বাড়িটাকে ভূতের বাড়ি হিসেবে বদনাম রটানোর পরামর্শ দিলেন তিনি আমাকে, কিভাবে কি করতে হবে তা-ও বুঝিয়ে দিলেন। এতে বাড়ির খরিদ্দার যাবে কমে, বাড়ি বিক্রি করতে দেরি হবে। গুপ্ত ঘরটা খোঁজার সুযোগ পাব, নেকলেসটা বের করে দিতে পারব। আমার কাছ থেকে দশ লাখ ডলারে কিনে নেবেন ওটা তিনি।
আরও কিছু চালাকি করতে বললেন তিনি। ভূতটা প্রথম দেখা যাবে পোডড়া বাড়িতে, তারপর রকি বীচের এখানে-সেখানে, সব শেষে ভারড্যান্ট ভ্যালিতে গুজব ছড়াতে হবে, যাতে ভয় পেয়ে কাজ ফেলে পালায় শ্রমিকেরা। ঋণের দায়ে শেষে। নিলামে উঠবে আঙুরের খেত আর মদের কারখানা। তখন নেকলেস বিক্রির টাকা দিয়ে সব কিনে নিতে পারব আমি।
পুরো ব্যাপারটাই খুব সহজ মনে হয়েছিল আমার কাছে। মরিসনকে নিয়ে কাজে লেগে গেলাম। প্ল্যান করলাম, কবে থেকে কিভাবে ভূত দেখানো শুরু করব। কিন্তু গোলমাল করে দিল কন্ট্রাক্টর, এক সপ্তাহ আগেই এসে বাড়ি ভাঙতে শুরু করল। সমস্ত প্ল্যান বদলে তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে হলো আমার। ছোটখাট ভুলচুক হয়ে গেল এ-কারণেই।
বাড়ি ভাঙার খবর শুনে মরিসনকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম রকি বীচে। কয়েকজন লোককে ডেকে নিয়ে গিয়ে ভূত দেখালাম। তারপর গায়েব হয়ে গেলাম দুজনে। সে-রাতেই চলে এসেছি ভারড্যান্ট ভ্যারিতে। পরদিন আবার গেলাম, আমি একা। আমার দুর্ভাগ্য, পুলিশ ঢুকতে দিল না বাড়িতে, তাহলে তোমাদের সঙ্গে দেখা হত না, আমার কণ্ঠস্বরও শুনতে না, ধরতেও পারতে না।
পারতাম, বলল কিশোর। সেদিন আপনার কথা শুনতে পেতাম না বটে, কিন্তু আজ তো পেতাম। রহস্যের সমাধান করতে আরেকটু সময় লাগত, এই আর কি। আচ্ছা, সেফ থেকে নেকলেসটা তো আপনিই সরিয়েছেন, নাকি?
প্ল্যানটা আমারই, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল টার্নার। প্রেসিং হাউসে ভূত দেখানোর বন্দোবস্ত করলাম। গুজব বেশি করে ছড়ানোর জন্যে। নেকলেসটা রবিন, মুসা আর মিকে দেখালাম, সাক্ষী রাখলাম যে সেফেই ওটা রেখেছি। এই সময় খবর এল প্রেসিং হাউসে ভূত দেখা গেছে, উত্তেজনায় ভুলে যাওয়ার ভান করে সেফ খোলা রেখেই বেরিয়ে পড়লাম। তারপর হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়ার ভান করে আবার তাড়াহুড়ো করে ফিরে এলাম। মরিসনকে দিলাম নেকলেসটা। সে আমাকে সন্দেহমুক্ত রাখার জন্যে আমার হাত পা বেঁধে রেখে গেল।
তুমি এত বড় শয়তান জানলে…ছিহ। ঘৃণায় মুখ বাঁকালেন মিস কৌন। আর দশটা চোরাচড়ের সঙ্গে কোন পার্থক্য দেখছি না তোমার। নেকলেস জাহান্নামে। যাক, ছেলেগুলোর কি হলো? ওদেরকে ফেরত পেলেই আমি খুশি। কোথায় ওরা?
মাথা নাড়ল টার্নার। জানি না। সত্যি বলছি।
তোমার সত্যি আর কে বিশ্বাস করতে যাচ্ছে, তীব্র কণ্ঠে বললেন মিস কৌন।
কিশোরের মনে হলো, সত্যি কথাই বলছে টার্নার। বলল, আমার মনে হয়, ওরা মরিসনকে সন্দেহ করেছে। হয়তো অনুসরণও করেছে। তাই কোথাও আটকে রেখেছে মরিসন।
মাথা দোলালেন মিস্টার মিলফোর্ড। হতে পারে। আজ সারাদিনে মরিসনেরও পাত্তা নেই। কোথায় সে?
ছেলেগুলোকে না হয় লুকিয়ে রাখল, প্রতিবাদ করল টার্নার, কিন্তু ঘোড়া? তিন-তিনটে ঘোড়া লুকাবে কোথায়? উপত্যকা চষে ফেলেছে লোকেরা, তাদের চোখে পড়তই।
কোথায় লুকিয়েছে সেটা আমরা কি জানি? ঝাঁঝাল কণ্ঠে বললেন মিস কৌন। চোরে চোরে খালাত ভাই, সেটা তোমার জানার কথা।
কেউ যদি খালি আশ্চর্যবোধক চিহ্ন খুঁজে পেত, আফসোস করল কিশোর, তাহলেই খুঁজে বের করে ফেলতাম ওদের। কিন্তু চিহ্ন রেখে যেতে পেরেছে কিনা, কে জানে। থাকলে চোখে পড়বে না কেন?
ঘরে এসে ঢুকল সুই। শেরিফ এসেছেন, ম্যাডাম। বললেন খবর আছে।
জলদি নিয়ে এসো, বললেন মিস কৌন।
ঘরে ঢুকলেন শেরিফ। সঙ্গে একটা ছেলে।
কি খবর, শেরিফ? তর সইছে না আর মিস কৌনের। ওদের খোঁজ পাওয়া গেল?
না, ম্যাডাম, মাথা নাড়ল শেরিফ। তবে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দেখা গেছে। এই ছেলেটা দেখেছে।
ময়লা পোশাক পরা ছেলেটা এগিয়ে এল। হ্যাঁ, ম্যাডাম। পাখির ডিম খুঁজতে বেরিয়েছিলাম, পিপাসা পেল খুব। কয়েকটা পিপা দেখে পানি আছে কিনা উঁকি দিলাম, দেখি চিহ্ন।
কোথায়? আগ্রহে সামনে ঝুঁকে এসেছে কিশোর।
মরুভূমির ধারে, পথে।
মরুভূমিতে, পিপার ভেতরে, বিড়বিড় করলেন মিস্টার মিলফোর্ড। নাহ, বিশেষ সুবিধে হবে না।
হতেও পারে, উঠে দাঁড়াল কিশোর। চলুন দেখে আসি।
মিস কৌনও উঠলেন। আমিও যাব।
আমিও আসি, বলল টার্নার।
না, ধমকে উঠলেন মিস কৌন, তোমার যেতে হবে না।
তাড়াতাড়ি এসে শেরিফের পুরানো সিডানে উঠে গাদাগাদি হয়ে বসল ওরা।
বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে একটা নির্জন জায়গায় দুটো পিপা পড়ে থাকতে দেখা গেল হেডলাইটের আলোয়।
ওই যে, ওই দুটোই, হাত তুলে দেখিয়ে বলল ছেলেটা।
কাছে এসে থামল গাড়ি।
পিপাগুলো ভালমত দেখে বললেন মিস কৌন, পুরানো বাতিল জিনিস। এর মধ্যে আঙুর বা রস কোনটাই রাখা যাবে না। কিন্তু এখানে এনে ফেলল কে?
পিপার ভেতরে ঝুঁকে টর্চের আলো ফেলল কিশোর। একটা পিপার তলায় সবুজ চক দিয়ে আঁকা রয়েছে বড় একটা আশ্চর্যবোধক। হুম, রবিন ছিল এর ভেতরে।
বুঝেছি! চেঁচিয়ে উঠলেন হঠাৎ মিস কৌন। এখানে পুরানো পিপা এতই সাধারণ জিনিস, কেউই সন্দেহ করেনি। কল্পনাও করেনি কেউ ওগুলোর ভেতরে ভরে মানুষ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এগুলোতে করেই ছেলেগুলোকে পাচার করেছে। মরিসন। কিন্তু আছে তো দুটো। আরেকজনকে কি করে নিল?