কি শয়তানী বুদ্ধি! বিড়বিড় করলেন শেরিফ। কিন্তু এখানে ফেলে গেল পিপাগুলো?
হয়তো গাড়ি বদল করেছে এখানে, বললেন মিস্টার মিলফোর্ড। মরিসনের লোক আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে বসে ছিল, নির্জন জায়গায় এসে পিপা থেকে ছেলেদেরকে বের করে অন্য গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্যান ফ্রানসিসকোয়। চলুন, জলদি বাড়ি চলুন। পুলিশকে টেলিফোন করতে হবে।
ফিরে চলল গাড়ি। হেডলাইটের আলোয় পথের ধারে একটা কাগজের টুকরো পড়ে থাকতে দেখল কিশোর। খানিক দূরে একটা, তারপর আরেকটা। চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে। কই, আসার সময় তো দেখেনি? নাকি বেশি উত্তেজিত ছিল বলে খেয়াল করেনি? তাই হবে।
খানিক দূরে আরেকটা একই রকম কাগজের টুকরো চোখে পড়তেই গাড়ি থামাতে বলল কিশোর। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তুলে নিল টুকরোটা। টর্চের আলোয় দেখল, তাতে লেখা রয়েছে কিছু। আরে, রবিনের হাতের লেখা না! দ্রুত চলে এল গাড়ির কাছে। মিস্টার মিলফোর্ডকে ডাকল, আংকেল, দেখুন, রবিনের। লেখা!
ছেলের হাতের লেখা চিনতে পারলেন বাবাও।
লেখা রয়েছে: ৪৭ খনি সাহায্য চাই!!!
কি মানে এর! আপনমনেই বললেন মিস্টার মিলফোর্ড। কিশোর, কিছু বুঝতে পারছ?
না, মাথা নাড়ল কিশোর। কিছুই বুঝছি না। হতে পারে সাতচল্লিশ মাইল দূরের কোন খনির কথা বলছে।
সাতচল্লিশ মাইল দূরে কোন খনি নেই, বললেন মিস কৌন, যা আছে, মাইল দশেকের মধ্যেই রয়েছে। এখানকার কোন খনিই খোঁজা বাদ রাখেনি।
স্থির দৃষ্টিতে কাগজটার দিকে চেয়ে আছে কিশোর, চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। দশ মাইলের মধ্যেই কোন খনিতে রয়েছে ওরা খনির উল্লেখ তাই বোঝাচ্ছে। কিন্তু সাতচল্লিশ মানে কি তাহলে?
ষোলো
গুহার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পাশাপাশি বসে আছে রবিন আর মিঙ। পা বাঁধা। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ওদের দুপাশে বসে আছে দুজন লোক, পাহারায়।
গাঢ় অন্ধকার। কিছুই দেখা যায় না।
স্টেশন ওয়াগনের পেছনে তুলে চাদর দিয়ে ঢেকে নিয়ে আসা হয়েছে ওদেরকে হ্যাঁশনাইফ ক্যানিয়নে। গাড়ি যতদূর আসতে পারে এসেছে, তারপর ঘুম থেকে তুলে হাঁটিয়ে এসেছে বাকি পথ।
মুসাকে নিয়ে নেকলেস আনতে গেছে মরিসন।
সুড়ঙ্গের সঙ্কীর্ণ অংশটার কাছে এসে দাঁড়াল দুজনে। এরপর আর মরিসন যেতে পারবে না। মুসার হাতে একটা টর্চ ধরিয়ে দিয়ে শাসিয়ে বলল, যাও। কোনরকম চালাকি করবে না। তুমি ফিরে না এলে তোমার দুই বন্ধুর গলা কেটে ফেলে দেব। মনে থাকে যেন।
না ফেরার কোন ইচ্ছে নেই মুসার। সেকথা মরিসনকে জানিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ল সুড়ঙ্গে।
দুইবার গেছে-এসেছে এই পথে, তৃতীয়বার যেতে বিশেষ অসুবিধে হলো না। পেরিয়ে এল সঙ্কীর্ণ অংশটা তারপর চিহ্ন ধরে ধরে এসে ঢুকল সেই গুহায়, যেখানে লুকিয়েছে নেকলেস। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, নেকলেসটা দিয়ে দেবে মিস্টার হুয়াঙকে, কোনরকম চালাকি করবে না। অহেতুক ঝুঁকি নেয়ার কোন অর্থ নেই।
কিন্তু কঙ্কালটা যেখানে থাকার কথা সেখানে আলো ফেলেই স্থির হয়ে গেল। ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত শিরশির করে নেমে গেল মেরুদণ্ড বেয়ে। কঙ্কালের চিহ্নও নেই, গাধার খুলিটাও গায়েব। সে জায়গায় মস্ত এক কালো গর্ত, বড় পাথর ধসে পড়ে রয়েছে। নিশ্চয়ই গুঁড়িয়ে দিয়েছে হাড়, সেই সঙ্গে ভঙ্গুর মুক্তোগুলোও।
প্রমাদ গুনল মুসা। এখন কি করবে? মরিসনকে বিশ্বাস করানো যাবে না। কি করবে? ভাবতে ভাবতেই ফিরল সে। পাথরের আড়াল থেকে বের করে নিল কালো টর্চটা। মরিসন কি খুলে দেখবে? নাকি না দেখেই ছেড়ে দেবে তাদেরকে?
ঘটল কি করে এই কাণ্ড? মনে পড়ল মুসার, দ্বিতীয়বার সঙ্কীর্ণ সুড়ঙ্গ দিয়ে ফেরার পথে ভূমিকম্প হয়েছিল। সে-কারণেই হয়তো ধসে পড়েছে পাথর। একেই বলে দুর্ভাগ্য। পড়ার আর জায়গা পেল না, পড়ল একেবারে কঙ্কালটার ওপর।
ভগ্নহৃদয়ে কালো টর্চটা নিয়ে ফিরে চলল মুসা। জানে, না দেখে নিশ্চিন্ত হবে না মরিসন, তবু ক্ষীণ একটা আশা দুলছে মনে। যদি না দেখেই ছেড়ে দেয়?
সঙ্কীর্ণ সুড়ঙ্গ পেরিয়ে এল মুসা।
দেখেই ধমকে উঠল মরিসন, এত দেরি কেন? কই, এনেছ?
নীরবে কালো টর্চটা মরিসনের হাতে তুলে দিল মুসা।
হাতে নিয়ে একবার ওজন পরীক্ষা করেই মাথা নাড়ল মরিসন। হু। চলো, এগোও।
কিন্তু দশ পা এগিয়েই থেমে গেল মরিসন। আছে কিনা দেখি তো? বিচ্ছটাকে বিশ্বাস নেই। টর্চের পেছনের ক্যাপ ঘুরিয়ে খুলতে শুরু করল।
দৌড় দিল মুসা। দুই লাফে এসে তার কলার চেপে ধরল মরিসন, ল্যাঙ মেরে ফেলে দিল মাটিতে। দ্রুত হাতে ক্যাপ খুলে টর্চের ভেতর থেকে বের করে আনল রুমালে বাধা পাথরের পুঁটলি।
গর্জে উঠে একটানে ছুরি বের করল মরিসন। উঠে দাঁড়িয়েছে মুসা। ছুরির চোখা ফলা তার পিঠে ঠেসে ধরে বলল ফোরম্যান, গোলমাল করলে কি করতে হবে বলে দিয়েছেন মিস্টার হুয়াঙ। জবাই করব আমি তোমাদের। নেকলেসটা কোথায়?
নেই। পাথর পড়ে ভেঙে গেছে, মিনমিন করে বলল মুসা।
চুপ! চালাকির আর জায়গা পাওনি! দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা। তোমাকে কিছু বলব না, তোমার বন্ধুদের আঙুল কাটব এক এক করে। চলো হাঁটো। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। হাঁটো, ছুরির মাথা দিয়ে মুসার পিঠে খোঁচা লাগাল মরিসন।
গুহাটায় ফিরে এল দুজনে। টর্চের আলোয় দেখা গেল তেমনি বসে আছে রবিন আর মিঙ। তার পাশে মুখ গুঁজে বসে আছে দুজন লোক।