তিন গোয়েন্দাকে ভাড়া করতে চাও?
যদি সম্ভব হয়।
তা কাজটা কী? না শুনে কিছু বলতে পারছি না। আমরা আগ্রহী না-ও হতে পারি।
হবে না মানে? হয়ে বসে আছ, বলল জিনা। তোমাদের আলাপ আলোচনা সব শুনেছি। আমাদের বাড়িতে কী হচ্ছে না হচ্ছে জানার জন্যে মাথা কুটে মরছ তোমরা। তা ছাড়া, রাজি না হয়ে উপায়ও নেই তোমাদের।
মানে? ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার।
মানে, তেমন সাবধান নও তোমরা। পেছনের বেড়ার এক জায়গায় একটা ছবি আঁকা আছে না, অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য, ওই যে উনিশশো পাঁচ সালে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল স্যান ফ্রানসিসকোতে?
উনিশশো ছয় সালে, শুধরে দিল কিশোর।
উনিশশো বত্রিশ হলেই বা কী এসে যায়? আসল কথা হলো, দৃশ্যটাতে ছোট্ট একটা কুকুরের ছবি আছে। ওটার চোখ টিপলেই বেড়ার এক জায়গায় একটা ছোট দরজা খুলে যায়, খুলতে দেখেছি তোমাদেরকে। হেডকোয়ার্টারে ঢোকার গোপন পথ নিশ্চয়? টেরিয়ার ডয়েল জানে?
ব্ল্যাকমেইল! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
যা খুশি মনে করতে পারো, জিনা বলল। টাকা দেব না বলে। করছি, ভেব না। টাকা দেব ঠিকই। আসলে, সাহায্য চাই আমি। তিন গোয়েন্দার খুব নাম শুনলাম, তাই তোমাদের কাছেই এসেছি।
খুব ভাল করেছ, হাসল মুসা।
বেশ। এখন বলল, আমাকে সাহায্য করবে, না শুঁটকির কাছে যাব!
ও এখন শহরে নেই, হাসি মুছে গেল মুসার মুখ থেকে।
ওর চেলারা আছে। এগারো গোয়েন্দা বানিয়েছে ওরা। শুনলাম, তোমাদের সঙ্গে ওদের আদায়-কাঁচকলায় বন্ধুত্ব। যাব?
একটা খালি বাক্সের ওপর বসে পড়ল কিশোর। সাহায্য? কী সাহায্য চাও?
ওই ভ্যারাডের বাচ্চাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে চাই, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল জিনা।
ভ্যারাড? কালো পোশাক পরে যে লোকটা এসেছে, ফেকাসে মুখো?
হ্যাঁ। ফেকাসে হবে না তো কী হবে, সারাদিন থাকে ঘরে বসে! রাতে বেরোয়। শিওর, ওর বাপ একটা ছুঁচো ছিল।
ও যেদিন এল, তুমি ঘোড়া থেকে পড়ে পা কাটলে। সেরাতেই রুজ পালাল, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করেছে কিশোর, তার মানে জোর ভাবনা চলেছে মাথায়। অদ্ভুত কিছু একটা শুনেছে। না, কল্পনা করেনি, ঠিকই শুনেছে।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছে, কিন্তু গলায় জোর নেই জিনার। অস্বস্তি বোধ করছে। হাতের কার্ডটা একবার ভাজ করছে, আবার খুলছে। এর জন্যে ভ্যারাডই দায়ী, ধীরে ধীরে বলল সে। কোন উপায়ে সে-ই সৃষ্টি করেছে শব্দটা। ও আসার আগে আর ওরকম শব্দ শোনা যায়নি।
ও কি এখনও তোমাদের বাড়িতেই থাকছে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
না হলে তাড়াতে চাইছি কেন? খালার ধারণা, হিউগ ভ্যারাডের মত মহাপুরুষ আর হয় না। খালার মাথায় আগে থেকেই গণ্ডগোল ছিল। রোজ রাতে বিছানায় ছুরির ডগা দিয়ে অদৃশ্য চক্র আঁকত, ভূত-প্রেত যাতে তার কোন ক্ষতি করতে না পারে। ভ্যারাড আসার পর আরেকটা নতুন কাণ্ড যোগ হয়েছে। মোমবাতি। ডজনে ডজনে জেলে রাখে সারারাত। যে-সে মোম হলে চলবে না, হলিউডের এক বিশেষ দোকান থেকে বিশেষ মোম আনায়। বিভিন্ন রঙের। নীলচে-লাল মোম নাকি বিপদ ঠেকায়, শুধু নীল দিয়ে আরেকটা কী উপকার হয়, কমলা রঙ শুভ, এমনি একেক রঙের একেক গুণ। রোজ রাতে লাইব্রেরিতে গিয়ে ঢেকে খালা আর ভ্যারাড, মোম জ্বালে, দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়।
কী করে? আগ্রহে সামনে ঝুঁকল কিশোর।
কী করে, কে জানে! মাঝে মাঝে বিচিত্র শব্দ শোনা যায়, নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠল জিনা। দোতলা থেকেও শুনেছি। তবে হলরুম থেকে স্পষ্ট শোনা যায়। লাইব্রেরি থেকে আসে।
রুজ বলেছে, গান নাকি গায়?
গান? নিজের হাতের দিকে তাকাল জিনা। তা…হ্যাঁ, গান বলতে পারো! … তবে এমন গান জন্মেও শুনিনি! শুনলেই গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়।
দুই ভুরু সামান্য কাছাকাছি হয়ে গেছে কিশোরের রুজ বলেছে, কিছু একটা গান গায়। মানুষের কথা বলেনি।
সোজা হয়ে বসল জিনা, সরাসরি তাকাল কিশোরের দিকে। কে কী বলেছে না বলেছে, ওসব শোনার দরকার নেই। আমি বলছি, কাজটা ভ্যারাডের। আমি চাই, ওর শয়তানী বন্ধ হোক।
এতই খারাপ শব্দ?
তা হলে আর বলছি কী? কাজের লোক থাকছে না। এজেন্সিতে ফোন করে দু-দুজন লোক আনিয়েছি, রুজের মতই ওরাও পালিয়েছে এক রাত থেকেই। এতবড় বাড়ি, কে পরিষ্কার করে, কে কী করে? হাঁটু সমান ধুলো জমেছে, না খেয়ে মরার জোগাড় হয়েছে আমার। রাধে কে? আমি পারি না, খালা তো আমার চেয়ে আনাড়ি। দিনের বেলা টু শব্দটি করতে পারি না আমি আমার নিজের বাড়িতে। কেন? না, ভ্যারাড ছুঁচোটা সারারাত কেঁচো ধরে খাওয়ার জন্যে সজাগ থেকেছে, দিনে তো ঘুমোতে হবে তাকে! শয়তান কোথাকার! ওকে বড় মেরে বিদেয় করতে চাই আমি।
কিন্তু, অবাঞ্ছিত মেহমান তাড়ানোর কাজ তো আমাদের নয়, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। তোমার খালাকে সব খুলে বলে দেখো…
বলে বলে মুখ ব্যথা করে ফেলেছি, নিমের তেতো ঝরল যেন জিনার কণ্ঠে। খালি হাসে। বেশি বললে অন্য কথায় চলে যায়। ফিল্মের রদ্দিপচা যেসব জিনিসপত্র জোগাড় করে এনেছে, ওগুলোর কথা তোলে।
ফিল্মের জিনিসপত্র? মুসার প্রশ্ন।
আরে, বুড়িটার কি এক দোষ? কোথায় কোথায় গিয়ে রাজ্যের সব পচা মাল কিনে আনে! স্প্রিং ফিভার ছবিতে ডেলা লাফনতি যে আলগা। চোখের পাতা ব্যবহার করেছে, সেগুলো এনেছে। মারকোস রিভেঞ্জ-এ জন মেঝাঙ্ক-এর ব্যবহার করা তলোয়ারটা জোগাড় করেছে চড়া দাম দিয়ে। ফিল্ম স্টারদের ফেলে দেয়া বাতিল জিনিসের নিলাম হবে শুনলেই ছোটে খালা। ওসবের পেছনেই যায় তার টাকা।