মুসা ভাবছে, মিস্টার হুয়াঙকে মিথ্যে কথা বলেছে সে, এর পরিণতি কি হবে?
জলদি করো, মরিসনকে তাড়া দিলেন মিস্টার হুয়াঙ, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ওদের বেঁধে নিই… বাধা পেয়ে আবার থেমে গেল মরিসন।
ধমকে উঠলেন মিস্টার হুয়াঙ, নাআ! তার দরকার হবে না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যাবে ওরা। আরামে যাবে। মিঙের দিকে ফিরলেন। খুদে ড্রাগন, তাকাও তো আমার দিকে।
মিস্টার হুয়াঙের চোখের দিকে তাকাল মিঙ, আটকে গেল দৃষ্টি, চেষ্টা করেও আর সরাতে পারল না।
একঘেয়ে কণ্ঠে বলে চললেন মিস্টার হুয়াঙ, খুদে ড্রাগন, তুমি ক্লান্ত, খুর ক্লান্ত। ঘুম পেয়েছে তোমার, অনেক ঘুম। কোমল হাতে তোমার চোখে পরশ। বুলাচ্ছে ঘুম, ঘুমের রাজ্যে যাওয়ার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছ তুমি, তোমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
অবাক হয়ে দেখল দুই গোয়েন্দা, সত্যিই চোখ বন্ধ হয়ে আসছে মিঙের।
ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে মিঙ। জোর করে টেনে খুলল চোখের পাতা।
আবার শুরু হলো একঘেয়ে কণ্ঠ, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে! বাধা দিতে পারছ না। তুমি, আমার ইচ্ছেই তোমার ইচ্ছে, চোখের পাতা ভারি আসছে তোমার, বন্ধ করো, বন্ধ…বন্ধ…বন্ধ…
পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল মিঙের চোখের পাতা। খুলতে পারছে না।
মোলায়েম একঘেয়ে কণ্ঠ থামল না মিস্টার হুয়াঙের, ঘুম আসছে তোমার চোখ জুড়ে। গভীর ঘুম। অন্ধকারের চাদর গ্রাস করছে তোমাকে। ঘুমের দরিয়ায় তলিয়ে যাচ্ছ তুমি। তোমার ইচ্ছাশক্তিকে দাবিয়ে দিয়েছে ঘুম। ঘুমিয়ে পড়ছ তুমি। ঘুমিয়ে থাকবে, আমি না বললে জাগবে না। খুদে ড্রাগন, শান্তিতে ঘুমাও এখন, ঘুমাও…ঘুমাও…ঘুমাও…ঘুমাও…
হঠাৎ টলে পড়ে যেতে শুরু করল মিঙের শরীর। লাফিয়ে এসে ধরে ফেলল। তিন চাকর। একটা সোফায় শুইয়ে দিল।
খুদে ব্যাঘ্রশাবক, এবার তুমি তাকাও আমার দিকে, বললেন মিস্টার হুয়াঙ।
দুরুদুরু করছে মুসার বুক। না তাকিয়ে পারল না। একবার চেয়ে আর দৃষ্টিও সরাতে পারল না কোনদিকে। জোর করে ঘুম ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করল না মুসা, কেমন একটু যেন মজা পাচ্ছে, দেখি না কি হয় ভাব। অবশ করে ফেলছে যেন তাকে মিস্টার হুয়াঙের একঘেয়ে মোলায়েম কণ্ঠ। এক সময় সে-ও টলে পড়ে যেতে শুরু করল, তাকেও ধরে শুইয়ে দিল চাকরেরা।
রবিন বুঝতে পারছে, মিঙ আর মুসাকে সম্মোহন করেছেন মিস্টার হুয়াঙ। সে বইয়ে পড়েছে, রোগীকে সম্মোহন করে ঘুম পাড়িয়ে অপারেশন করা সম্ভব, কোন ব্যথা নাকি অনুভব করে না রোগী। মুসার মত ভয় পেল না সে। তার পালা এল।
শক্তহৃদয়, তাকাও আমার দিকে, বললেন মিস্টার হুয়াঙ। তোমার ঘুম পেয়েছে, তোমার বন্ধুদের মতই। ক্লান্ত তুমি, ভীষণ ক্লান্ত। চোখ বন্ধ করো…
চোখ বন্ধ করে ফেলল রবিন।
মিস্টার হুয়াঙের একঘেয়ে কণ্ঠ চলল থেমে থেমে।
পড়ে যেতে শুরু করল রবিন, তাকে ধরে ফেলল চাকরেরা।
মরিসনকে বললেন মিস্টার হুয়াঙ, কোন রকম গোলমাল করতে পারবে না। ওরা। জায়গামত পৌঁছে ডাক দিও, জেগে উঠবে। নেকলেসটা নিয়ে ছেড়ে দেবে। আর যদি…
অপেক্ষা করে রইল মরিসন।
আর যদি, বললেন মিস্টার হুয়াঙ, গোলমাল কিংবা চালাকি করে, গলা কেটে ফেলে দিও কোথাও।
পনেরো
আশ্চর্যবোধক চিহ্ন কেউ খুঁজে পায়নি? বিস্মিতই মনে হচ্ছে কিশোরকে। এই খানিক আগে ভারড্যান্ট ভ্যালিতে পৌঁছেছে সে আর রবিনের বাবা।
জোরে জোরে মাথা নাড়লেন মিসেস দিনারা কৌন। না। পুরো উপত্যকায় খোঁজ করিয়েছি আমি। গাঁয়ে যত লোক আছে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, বাচ্চারাও বাদ যায়নি।
আশ্চর্যবোধক নিয়ে এত তোড়জোড় কেন? ভুরু নাচাল ডলফ টার্নার। মিসেস কৌনের মতই তাকেও খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
ব্যাখ্যা করে বলল কিশোর।
মরুভূমিতে চিহ্ন দেবে কোথায়? বলল টার্নার। আমি শিওর, ওদিকেই গেছে ওরা। কাল ভোরেই প্লেন নিয়ে খুঁজতে পাঠাব। মরুভূমিতেই কোথাও পথ হারিয়েছে ওরা। খানিতে আটকা পড়লে বাইরে ওদের ঘোড়াগুলো অন্তত খুঁজে পাওয়া যেত।
তা ঠিক, সায় দিলেন মিস্টার মিলফোর্ড, বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর। হ্যাঁ, মিস কৌন, কিশোর আপনাকে কিছু বলতে চায়।
অপেক্ষা করে রইলেন মিস কৌন আর টার্নার। মস্ত হলঘরে বসেছে ওরা, চারজনই শুধু, অন্য কেউ নেই।
মিস কৌন, নাটকীয় ভঙ্গিতে শুরু করল কিশোর, কথার গুরুত্ব বোঝানোর জন্যে বড়দের মত গম্ভীর করে তুলল চেহারাকে, সবুজ ভূতের ব্যাপার নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি আমি। আমার দুই বন্ধু ওটাকে দেখেছে, চিৎকার শুনেছে। তদন্ত করে আমি জেনেছি, চিৎকারটা বাড়ির ভেতর থেকে আসেনি। খুব মজবুত বাড়ি, নিখুঁত করে তেরি হয়েছিল, প্রায় সাউন্ডপ্রুফ, ভেতরের শব্দ বাইরে আসতে পারে না ভাল মত।
একটা কথা আমাকে বলুন, ভূত যদি থেকেই থাকে, আর থাকে বাড়ির ভেতরে, শুধু চিৎকার করার জন্যে বাইরে আসবে কেন? আসেওনি। চিৎকারটা করেছিল আসলে মানুষে, আমাদেরই মত জলজ্যান্ত মানুষ। আরেকটা ব্যাপার, সে রাতে যে কজন দেখতে গিয়েছিল, তারা কেউই শিওর নয়, দলে কতজন ছিল। কেউ বলছে ছয়, কেউ বলছে সাতজন। সবার কথাই ঠিক।
চিৎকারটা ড্রাইভওয়ে থেকে শুনেছে ছয়জন, আর ঝোঁপের ভেতরে লুকিয়ে থেকে শুনেছে একজন, সে-ই চিৎকার করেছিল। তারপর কোন এক ফাঁকে বেরিয়ে এসে যোগ দিয়েছে দলের সঙ্গে।