মিঙ জবাব দেয়ার আগেই বলে উঠল সুই, জিজ্ঞেস করার দরকার কি? এই বয়েসে ছেলেদের খিদে পাবেই। এটাই তো খাওয়ার বয়েস। তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল পরিচারিকা।
উল্টো দিকের একটা দরজা দিয়ে একজন লোক ঢুকল ঘরে। দেখামাত্র চিনল দুই গোয়েন্দা। ডলফ টার্নার। উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে তাকে।
এই যে, ছেলেরা, এসে গেছ, হালকা, মিষ্টি গলায় বলল টার্নার। কাল কল্পনাও করিনি, আজই তোমাদের সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যাবে। তো আছ কেমন? ভাল? জবাবের অপেক্ষা না করেই বলল, কি যে কাণ্ড শুরু হয়েছে। কিছু বুঝতে পারছি না। কেউই পারছে না।
তোমরা বসো, রবিন আর মুসাকে বলল মিস কৌন। আমি গিয়ে শুয়ে পড়িগে। তোমাদের কোন অসুবিধে হবে না। মিঙ আছে, সব দেখবে। ডলফ, খুব খারাপ লাগছে। সিঁড়ি বেয়ে যেন উঠতে পারব না, একটু ধরবে আমাকে?
নিশ্চয়ই, দ্রুত এসে মিস কৌনের বাহু ধরল টার্নার। সিঁড়ির দিকে নিয়ে চলল মহিলাকে।
হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে গেল ঘর। সুইচ টিপে আলো জ্বালল মিঙ। পাহাড়ী এলাকা, হঠাৎ করেই রাত নামে।
টেবিলে খাবার সাজাল সুই।
শুরু করো, বলল মিঙ।
হ্যাঁ, শুরু করো, সুই বলল। খাওয়ার সময় কথা বেশি বলবে না। পেট পুরে খাও। কোন রকম লজ্জা কোরো না।
খাওয়ার ব্যাপারে আমার কোন লজ্জা নেই, হাত নাড়ল মুসা। প্লেনে কি খেয়ে ছে না খেয়েছে কখন হজম হয়ে গেছে তার। হাবভাবে মনে হচ্ছে, গত তিন দিন কছু খায়নি।
জহুরী জহর চেনে। ভোজন রসিককে চিনে নিল অভিজ্ঞ পরিচারিকা। খাবার সরবরাহ করতে লাগল সেভাবেই।
গরুর মাংসের ঠাণ্ডা রোস্ট, গরম রুটি, নানারকম আচার, আলুর সালাদ, আর আরও কয়েক রকম ঠাণ্ডা খাবার, চেহারা আর গন্ধে রবিনের খিদেও বেড়ে গেল।
খাওয়া শুরু করতে যাচ্ছে, এই সময় বাধা পড়ল।
দোতলা থেকে শোনা গেল তীক্ষ্ণ চিৎকার।
দাদীমা! লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল মিঙ। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।
পড়িমরি করে সিঁড়ির দিকে দৌড় দিল সে। তাকে অনুসরণ করল দুই গোয়েন্দা। তাদের পেছনে সুই, আর আরও কয়েকজন চাকর-চোখের পলকে কোথা, থেকে জানি উদয় হয়েছে ওরা।
ওপরে সিঁড়ির পাশে আরেকটা হল, শেষ মাথায় একটা দরজা খোলা। সেদিকেই দৌড় দিল মিঙ।
বিছানায় চিত হয়ে পড়ে আছেন মিস কৌন। তার ওপর ঝুঁকে আছে টার্নার। হাতের তালু ডলছে, আর উত্তেজিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করছে কিছু। সুইকে দেখে চেঁচিয়ে বলল, স্মেলিং সল্ট! জলদি।
ছুটে গিয়ে বেডরুম সংলগ্ন বাথরুমে ঢুকল সুই, বেরিয়ে এল একটা শিশি হাতে। মুখ খুলে ধরল মিস কৌনের নাকের কাছে।
একটু পরেই নড়েচড়ে উঠলেন মিস কৌন, আস্তে করে চোখ মেললেন। ভিড় দেখে লজ্জিত কণ্ঠে বললেন, ছেলেমানুষী করে ফেলেছি, না? জীবনে এই প্রথমবার বেহুশ হলাম।
কি হয়েছিল, দাদীমা? ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মিঙ। চিৎকার করলে কেন?
ভূতটাকে আবার দেখেছি, গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন মহিলা। ডলফকে গুড নাইট জানিয়ে বেডরুমে ঢুকলাম। আলো জ্বালতে যাব, এই সময় দেখলাম ওটাকে।
কোথায়?
ওই জানালাটার ধারে। স্পষ্ট। কড়া চোখে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। পরনে সবুজ আলখেল্লা, ঠিক যেমনটি পরত ফারকোপার চাচা। চেহারাটা স্পষ্ট নয়, তবে চোখগুলো পরিষ্কার, লাল টকটকে। গলার স্বর খাদে নামিয়ে ফিসফিস করে বললেন, আমার উপর রেগে আছে। থাকবে, জানতাম। মা তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল তার মৃত্যুর পর বন্ধ রাখবে কৌন ম্যানশন, কখনও খুলবে না। কখনও ওখানকার শান্তি নষ্ট করবে না। অথচ আমি কি করেছি? মায়ের প্রতিজ্ঞা নষ্ট করেছি, বাড়ি বিক্রি করতে রাজি হয়েছি। তার স্ত্রীর শান্তি নষ্ট করেছি, ফারকোপার চাচা রাগ তো করবেই আমার ওপর।
ছয়
দিনারা কৌনকে শান্ত করে আবার এসে খাবার টেবিলে বসল রবিন, মুসা আর মিঙ। খাওয়া চলল উত্তেজিত কথাবার্তার মধ্য দিয়ে।
কমলার রস খাইয়ে মিস কৌনকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে সুই। মনিবানীর কাছেই রয়েছে। যে হারে ধমক-ধামক মেরেছে চাকর-বাকরকে, তাতে স্পষ্ট বুঝে গেছে দুই গোয়েন্দা, এ-বাড়িতে যথেষ্ট প্রতিপত্তি ওই চীনা মহিলার।
ওপরতলা থেকে নেমে এল টার্নার, গম্ভীর।
ভূতটা আপনি দেখেছেন? জিজ্ঞেস করল মুসা। মাথা নাড়ল টার্নার, আন্টিকে ঘরের দরজায় পৌঁছে দিয়ে ফিরেছি। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন। লাফ দিয়ে গিয়ে ঢুকলাম। সুইচে হাত রেখে টিপছেন, এই সময় দেখেছেন ভূতটাকে। আমি ঢুকতেই আলো জ্বলে উঠল, ঢলে পড়তে শুরু করলেন তিনি। ধরলাম তাকে, বিছানায় শোয়ালাম। এত তাড়াহুড়োর মাঝে ভূত দেখার সময় কোথায়? হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপাল ডলল সে।
চাকর-বাকরের মুখ বন্ধ রাখা যাবে না, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল আবার টার্নার।
ঠেকানো যাবে না কিছুতেই। কাল সকাল হতে না হতেই সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে গুজব।
খবরের কাগজকে নিয়ে ভাবনা? জিজ্ঞেস করল রবিন।
খবরের কাগজওয়ালারা যা ক্ষতি করার করে ফেলেছে। আমি আমাদের শ্রমিকদের কথা ভাবছি। গতরাতেও যে আন্টি ভূত দেখেছেন, ফোনে বলেছেন তোমাদেরকে?
মাথা কেঁকাল মুসা আর রবিন।
এ-বাড়ির দুজন চাকরানীও দেখেছে, বলল টার্নার। ভয়ে আধমরা হয়ে গিয়েছিল। অনেক বলেকয়ে বুঝিয়েছি ওদের, খবরটা গোপন রাখতে। বিশেষ কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। সারাদিনে ছড়িয়ে পড়েছে গুজব, রকি বীচের ভূত এসে। ঠাই নিয়েছে ভারড্যান্ট ভ্যালিতে। ব্যাপারটা নিয়ে কানাঘুষো করছে শ্রমিকরা।