তোমার চাওয়া না চাওয়ায় কিছুই এসে যায় না, ধমকে উঠলেন মিস্টার হুয়াঙ। যা হুকুম করব, পালন করবে। শোনো, আজ রাতে ওরা যদি নেকলেসটা তোমার হাতে তুলে দেয়, কোন ক্ষতি করবে না ওদের। বেঁধে রাখতে পারো, তবে খুব শক্ত করে নয়। এমনভাবে বাধবে, যাতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নিজেরাই বাঁধনমুক্ত হতে পারে। ভালমত শুনে রাখো, ওরা একটা আঘাত পেলে, তোমাকে একশোটা আঘাত করা হবে। আমার আদেশ অমান্য করলে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হবে তোমাকে।
কয়েকবার ঢোক গিলল মরিসন, তারপর বলল, ভারড্যান্ট ভ্যালিতে লোক গিজগিজ করছে, গরুখোঁজা খুঁজছে। অনেক কষ্টে ওদের নজর হ্যাঁশনাইফ ক্যানিয়ন থেকে অন্য দিকে সরাতে পেরেছি। ছেলেগুলোকে আবার ওখানে নিয়ে গেলে…
ওখানে ওদের কে নিতে বলেছে তোমাকে? নেকলেসটা কোথায় আছে জেনে নিলেই তো হয়। তারপর তোমার সুবিধেমত জায়গায় নিয়ে গিয়ে বেঁধে রাখো। এমন কোথাও যেখান থেকে ওদের বাড়ি ফেরা সহজ হয়।
উঠলেন মিস্টার হুয়াঙ। ঢোলা আলখেল্লার নিচটা গাউনের মত ছড়িয়ে রইল। বসা অবস্থায় বোঝা যাচ্ছিল না, কিন্তু এখন দেখা গেল, লম্বা নন তিনি, বেঁটেই বলা চলে, পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি।
এসো, মরিসনকে ডাকলেন তিনি। ওরা এখানেই থাকুক। নিজেদের মাঝে আলোচনা করে ঠিক করুক কি করবে। বুদ্ধি আছে ওদের, আমার ধারণা ঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।
মিস্টার হুয়াঙের পেছনে বেরিয়ে গেল মরিসন।
চোদ্দ
আস্তে কথা বলবে, ফিসফিস করে বলল মিঙ। মুসা, নেকলেসটা কোথায়, উচ্চারণও করবে না। লুকানো মাইক্রোফোন নিশ্চয়ই আছে। অন্য কথা বলো, সময় নষ্ট করো।
নেকলেসটা লুকিয়ে কাজের কাজ করেছি, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল মুসা, অন্তত সময় তো পাওয়া গেল। নইলে তো গেছিলাম।…তোমরা ধরা পড়লে কিভাবে?
লুকিয়ে ছিল ব্যাটারা, বলল মিঙ। আমাকে বেরোতে দেখেছে। আমি রবিনকে টর্চ জ্বেলে সঙ্কেত দিয়েছি, তা-ও দেখেছে। রবিন বেরোতেই এসে আমাকে আর রবিনকে জাপটে ধরেছে।
এবং গাধামী করেছে, রবিন বলল। অপেক্ষা করা উচিত ছিল ওদের। মুসা বেরোলে তারপর ধরা উচিত ছিল।
হুঁ, মাথা দোলাল মুসা। মিঙ চেঁচিয়ে হুঁশিয়ার করল। বুঝলাম, কিছু হয়েছে। তারপর টর্চ জ্বালল তিনবার, ওতেও গোলমাল লক্ষ করলাম। আর কি বেরোই! হাসল সে। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না, আমরা কোথায় আছি, সেটা জানল কি করে?
ঘোড়া নিয়ে এসে পাহাড়ে চড়েছিল মরিসন, বলল মিঙ। আমাদেরকে হ্যাঁশনাইফ ক্যানিয়ন পেরিয়ে যেতে দেখেছে। অনুমান করে নিয়েছে আমরা কি করতে যাচ্ছি। ওর জানা আছে গলাটার কথা। বিরক্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল সে।
আমি ভেবেছি আমি খুব চালাক। অথচ সোজা এসে মরিসনের খপ্পরে পড়লাম।
আমাদেরকে ক্যানিয়ন পেরিয়ে যেতে না দেখলে ধরতে পারত না, মুসা বলল, সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তোমার আর কি করার ছিল? যাকগে, যা হবার হয়েছে। একটা ব্যাপারে তো শিওর হলে, মরিসন বেঈমান। মেশিনপত্র সে-ই ভেঙেছে, ইচ্ছে করে, মদের পিপা ফুটো করে দিয়েছে। সব তার শয়তানী।
হ্যাঁ, বলল মিঙ। ও আর ওর সাঙ্গোপাঙ্গরাই করেছে। কিন্তু কেন? এসব তো শুরু করেছে বছর খানেক আগে থেকে, ভূত দেখা যায়নি তখনও। ভারড্যান্ট ভ্যালিতে গোস্ট পার্লের কথা ওখানকার কেউ জানত না তখন।
নিশ্চয়ই আছে কোন কারণ, বলল রবিন। আমাদেরকে কিভাবে এনেছে, শোনো। পিপায় ভরে ট্রাকে করে এনেছে। একটা জায়গায় এসে থামল ট্রাক, মরিসনের সঙ্গে কথা বলল কয়েকজন লোক। কথাবার্তায়ই বুঝলাম, তাদেরকে পাঠিয়েছেন মিঙের দাদীমা, আমাদের খুঁজতে। ওরা নিশ্চয়ই কল্পনাও করেনি, ওদের কয়েক হাতের মধ্যেই রয়েছি আমরা।
চেঁচালে না কেন? বলল মুসা।
মুখ বেঁধে রেখেছিল, বলল মিঙ। চালাক আছে মরিসন। মদের পিপায় মানুষ রয়েছে কে ভাববে? তাছাড়া তাকে সন্দেহও করে না কেউ। সে বলল, স্যান। ফ্রানসিসকোর দিকে যাচ্ছে, আমাদের খুঁজতে। আমাদের না নিয়ে ফিরবে না। কাজেই তার অনুপস্থিতিতে সন্দেহ করবে না কেউ।
হুঁ, ব্যাটা চালাকই, স্বীকার করল মুসা।
স্যান ফ্রানসিসকোর পথে কয়েক মাইল চলল ট্রাক, আবার বলল মিঙ, তারপর থামল। মদের পিপা থেকে বের করে একটা স্টেশন ওয়াগনে তোলা হলো আমাদের। পেছনে শুইয়ে দিয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো। আমার ধারণা, হ্যাঁশনাইফ ক্যানিয়নের দিকে যে আমরা গেছি তার সব চিহ্ন মুছে দিয়েছে মরিসন। ঘোড়াগুলোও নিশ্চয়ই সরিয়ে ফেলেছে ভেবেছিলাম, তোমাকে ধরতে পারবে না, কিন্তু ধরে ফেলল। নেকলেসটা ছিনিয়ে নেবে এখন!
তা পারছে না। নেকলেস আমি দেব না, দৃঢ় কণ্ঠে বলল মুসা।
না দিয়ে পারবে না।
সেটা দেখা যাবে, নিজের দুই হাতের দিকে তাকাল মুসা। আপাতত হাতমুখ ধোয়ার পানি যদি পেতাম, আর কিছু খাবার। পেট জ্বলছে। গুহায় বসে কি খেয়েছি না খেয়েছি, কখন হজম হয়ে গেছে। আর যা কষ্ট করেছি বেরোতে! ভাগ্যিস রবিন চিহ্ন দিয়ে রেখেছিল, নইলে বেরোতেই পারতাম না।
ফিসফিস করে বলল রবিন, যে দুটো পিপায় ভরা হয়েছিল আমাদেরকে, এক সুযোগে সে দুটোতেও চিহ্ন এঁকে দিয়েছি।
তাতে কি? নিচু গলায় বলল মুসা। কিছু বুঝবে না কেউ। কিশোরও বুঝবে কিনা সন্দেহ।
ফিসফিসানি বাদ দাও, বলল মিঙ। স্বাভাবিক গলায় কথা বলো, নইলে সন্দেহ করবে আমরা ফন্দি আঁটছি।