এই… বলেই থেমে গেল মরিসন। হঠাৎ লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল দুজন, হাতে রিভলভার। তার রেখে যাওয়া প্রহরীরা নয়, অন্য লোক।
প্রায় একই সঙ্গে গুহার চারপাশ থেকে জ্বলে উঠল ছয়টা টর্চ। শেরিফের ধমক শোনা গেল, খবরদার, নড়বে না, খুলি উড়িয়ে দেব!
কিন্তু নড়ল মরিসন। চোখের পলকে মুসার কলার চেপে ধরে একটানে তাকে নিয়ে ঢুকে গেল আবার সুড়ঙ্গে। কেউ গুলি করার সাহস পেল না, মুসার গায়ে লাগতে পারে। এতই তাড়াতাড়ি ঘটে গেল ঘটনাটা, কেউই কিছু করতে পারল না। তবে দাঁড়িয়েও থাকল না। টর্চ আর রিভলভার হাতে ছুটে এসে ঢুকল সুড়ঙ্গে।
ঝাড়া দিয়ে মরিসনের হাত থেকে কলার ছুটিয়ে নিয়ে দৌড় দিল মুসা। এসে পড়ল একেবারে শেরিফের গায়ে।
কোথায় গেল? জিজ্ঞেস করল শেরিফ।
আঙুল তুলে একটা সুড়ঙ্গ মুখ দেখিয়ে দিল মুসা, কথা বলতে পারছে না, হাঁপাচ্ছে।
যাক, বলল শেরিফ। আজ আর খুঁজব না। খনির মুখে পাহারা রেখে যাব। কাল সকালে এসে ধরব ব্যাটাকে।
ফেরার পথে গাড়িতে রবিন জানতে চাইল, ওরা কোথায় আছে তা জানা গেল। কি করে।
কিশোরের কৃতিত্ব, বললেন মিস্টার মিলফোর্ড। পথের ধারে তোমার লেখা কাগজ তার চোখেই পড়েছে। বোঝা গেল, খনিতে রয়েছ তোমরা। কিন্তু কোন্টায়? যত খনি আছে, জানামতে সব খুঁজেছে মিস কৌনের লোকেরা। শেষে তারই মনে পড়ল একটা কথা, প্রায়ই নাকি মিঙ কোন এক খনিতে যেত, একজন লোকের সঙ্গে। লোকটার নাম ন্যাট বারুচ, স্যান ফ্রানসিসকোর এক হাসপাতালে রয়েছে এখন। অসুস্থ। তাকে ফোন করলেন মিস কৌন। জানা গেল, আরেকটা খনিমুখ আছে, যেটা খোঁজা হয়নি। দুটো হলদে পাথর আছে খনির মুখে। তখনই তোক জোগাড় করে ওটাতে এসে ঢুকলাম। তারপর আর কি? ঢুকেই দেখি তুমি আর মিঙ… থামলেন তিনি। আচ্ছা, সাতচল্লিশ লিখেছিলে কেন? মানে কি?
হাসল রবিন। কিশোর এর মানে বের করতে পারেনি?
না, বলল কিশোর।
তুমি বোঝে না, এমন জটিল সমস্যাও তাহলে আছে, বলল রবিন। স্টেশন। ওয়াগনের পেছনে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আমাদেরকে। নোট বই থেকে পাতা ছিঁড়ে তাতে সঙ্কেত লিখে একটা ফাঁক দিয়ে ফেলেছি। একটা মাত্র পাতা ফেললে লোকের চোখে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই একটার পর একটা পাতা ছিঁড়ে একই কথা বারবার লিখে ফেলেছি। সিরিয়াল নম্বর দিয়ে দিয়েছি এক দুই করে। ধরে নিয়েছি, বেশি পাতা ফেললে একটা অন্তত কারও না কারও চোখে পড়বেই। তোমরা যেটা পেয়েছ, সেটা সাতচল্লিশ নম্বর।
নম্বর দিয়েছ কেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এমনি মনে হলো, তাই দিলাম।
খনির নাম-ঠিকানা লিখলে না কেন?
নাম জানি না। তাছাড়া বেশি লেখার সুযোগ কোথায়? চাদরের নিচে অন্ধকারে বসে লিখেছি, চলন্ত গাড়িতে। ওটুকু যে লিখতে পেরেছি তা-ই বেশি।
সতেরো
পরদিন ধরা পড়ল না মরিসন। ধরা গেল না কোনদিনই। তার আর কোন খোঁজই কেউ কোনদিন পেল না। হয়তো এমন কোন সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে পালিয়েছে সে, যেটা সম্পর্কে আর কেউই জানে না। কিংবা হতে পারে, কোন সুড়ঙ্গ বা গুহায় বেকায়দা অবস্থায় আটকা পড়ে গাধাটার মতই মর্মান্তিক মৃত্যু বরণ করছে।
মিস্টার মিলফোর্ড ফিরে গেলেন রকি বীচে।
মিঙের দাদীমার মেহমান হয়ে আরও কয়েক দিন ভারড্যান্ট ভ্যালিতে থাকল। তিন গোয়েন্দা।
যেসব জায়গা দেখা হয়নি, ঘুরে ঘুরে সব দেখাল তাদেরকে মিঙ। চাকার কেটে গেল কয়েকটা দিন।
ভূতের ব্যাপারটা ভুয়া, সব টার্নারের শয়তানী, এটা প্রকাশ পেতেই আবার ফিরে এল শ্রমিকের দল, শেষ মুহূর্তে রক্ষা পেল পাকা আঙুর, তাড়াতাড়ি তুলে পাঠানো হলো ওগুলোকে প্রেসিং হাউসে, রাতদিন পরিশ্রম করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হলো।
টার্নারকে পুলিশে দেননি মিস কৌন, আত্মীয় বলে মাফ করে দিয়েছেন। তবে তাড়িয়ে দিয়েছেন ভারড্যান্ট ভ্যালি থেকে। সাবধান করে দিয়েছেন, ওখানে আর কোন দিন তাকে দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে দেবেন।
অবশেষে একদিন রকি বীচে ফিরে এল তিন গোয়েন্দা। খবর পেয়ে সেদিনই এসে তাদের সঙ্গে দেখা করলেন পুলিশ-প্রধান ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার। বার বার ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, উফ, কি মানসিক অশান্তি থেকেই না মুক্ত করেছ তোমরা আমাকে। নিজের চোখে ভূত দেখলাম অথচ ভূত বিশ্বাস করি না, রহস্যটা রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল আমার।
পকেট থেকে তিনটে সবুজ কার্ড বের করলেন ক্যাপ্টেন, একেকজনকে একটা করে দিলেন।
লেখা রয়েছে:
এই কার্ডের বাহক ভলানটিয়ার জুনিয়র, রকি বীচ পুলিশকে সহায়তা করছে। এদেরকে সাহায্য করা মানে, পক্ষান্তরে পুলিশকেই সাহায্য করা।
সার্টিফিকেটের নিচে ক্যাপ্টেন ফ্লেচারের সই আর সীল।
আনন্দে লাল হয়ে গেল কিশোরের মুখ। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ক্যাপ্টেন। গোয়েন্দাগিরি করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেল আমাদের জন্যে।
চেঁচিয়ে উঠল মুসা, থ্রী চিয়ার্স ফর…
ক্যাপ্টেন ফ্লেচার! সমস্বরে শ্লোগান দিল কিশোর আর রবিন।
হাসলেন ক্যাপ্টেন। এখন থেকে কোনরকম অসুবিধে হলেই আমাকে জানাবে। যতভাবে পারি, সাহায্য করব।
বাইরে বোরিস আর রোভারকে খাটাচ্ছেন মেরিচাচী, চেঁচামেচি শুনে উঁকি দিলেন অফিসে। হাসিমুখে বেরিয়ে আসছেন ক্যাপ্টেন ফ্লেচার, ব্যাপারটা অবাকই লাগল তার কাছে। কি ব্যাপার, চীফ? আপনার মুখে হাসি, অবাক কাণ্ড!