গাধার হাড়, মিঙ বলল। মাল বওয়ার জন্যে নিয়ে আসা হত। হয়তো ধস নেমে পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বেরোতে আর পারেনি অসহায় জানোয়ারটা। লোকটার কি হয়েছিল কে জানে।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল রবিনের। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল হয়ে উঠল।
আবার আগের জায়গায় ফিরে এল ওরা। এবার সঠিক পথ বেছে নিল মিঙ। এগিয়ে চলল। আরও অনেক সুড়ঙ্গ উপসুড়ঙ্গ পেরিয়ে একটা জায়গায় এসে থামল মিঙ। তার গায়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল রবিন। কি হলো?
গলা, জানাল মিঙ।
গলা? মুসা অবাক। কিসের গলা?
পাথরের মাঝের চিড়, খুব সরু আর রুক্ষ। প্রাকৃতিক। খনি আর গুহার সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়েছে।
ফাটলের মুখে আলো ফেলল মিঙ। ঠিকই বলেছে, খুবই সরু। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে ওর মধ্যে কোনমতে, কিন্তু সামনা-সামনি ঢুকতে পারবে না, পাশ থেকে ঢুকতে হবে। এটাই।
এর ভেতর দিয়ে যাওয়া যাবে? বিশ্বাস করতে পারছে না রবিন। শিওর? ওই সরু ফাটলে ঢোকার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে নেই তার।
শিওর, বলল মিঙ। আগেও গিয়েছি। মুখের কাছে এসে দেখো। বাতাস লাগছে না? বাইরে থেকে আসছে।
পরীক্ষা করে দেখল মুসা আর রবিন। ঠিকই। গালে ঝিরঝিরে বাতাসের স্পর্শ অনুভব করছে।
ওর মধ্য দিয়েই যেতে হবে আমাদের, আবার বলল মিঙ। আর কোন পথ নেই। আমরা এখনও গায়ে গতরে ছোট, তাই পারব। বড় কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আগে যাচ্ছি। তোমরা দাঁড়াও। ওপাশে গিয়ে তিনবার টর্চ জ্বেলে সঙ্কেত দেব, তারপর তোমরা আসবে। রবিন আসবে আগে। তারপর আবার তিনবার টর্চ জ্বাললে। মুসা আসবে। ঠিক আছে?
মাথা কাত করল দুই গোয়েন্দা।
ঢুকে গেল মিঙ। ডান হাতে টর্চ। খুব সাবধানে এক পা এক পা করে পাশে হেঁটে চলল। সামান্যতম বাড়তি নড়াচড়া করল না, কোনভাবে যদি কোন জায়গা থেকে এখন পাথর ধসে পড়ে, আর বেরোতে হবে না কোনদিন। ভয়ংকর পরিস্থিতি।
রবিনের মুখ কালো। মুসার বুক দুরদুর করছে। বার বার আলো ফেলে দেখছে। নিজের শরীর, তাকাচ্ছে সরু ফাটলটার দিকে, অনুমান করতে চাইছে, ফাটলে তার শরীর ঢুকবে কিনা। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলল, আর কখনও বেশি খাবে না, কোনমতে এখন এখান থেকে বেরোতে পারলে হয়, খাওয়া একেবারে কমিয়ে দেবে, যত লোভনীয় খাবারই সামনে থাকুক, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছোঁবেও না। আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে লাগল সে।
কতক্ষণ অপেক্ষা করে আছে ছেলেরা, বলতে পারবে না, মনে হলো অনন্তকাল ধরে ফাটলটার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অবশেষে শেষ হলো প্রতীক্ষা, আলো জ্বলল তিনবার। ওপাশে পৌঁছে গেছে মিঙ।
রবিন, যাও, দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুসা। মিঙ যখন পেরেছে, তুমিও সহজেই পারবে। ওর চেয়ে তোমার শরীর অনেক ছোট, অনেক পাতলা। মুশকিল তো হবে। আমার।
অত ভেব না, সান্ত্বনা দিল রবিন। মিঙ যখন পেরেছে, তুমিও পারবে। ওর চেয়ে তুমি মোটা নও, একই রকম। বন্ধুকে বলছে বটে, কিন্তু তার নিজের গলাই শুকিয়ে কাঠ। ঢোক গিলল। আলো দেখাও।
পাশ ফিরে গলায় ঢুকে পড়ল রবিন। একেবারে মুখের কাছে দাঁড়িয়ে ভেতরে আলো ফেলল মুসা। অন্য পাশ থেকেও আলো আসছে, টর্চ জ্বেলে রেখেছে মিঙ, রবিনের শরীরের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছে মুসা সেই আলো।
এগিয়ে যাচ্ছে রবিন। একটা সময় ওপাশের আলো আর দেখতে পেল না মুসা, রবিনের শরীর একেবারে ঢেকে দিয়েছে আলো। আরও কয়েক মুহূর্ত আলো জ্বেলে রাখল মুসা, তারপর যখন বুঝল মিঙের কাছাকছি চলে গেছে রবিন, টর্চ নিভিয়ে দিল। অহেতুক ব্যাটারি খরচ করা উচিত নয় এখন।
আলোর সঙ্কেতের অপেক্ষায় রইল মুসা। কিন্তু কেন জানি দেরি হচ্ছে সঙ্কেত আসতে।
হঠাৎ শোনা গেল উত্তেজিত চিৎকার, মুসা-আ। খবরদার, এসো না…
মিঙের কণ্ঠ, থেমে গেল আচমকা, যেন মুখ চেপে ধরা হয়েছে তার।
কিন্তু কি বলতে চেয়েছে মিঙ, বুঝতে পেরেছে মুসা, তাকে না যেতে বলেছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল সে। কিছুক্ষণ পর আলোর সঙ্কেত এল তিনবার, খানিক পরে আবার তিনবার। আলো দেখেই বোঝা গেছে, টর্চ ধরা হাতটা অস্থির। তাছাড়া রবিনকে ডাকার সময় প্রতিবারে যতক্ষণ করে আলো জ্বেলে রেখেছিল মিঙ, এখন তার চেয়ে কম সময় রেখেছে। এর মানে কি?
মিঙ বা রবিন আলোর সঙ্কেত দেয়নি, অন্য কেউ দিয়েছে।
তার মানে শক্রর হাতে ধরা পড়েছে ওরা।
এগারো
এই সময় মিস কৌনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছে কিশোর।
ওদের কোন খবর নেই, বাতাসে মিলিয়ে গেছে যেন। বললেন মিস কৌন। ঘোড়া নিয়ে গেছে। বলে গেছে, উপত্যকা ঘুরেফিরে দেখবে। সারাদিন আর পাত্তা নেই। এদিকে আমি পড়েছি এক মহা ঝামেলায়। রিপোর্টার, শেরিফ, ওদেরকে নিয়েই এত বেশি ব্যস্ত…। লোক পাঠিয়েছিলাম, অনেক খুঁজেছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি ওদেরকে, এমনকি ঘোড়াগুলোও না।
কিন্তু গেল কোথায় ওরা? নিজেকেই প্রশ্ন করল কিশোর।
আমার মনে হয় খনিতে ঢুকেছে। পাহাড়ের তলায় অনেক সুড়ঙ্গ আছে, ঢুকে হয়তো আর বেরোতে পারছে না। ওখানে খুঁজতে লোক পাঠাচ্ছি।
নিচের ঠোঁটে একনাগাড়ে চিমটি কেটে চলেছে কিশোর। গোস্ট পার্ল চুরি গেছে, এখন তার বন্ধুরা নিখোঁজ। নিশ্চয়ই কোথাও একটা যোগসূত্র রয়েছে। বলল, অনেক লোক পাঠাচ্ছেন তো?
নিশ্চয়ই। শ্রমিক, যারা এখনও আছে, ভূতের ভয়ে পালায়নি, সব্বাইকে। এমনকি বাড়ির চাকর-বাকরও কয়েকজনকে পাঠাচ্ছি। ভারড্যান্ট ভ্যালির পরে যে মরুভূমি, সেখানেও পাঠিয়েছি কয়েকজনকে। তারা এখনও ফেরেনি।