যারা যাচ্ছে, তাদেরকে বলে দিন আশ্চর্যবোধক চিহ্ন খুঁজতে।
কি খুঁজতে?
আশ্চর্যবোধক চিহ্ন। খনির দেয়ালে আঁকা থাকতে পারে। পেলেই যেন আপনাকে জানায়।
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না…
ফোনে ব্যাখ্যা করতে পারব না, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। আমি আসছি। এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠাবেন, প্লীজ? সঙ্গে রবিনের বাবাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।
হ্যাঁ হ্যাঁ, পাঠাব। ছেলেগুলোকে এখন ভালয় ভালয় ফিরে পেলে বাঁচি।
ধন্যবাদ জানিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর। তারপর রবিনের বাবাকে ফোন করল। বাড়িতেই পাওয়া গেল তাঁকে। সব শুনে কিশোরের সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। বললেন, পত্রিকার একটা জরুরী কাজে বেরোচ্ছেন, এয়ারপোর্টে দেখা করবেন।
দ্রুত তৈরি হয়ে নিল কিশোর। বোরিসকে এসে জানাল মুসা আর রবিনের নিখোঁজ হওয়ার খবর। স্যালভিজ ইয়ার্ডের ভার তার ওপর দিয়ে রওনা হলো বিমানবন্দরে। বোরিসই ছোট ট্রাকটা নিয়ে তাকে প্লেনে তুলে দিয়ে আসতে চলল।
গাড়িতে বসে ভাবছে কিশোর। মিস দিনারা কৌন যত সহজ ভাবছেন, তত সহজে রবিন, মুসা আর মিঙকে পাওয়া যাবে বলে মনে হলো না তার।
কিশোরের অনুমান মিথ্যে নয়।
মদের বড় বড় দুটো জালায় ভরা হলো রবিন আর মিঙকে। ট্রাকে তুলে নিয়ে চলল মরিসন আর দলের লোকেরা। কোথায়, জানে না দুজনে।
গলার এপাশে অন্ধকার গুহায় থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ মুসা। বুঝতে পারছে, রবিন আর মিঙকে যারাই বন্দি করে থাকুক, তারা বড় মানুষ, ফাটলে ঢুকতে পারবে না, নইলে এতক্ষণে ঢুকে পড়ত। সে এখন কি করবে?
এখানে থেকে লাভ নেই। আবার হ্যাঁশনাইফ ক্যানিয়নে ফিরে গিয়ে কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে সকাল পর্যন্ত। তাদের খুঁজতে লোক নিশ্চয়ই পাঠাবেন মিস কৌন। তখন রবিন আর মিঙকে মুক্ত করার চেষ্টা করবে।
নেকলেস ভরা টর্চটা কোমরের বেল্টেই গোঁজা রয়েছে। তাতে হাত বোলাল মুসা। মনে মনে আল্লাহকে ডাকল: যেন হাতের টর্চটার ব্যাটারি না ফুরোয়, অন্তত সে না বেরোনোর আগে।
রবিনের কথা এইবার ফলল, কাজে লাগল চিহ্ন। সবুজ চকে আঁকা চিহ্ন ধরে ধরে ফিরে চলল সে। সত্যিই তীর আর আশ্চর্যবোধকের গোলকধাঁধা সৃষ্টি করে রেখেছে রবিন, মুসাও একবার ভুল করে বসল। ভুল সুড়ঙ্গ ধরে চলে এল সেই গুহায়, যেটাতে গাধা মরেছে।
শাদা হাড়গুলোর ওপর একবার আলো ফেলেই ফিরল মুসা। পা বাড়াতে গিয়েই থমকে দাঁড়াল। আচ্ছা, নেকলেসটা সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে কেন? যদি ধরা পড়ে যায়? তার চেয়ে লুকিয়ে রাখা কি ভাল নয়? ধরে ফেললেও হারটার লোভে ওদেরকে। বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য হবে মরিসন।
হ্যাঁ, ভাল কথা মনে হয়েছে, তাই করবে সে। কিন্তু লুকাবে কোথায়? কোন পাথরের তলায়? না, সেটা বোধহয় ঠিক হবে না। সবগুলো পাথরই দেখতে প্রায় এক রকম। নিশানা ভুল করে ফেললে শেষে আর নিজেই খুঁজে বের করতে পারব না। এমন কোথাও রাখা দরকার, যেখানে রাখলে ভুল করবে না, আবার, শত্রুরাও খুঁজে পাবে না সহজে।
কোথায় তেমন জায়গা? গাধার হাড়গুলোর ওপর আলো ফেলল সে আবার। ঘুরিয়ে এনে স্থির করল খুলিটার ওপর। হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা। খুঁজে পেতে তার কোন অসুবিধে হবে না, অথচ শত্রুরা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করবে না। is টর্চ থেকে খুলে হারটা কাগজের মোড়কমুক্ত করতে সময় লাগল না। খুলিটা উল্টে একটা খোড়লে নেকলেস ভরে আবার আগের মত করে ফেলে রাখল।
সঠিক সুড়ঙ্গটা খুঁজে বের করায় মন দিল সে। এই সময় আরেকটা ভাবনা খেলে গেল মনে। খালি টর্চটা সঙ্গে বয়ে বেড়ানোর কোন কারণ নেই। তার চেয়ে…কথাটা কেন তার মনে এল, নিজেই বলতে পারবে না। কয়েকটা পাথর ভরে কোথাও লুকিয়ে রাখবে টর্চটা, সময়ে কাজে লেগেও যেতে পারে।
পকেট থেকে রুমাল বের করে কয়েকটা পাথর রেখে পোঁটলা করে ঠেসে ভরল টর্চের ভেতর। পেছনের ক্যাপটা আবার লাগিয়ে একটা পাথরের আড়ালে রেখে দিল টর্চটা। পাথরটার কয়েক ফুট দূরে ছোট ছোট পাথর দিয়ে একটা স্তূপ তৈরি করল, নিশানা। দরকার লাগলে এসে খুঁজে বের করে নিতে পারবে আবার টর্চটা।
সুড়ঙ্গ ধরে আবার চলতে শুরু করল মুসা। এসে পড়ল সেই সঙ্কীর্ণ জায়গাটায়। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলল। একটা জায়গায় এসে শুয়ে পড়ে ক্রল করে এগোতে হলো।
বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে রয়েছে পাহাড়ের তলায়। খালি হয়ে আসছে সেটা জানান দিতে শুরু করেছে পাকস্থলী। এই অন্ধকারও অসুহ্য হয়ে উঠেছে। আরেকবার প্রার্থনা করল সে, যেন টর্চের ব্যাটারি ফুরিয়ে না যায়। তাড়াতাড়িও করতে পারছে না। জানে, যে অবস্থায় রয়েছে, তাড়াহুড়ো করলে, কিংবা মাথা গরম করলে, আরও বেশি বিপদে পড়ে যেতে পারে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ধীরেসুস্থে কাজ করাই এখন বাঁচার একমাত্র উপায়।
টর্চ হাতে ক্রল করতে অসুবিধে হচ্ছে। বেল্টের পাশে জ্বলন্ত অবস্থায় ওটা খুঁজে রাখল সে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে চলল।
হঠাৎ খটাস করে তার মাথার সামনে পড়ল একটা পাথর, ছোট। চমকে উঠল সে। ভয়ে ভয়ে তাকাল মাথার ওপর নেমে আসা ছাতের দিকে। ধসে পড়ছে না তো? এখানে ছাত ধসে পড়ার মানে জ্যান্ত কবর হয়ে যাওয়া। পেটের তলায়। মাটিতে কম্পন অনুভূত হলো। দম বন্ধ করে পড়ে রইল সে, বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে।