার মানে কি?
ও, বুঝেছি! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। যেহেতু ভূত ছিল না সেটা, সেজন্যেই চেঁচামেচি করেনি কুকুরটা। আমাদের কাছে অস্বাভাবিক, কিন্তু তার কাছে ব্যাপারটা সাধারণ ছিল। ইস, আমরা কি! এই সহজ কথাটা…
তোমরা? আর দশটা ছেলের চেয়ে বুদ্ধিমান, সাহসী, রীতিমত দুঃসাহসী, বললেন চিত্রপরিচালক, নেকলেসটা যেভাবে লুকিয়েছ, মরিসনকে ধোঁকা দিতে চেয়েছ, সেটা বুদ্ধি আর সাহসের পরিচয় নয়? রবিন যে ঘুমের ভান করে থাকল সেটা বুদ্ধির পরিচয় নয়?…
হ্যাঁ, ঠিক, হাসল মুসা। মিস্টার হুয়াঙকেও বোকা বানিয়ে ছাড়ল। সম্মোহিত হওয়ার ভান করে চোখ বুজে রইল। তারপর সুযোগমত সাহায্যের আবেদন ছড়িয়ে দিল পথে পথে। এটা শুনলে মিস্টার হুয়াঙের চেহারা কেমন হয় দেখতে ইচ্ছে করছে। হা-হাহ্।
আজ তাহলে উঠি, স্যার? ওঠার উপক্রম করল কিশোর।
আরে বসো, হাত নাড়লেন চিত্রপরিচালক। আসল কথাটাই তো জানা হয়নি এখনও ভূতের ব্যাপারটা ফাঁকিবাজি, কিন্তু একটা কিছু তো দেখা গেছে। কি ওটা?
কুকুরের ব্যাপারে ভাবতে গিয়েই ওটা বুঝতে পেরেছি। কুকুরটা তেমন বিশেষ কোন গন্ধ পেল না, বিশেষ কিছু দেখল না, তার আচরণ থেকেই এটা স্পষ্ট। …ঘরটা অন্ধকার করে দিই, স্যার?
হ্যাঁ হ্যাঁ, দাও।
জানালার সবগুলো পর্দা টেনে দিল কিশোর। আলো নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে দিল। ডানে, দেয়ালের দিকে তাকান।
রবিন আর মুসাও তাকাল। সবুজ আলো ফুটছে সাদা দেয়ালে। আস্তে আস্তে উজ্জ্বল হলো আলো। যেন একটা মানুষের রঙিন ছায়া, নড়ছে। দেয়ালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভেসে চলে গেল যেন ওটা। ম্লান হতে হতে মিলিয়ে গেল।
আলো জ্বেলে দিল আবার কিশোর।
তাজ্জব ব্যাপার। বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা।
বুঝেছি, মাথা ঝোকালেন চিত্রপরিচালক। আরও আগেই আমার বোঝা উচিত ছিল। এতদিন সিনেমা লাইনে আছি…
কী, স্যার? কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারছে না মুসা।
প্রোজেক্টর। মিনি প্রোজেক্টর। লাইটিং খুব কমিয়ে দিয়ে অন্ধকারে দেয়ালে ছবি ফেলা হয়েছে, আর কিছু না। রঙিন ছবি।
কিশোরের হাতের ওই টর্চটা? ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। এটা টার্নারের অফিসে খুঁজে পেয়েছি। জাপানের তৈরি। দেয়ালে ছবি ফেলে টর্চটা যেদিকে ঘোরাবে সেদিকেই যাবে ছবি। ওপরে নিচে কিংবা পাশে দ্রুত নাড়ালে মনে হবে ছবিটা, নাচছে। একটা সুইচ আছে, এই যে এটা, এটা দিয়ে লাইট কন্ট্রোল করা যায়, আলো কমানো বাড়ানো যায়। মিস্টার হুয়াঙ দিয়েছেন এটা টার্নারকে।