ফন্দি আর কি করব? হতাশ ভঙ্গিতে দুহাত নাড়ল মুসা। মিস্টার হুয়াঙের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া মুশকিল।
আমারও তাই ধারণা, মাথা দোলাল মিঙ। বোঝাই যাচ্ছে, অনেক বড়লোক তিনি, প্রচণ্ড ক্ষমতা। একটাই উপায় আছে আমাদের, নেকলেসটা তাঁকে দিয়ে দেয়া।
এত সহজেই দিয়ে দিতে বলছ? ভুরু কুঁচকাল মুসা। ভাবছে, কি কষ্ট করেই না লুকিয়েছে নেকলেসটা। এত কিছুর পর, মিস্টার হুয়াঙকে দিয়ে দিতে হবে?
মুফতে তো দিচ্ছি না, মুসার হতাশা দূর করার চেষ্টা করল মিঙ।
মিস্টার হুয়াঙ কথা দিয়েছেন, আমাদেরকে মুক্তি দেবেন। তার কথা বিশ্বাস করি। তাছাড়া দাদীমার কষ্টও কমবে, ধীরেসুস্থে ঋণ শোধ করতে পারবে! এর বেশি আর কি চাই আমরা?
তা-ও বটে। আচ্ছা, সত্যি কি বিশ্বাস হয়, মুক্তো আয়ু বাড়াতে পারে? আমার কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে।
আমি অবিশ্বাস করছি না। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, কিন্তু সত্যি হতে পারে। চীনের ওষুধ-বিদ্যা অনেক পুরানো। ইদানীং পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, বিশেষ এক ধরনের ব্যাঙের চামড়ায় মূল্যবান ওষুধ হয়, অথচ শত শত বছর আগেই এটা জানা ছিল চীনের কবিরাজদের। বাঘের গোঁফ আর দানবের হাড়ের গুঁড়ো অনেক জটিল রোগের মহৌষধ, এটা অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করে চীনারা।
আমিও পড়েছি এ-ব্যাপারে, বলল রবিন। ওই দানবরা হলো প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথ, সাইবেরিয়ার দাঁতাল বাঘ আর কিছু প্রকাণ্ড প্রাগৈতিহাসিক জন্তু-জানোয়ার।
এখন কথা হলো, ওসবে যদি রোগ সারে, ভূতুড়ে মুক্তোই বা কেন আয়ু বাড়াবে না? প্রশ্ন রাখল মিঙ।
মিস্টার হুয়াঙ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন এটা, আর শুধু বিশ্বাসই অনেক সময় জটিল রোগ সারিয়ে দেয়, এটা তো এখন বৈজ্ঞানিক সত্য।
আচ্ছা, সবুজ ভূতের ব্যাপারে সত্যি সব জানেন মিস্টার হুয়াঙ? বলল রবিন।একটা ব্যাপার আশ্চর্য লাগছে। প্রায় একই সময়ে একই জায়গায় উদয় হলো সবুজ ভূত আর ভূতুড়ে নেকলেস!
ওসব ভেবে লাভ নেই, বলল মিঙ। নেকলেসটা দিয়ে দিচ্ছি এ ব্যাপারে তাহলে একমত আমরা?
মাথা কাত করল মুসা আর রবিন।
গলা চড়িয়ে ডাকল মিঙ, মিস্টার হুয়াঙ, সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
এক জায়গায় কাপড় সরিয়ে বেরিয়ে এলেন মিস্টার হুয়াঙ, সঙ্গে তিনজন। চাকর। কাপড়ের পেছনে ওখানে চার-চারজন মানুষের লুকানোর জায়গা থাকতে পারে, বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না।
কি সিদ্ধান্ত নিলে, খুদে ড্রাগন? জানতে চাইলেন মিস্টার হুয়াঙ, হয়তো আড়ালে থেকে সবই শুনেছেন, কিন্তু সেটা প্রকাশ করলেন না।
নেকলেসটা দেব।
কোথায় আছে ওটা?
খনিতে, জবাব দিল মুসা।
মরিসনকে ডেকে আনালেন মিস্টার হুয়াঙ। ও গিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। ততক্ষণে তোমরা এখানে আমার মেহমান। নেকলেসটা পেলে তোমাদের ছেড়ে দেব। বাধার আর দরকার হবে না। ফিরে গিয়ে পুলিশকে হয়তো বলবে আমার কথা, কিন্তু লাভ হবে না। আমাকে খুঁজে পাবে না ওরা, হাওয়ায় মিলিয়ে যাব। আমেরিকার এই বিশাল চায়না টাউনেও আমি একটা বিরাট রহস্য, এখানকার যে কোন চীনাকে জিজ্ঞেস করলেই বুঝবে।
মরিসন আনতে পারবে না খনি থেকে, বলল মুসা। ও খুব বেশি মোটা। সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকবেই না তার শরীর, বোতলের গলায় ছিপির মত আটকে যাবে, ফোরম্যানের দিকে চেয়ে মুচকি হাসার লোভ সংবরণ করতে পারল না সে।
রোগাটে লোক জোগাড় করতে পারব… বাধা পেয়ে থেমে গেল মরিসন। হাত তালি দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলেন মিস্টার হুয়াঙ।
নাআ! তোমাকে আনতে হবে। আর কাউকে বিশ্বাস করি না। যেভাবে পারো ঢুকবে।
খুদে ব্যাঘশাবক, মুসার দিকে ফিরে বললেন তিনি, সুড়ঙ্গটা কতখানি সরু? সত্যিই ঢুকতে পারবে না হোঁতকাটা?
না, স্যার, সত্যি পারবে না, বলল মুসা।
নেকলেসটা টর্চের মধ্যে?
হ্যাঁ, ঢোক গিলল মুসা।
টর্চটা কোথায়?
পাথরের আড়ালে।
কোন্ জায়গায়?
কোথায় বলতে পারব না, তবে খুঁজে বের করতে পারব। ম্যাপটাপ কিছু এঁকে রাখিনি।
হুঁ, ভাবলেন মিস্টার হুয়াঙ। মরিসনের দিকে ফিরে বললেন, সহজ হয়ে গেল। ওদেরকে নিয়ে যাও। মুসা টর্চটা বের করে দেবে।
কিন্তু তাতে বিপদ আছে, বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মরিসনের কপালে। ওদের খোঁজা হচ্ছে, যদি দেখে ফেলে…
ঝুঁকি নিতেই হবে। আগে সাবধান থাকোনি, তাই বিপদে পড়েছ। কিভাবে সামলাবে সেটা তোমার ব্যাপার। একটা কথা, ছেলেদের কোন ক্ষতি করা চলবে না।
কিন্তু ফিরে গিয়ে সব জানিয়ে দেবে ওরা।
জানাক। আমি তোমাকে লক্ষ করব। নিরাপদে বের করে দেব দেশের বাইরে। তোমার সহকর্মীরাও গায়েব হয়ে যাবে, পুলিশ খুঁজে পাবে না। আমাকে তো পাবেই না। কাজেই ওরা বললেও কিছু এসে যায় না। বুঝেছ?
জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে মরিসন। হ্যাঁ, স্যার, গলা কাঁপছে। আপনার কথামতই কাজ হবে। কিন্তু ছেলেরা যদি আমার সঙ্গে বেঈমানী করে?
হাসলেন মিস্টার হুয়াঙ। সেক্ষেত্রে আমার আর কোন দায়িত্ব থাকবে না। ওদেরকে যা খুশি করতে পারো। তোমার নিরাপত্তার পথ তুমি বেছে নেবে। তবে আমার মনে হয় না ওরা কোন চালাকি করবে। প্রাণের মায়া কার না আছে? এই বুড়ো বয়েসেও আমার বেঁচে থাকার সাধ, আর ওরা তো শিশু।
মিস্টার হুয়াঙের কণ্ঠে কিছু একটা রয়েছে, শিউরে উঠল রবিন। মনে মনে সে। আশা করল, সত্যি কথাই বলেছে মুসা, নেকলেসটা খুঁজে বের করতে পারবে।