চিৎকার শুনেছি। একবার একেবারে ক্ষীণ, আরেকবার একটু জোরে। দরজা বন্ধ ছিল তো।
ভূত যে-রাতে চেঁচিয়েছে, তখনও দরজা বন্ধ ছিল, বলল কিশোর। এদিক ওদিক তাকাল। বাড়ির এক কোণে একটা বড় সাজানো ঝোঁপ দেখে তার ভেতরে এসে ঢুকল। চেঁচিয়ে উঠল জোরে। বেরিয়ে আবার পুলিশম্যানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, এবার?
অনেক জোরে, জবাব দিল লোকটা, স্পষ্ট। কিন্তু কি প্রমাণের চেষ্টা করছ?
কোথা থেকে চেঁচিয়েছিল ভূতটা। নিশ্চয়ই বাইরে ছিল। বাড়ির ভেতর থেকে চেঁচিয়ে থাকলে স্বীকার করতেই হবে, ব্যাটার ফুসফুসের জোর অসাধারণ।
ভূতের ফুসফুস আছে কিনা তাই বা কে জানে, হাসল পুলিশম্যান।
কিন্তু কিশোর হাসল না। এটাই পয়েন্ট।
বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাল লোকটা। বোঝাল না তাকে কিশোর, সাইকেলের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
খোকা, ডাকল পুলিশম্যান, কার্ডে এই আশ্চর্যবোধক চিহ্নগুলো কেন?
হেসে ঘুরে চাইল কিশোর। লোকের কৌতূহল জাগানোর জন্যে। তাছাড়া সব রকম আশ্চর্য, উদ্ভট রহস্যের সমাধান করতে চাই আমরা, চিহ্নগুলো দেয়ার সেটা অনেক কারণ।
সাইকেলে উঠে আরেকবার ফিরে তাকাল কিশোর, তখনও মাথা চুলকাচ্ছে পুলিশম্যান। মুচকি হেসে বেরিয়ে এল ড্রাইভওয়ে ধরে।
কিন্তু বেশি দূরে গেল না কিশোর। কৌন ম্যানশন থেকে কয়েক ব্লক দূরে এসে থামল। আধুনিক মডেলের কয়েকটা বাড়ি এখানে, ফারকোপারের মধ্যযুগীয় বাড়িটার সঙ্গে বেমানান। সঙ্গে করে স্থানীয় পত্রিকার কিছু পেপার কাটিং নিয়ে। এসেছে সে। যে চারজন লোক ভূত দেখার কথা রিপোর্ট করেছে থানায়, তাদের নামধাম লেখা আছে। ঠিকানা খুঁজে একটা বাড়ি বের করল সে। ড্রাইভওয়েতে ঢুকল। এই সময় একটা গাড়ি ঢুকল, কিশোরের পাশে থেমে গেল। ড্রাইভারের পাশের দরজা খুলে নামল একজন লোক। জিজ্ঞেস করল, কি চায়। জানাল কিশোর।
লোকটা চারজনের একজন, নাম হ্যারি পিটারসন। সানন্দে কিশোরের প্রশ্নের জবাব দিল।
জানা গেল, পিটারসন আর তার এক প্রতিবেশী হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিল সে-রাতে, সিগারেট ফুকছিল আর বেসবল নিয়ে আলোচনা করছিল, এই সময় দুজন। লোক ডাকে তাদেরকে পেছন থেকে। অচেনা লোক, হ্যারি আর তার প্রতিবেশী মনে করেছে, আগন্তুক দুজনও তাদের প্রতিবেশী হবে, হয়তো নতুন এসেছে এ এলাকায়। নইলে এভাবে যেচে এসে কথা বলবে কেন? জ্যোৎস্না ছিল। চাঁদের আলোয় পোড়ো বাড়িটা কেমন দেখা যায়, দেখতে যাওয়ার কথা তুলল দুই আগন্তুক। ভালই লাগল প্রস্তাব। রাজি হয়ে গেল পিটারসন আর তার প্রতিবেশী বন্ধু। আগন্তুকদের একজনের ভারি কণ্ঠস্বর।
গ্যারেজ থেকে দুটো টর্চ নিয়ে এল পিটারসন, একটা দিল তার বন্ধুকে।
চারজনে চলল কৌন ম্যানশনের দিকে। পথে আরও দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা, তাদেরকেও সঙ্গে যেতে রাজি করিয়ে ফেলল ভারিকণ্ঠ। খুব মজা পাচ্ছিল যেন সে, ভূত নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেছিল, তার ধারণা পোড়ো বাড়িতে ভূতের দেখা মিলে যেতে পারে।
ভূত দেখা যাবেই, জোর দিয়েছিল একথায়? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মাথা কেঁকাল পিটারসন। তা দিয়েছিল। তার কথা ফলেছে। একেবারে জলজ্যান্ত ভূত, আশ্চর্য!
লোক দুজনকে চেনেন না বলছেন?
নাহ্। তবে একজনকে আগে কোথাও দেখেছি মনে হয়েছিল। অন্যজন একেবারে অচেনা। আশপাশেই কোথাও থাকে ভেবেছিলাম। অনেক প্রতিবেশী আমাদের, সবাইকে চিনি না, চেনা সম্ভবও নয়। গত এক বছরে অনেক নতুন লোক এসেছে।
মোট কজন গিয়েছিলেন আপনারা?
ছয়, ভেবে বলল পিটারসন। কারও-কারও ধারণা, সাতজন, কিন্তু ড্রাইভওয়েতে যখন ঢুকি তখন ছজনই ছিল। হতে পারে, পেছন পেছন আরও একজন এসেছিল, তবে আমি দেখিনি। তারপরে যা কাণ্ড শুরু হলো, লোক গোনার কথা মনে থাকে নাকি কারও? তাছাড়া গাঢ় অন্ধকার ছিল। কৌন ম্যানশন থেকে বেরিয়ে অচেনা দুজন চলে গেল। আমি আর আমার তিন প্রতিবেশী ঠিক করলাম, পুলিশে খবর দিতে হবে। ওই দুজনের আর কোন খোঁজ পাইনি।
বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা ছোট রোমশ কুকুর, আদুরে গলায় কুঁইকুঁই করে পিটারসনের পায়ে গা ঘষতে লাগল।
লক্ষ্মী ছেলে, নিচু হয়ে কুকুরটার গায়ে হাত বুলোল পিটারসন।
এই কুকুরটাকেই নিয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গে? জানতে চাইল কিশোর।
হ্যাঁ, হাঁটতে বেরোলেই জিমিকে সঙ্গে নিই, বিশেষ করে বিকেলে। সেরাতেও নিয়েছিলাম।
কুকুরটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। জানোয়ারটাও তাকাল তার চোখে চোখে। মুখ হাঁ, জিভ বের করে হাপাচ্ছে, যেন হাসছে তার দিকে চেয়ে! ভুরু কোঁচকাল কিশোর। আবার কিছু একটা মনে আসি আসি করেও আসছে না।
আরও কয়েকটা প্রশ্ন করল কিশোর, কিন্তু নতুন কিছুই জানাতে পারল না পিটারসন, তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে এল সে।
ধীরে ধীরে প্যাড়াল করে চলেছে কিশোর, গভীর চিন্তায় মগ্ন। ইয়ার্ডে পৌঁছে দেখল, বিশাল সদর দরজা বন্ধ। সূর্য অস্ত যাচ্ছে, এতক্ষণে খেয়াল হলো, তদন্ত করতে গিয়ে বেশ দেরি করে ফেলেছে।
নিজের ঘরে বসে আরামে পাইপ টানছে বোরিস। কিশোর উঁকি দিতেই ডাকল, এসেছ। এসো এসো। খুব ভাবছ মনে হচ্ছে?
বোরিস, ঘরে ঢুকল কিশোর, গতরাতে আমার চিৎকার শুনেছেন। কি রকম
মনে হয়েছিল?
মনে হয়েছিল বাড়ি মেরে কোন শুয়োরের ঠ্যাঙ ভেঙে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু আমার জানালা যদি বন্ধ থাকত, শুনতে পেতেন?