না, মিস কৌন দেখেছেন, উত্তেজিত শোনাল রবিনের কণ্ঠ। তারপর যা সব। কাণ্ড ঘটল না…
বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছ, বাধা দিল কিশোর। শান্ত হয়ে বলো সব। কিছু বাদ দেবে না। যখন যেভাবে ঘটেছে, বিস্তারিত বলো।
এ-মুহূর্তে কাজটা রবিনের জন্যে বেশ কঠিন। নেকলেস চুরির কথা বলার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছে সে। কিন্তু ওভাবে শুনতে চায় না কিশোর, জোর করে নিজেকে শান্ত করল রবিন। এক এক করে বলে গেল, সে আর মুসা ভারড্যান্ট ভ্যালিতে যাওয়ার পর কি কি ঘটেছে। সব শেষে নেকলেস চুরির ঘটনা বলে হাঁপ ছাড়ল।
হুমম, বলল কিশোর। জোরে জোরে দম নিচ্ছে রবিন, শুনতে পাচ্ছে। টেলিফোনেই। এটা আশা করিনি। তো, এখন কি হচ্ছে? তদন্তের আয়োজন চলছে?
স্থানীয় শেরিফকে ডেকে এনেছে টার্নার, শেরিফ হামফ্রে। তিন কাল শেষ, এক কালে ঠেকেছে বয়েস, কাজকর্ম কিছু বোঝেটোঝে মনে হয় না। শহর থেকে অনেক দূরে ভারড্যান্ট ভ্যালি, কাছাকাছি থানা নেই, পুলিশ নেই, শেরিফ আর তার সহকারীই ভরসা। সহকারীটাও বসেরই মত, গাল দেয়া ছাড়া আর কিছু জানে না।
শেরিফের ধারণা, কাগজে নেকলেসটার খবর পড়ে শহর থেকে চোর এসে চুরি করে নিয়ে গেছে। ওরা যখন সেফ খুলছিল, টার্নার তখন ঘরে ঢুকেছে। তাকে বেঁধে হারটা নিয়ে পালিয়েছে চোর আর তার সহকারী। শেরিফ বলছে, ইতিমধ্যে অর্ধেক পথ চলে গেছে চোরেরা। স্যান ফ্রানসিসকোর পুলিশকে ফোন করবে, কিন্তু ভাবছে কোন লাভ হবে না।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। একেবারে অযৌক্তিক কথা বলেনি শেরিফ। কিন্তু কিশোর বিশ্বাস করতে পারছে না। সবুজ ভূতের সঙ্গে এই হার চুরির কোন সম্পর্ক নেই তো?
তুমি আর মুসা চোখ খোলা রেখো, পরামর্শ দিল কিশোর। আমি ওখানে থাকতে পারলে ভাল হত। কিন্তু যেতে পারছি না। চাচা-চাচী বাড়ি নেই, আরও একদিন থাকবে স্যান ডিয়েগোতে, রোভারও নেই, বোরিস একা সামলাতে পারবে না। যোগাযোগ রেখো। যখন যা ঘটে, ফোনে জানিও। রিসিভার নামিয়ে রাখল সে।
নতুন করে আবার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার লোভ জাগছে, কিন্তু জোর করে দমন করল ইচ্ছেটা। ঘুমাতে চলল।
নানারকম স্বপ্ন দেখল, ঘুমের মধ্যেই একটা কণ্ঠ শুনল চেনা চেনা, কিন্তু চিনতে পারল না।
পরদিন সকালে মনে রইল না, রাতে কি স্বপ্ন দেখেছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মনেপ্রাণে আশা করল কিশোর, যাতে কাজ বেশি না থাকে ইয়ার্ডে, ক্রেতা না আসে, তাহলে হার চুরির ব্যাপারটা নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে পারবে।
কিন্তু ঘটল উল্টো। একের পর এক খরিদ্দার আসতেই থাকল, দরকষাকষি করতে লাগল, তর্ক করল, দুএকজন তো জিনিস আর দর নিয়ে আরেকটু হলে ঝগড়াই বাধিয়ে দিত। হিমশিম খেয়ে গেল কিশোর আর বোরিস, ঘেমে সারা। একটা মিনিট চুপ করে বসতে পারল না কিশোর, ভাববে কখন? পাঁচটার সময় অফিস বন্ধ করে দিল সে। বিক্রি বন্ধ। দম ফেলার অবকাশ পেল এতক্ষণে।
সুযোগ মিলতেই ভাবতে বসে গেল কিশোর। ধীরে ধীরে একটা ধারণা রূপ নিতে শুরু করল মনে।
বোরিস, চেঁচিয়ে ডাকল কিশোর, আপনি থাকুন। আমি চললাম।
কিশোরের স্বভার বোরিসের জানা। পাল্টা কোন প্রশ্ন করল না। বলল, ঠিক আছে, যাও। আমি আছি। কোথায় যাচ্ছ?
তদন্ত করতে, বোরিসকে আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল কিশোর। দ্রুত চালিয়ে শহরের প্রান্তে ছোট একটা জলাশয়ের ধারে জংলা জায়গায় চলে এল, এখানেই কৌন ম্যানশন। ড্রাইভওয়েতে ঢুকে দেখল, বাড়ির সামনে পুলিশের একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরকে দেখে গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করল একজন পুলিশ। আগের দিন সকালে চীফের সঙ্গে যখন এসেছিল তখন এই লোকটাকে এখানে দেখেছিল কিশোর।
সাইকেল ঘোরাও, খোকা, বলল লোকটা। কৌতূহলী দর্শকদের তাড়ানোর জন্যেই পাহারায় আছি এখানে। উফফ, সারাটা দিন…আর ভাল্লাগছে না এখন।
স্ট্যাণ্ডে সাইকেল তুলে পকেটে হাত ঢোকাল কিশোর। আরও অনেকে এসেছিল?
এসেছে মানে? মুখ বাঁকাল লোকটা। পাগল করে দিয়েছে আমাকে। স্যুভনির শিকারিদের জ্বালায়…উফফ, বদ্ধ পাগলের দেশ এটা। বেশি কথা বলতে পারব না, খোকা, চলে যাও।
আমি স্যুভনিরের জন্যে আসিনি, এগিয়ে এল কিশোর। গতকাল দেখেছেন। আমাকে, মনে নেই? আপনাদের চীফের সঙ্গে এসেছিলাম।
ভাল করে তাকাল পুলিশম্যান। ও হা হা…সেজন্যেই চেনা চেনা লাগছিল। তা কি ব্যাপার?
তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বাড়িয়ে ধরল কিশোর, আমি কিশোর পাশা।
কার্ড পড়ে হাসতে গিয়েও থেমে গেল পুলিশম্যান, কি জানি, চীফের সঙ্গে এসেছিল যখন, ফেলনা না-ও হতে পারে। গোয়েন্দা, না? চীফের হয়ে কাজ করছ?
তার হয়ে করছি না, তবে আমি যা করব, সফল হতে পারলে খুব খুশি হবেন। চীফ। আগেও অনেক কাজ করেছি। এখন কি করতে চায়, জানাল কিশোর।
মাথা ঝোকাল পুলিশম্যান। ঠিক আছে। যাও।
পাথরের সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির বারান্দায় উঠল কিশোর, ভেতরে ঢুকল। তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে সব। যেদিক থেকে ভাঙা শুরু হয়েছে, সেখানে এসে দাঁড়াল। পরীক্ষা করে দেখল, দেয়াল খুব পুরু।
আর কোন গোপন কুঠরি খোঁজার চেষ্টা করল না কিশোর, পুলিশই ভালমত খুঁজেছে, অহেতুক সময় নষ্ট করা হবে। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠল। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠল গলা ফাটিয়ে। এক মিনিট অপেক্ষা করে নিচে নেমে বড় হলরুমটায় ঢুকে আবার চিৎকার করল। তারপর বেরিয়ে এল বাইরে। পুলিশম্যানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, কিছু শুনেছেন?