জিনা! চেঁচিয়ে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। ঘোড়াটাকে সরাও!
ছুটে গিয়ে ঘোড়ার গলা পেঁচিয়ে ধরল জিনা। হয়েছে, মেয়ে, এবার ছাড়ো। শান্ত হও।
কামড় ছাড়ল ঘোড়া।
ধপ করে গ্যারাজের কোণে বসে পড়ল মহাগুরু, ক্লান্ত, আহত, বিধ্বস্ত। কাটা জায়গা চেপে ধরল আরেক হাতে। হাঁপাচ্ছে। কোলা ব্যাঙের স্বর বেরোচ্ছে গলা দিয়ে।
চুপচাপ বসে থাকুন, পিস্তল তুলে ধরেছে কিশোর। নিশানা মোটেই ভাল না আমার, তবে এত কাছে থেকে মিস করব না। বাই চান্স বুকে কিংবা কপালে লেগে যেতে পারে।
নীরবে আহত হাত চেপে ধরে বসে রইল জিহাভো।
আমি যাই, দরজার কাছে চলে গেছে রবিন। ক্যাপ্টেনকে ফোন করতে হবে। পাঁচ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন।
অত তাড়াহুড়ো না করলেও চলবে, বোলো, খুশি খুশি গলায় বলল কিশোর। কমেটের সামনে দিয়ে পালাতে পারবে না।
জিনা হাসল। বিচিত্র শব্দ করল কমেট।
হাসল না তো! জিনার দিকে তাকাল মুসা। সেদিনই মনে হয়েছিল আমার, ঘোড়া কামড়ায়। মেরি চাচী বললেন, না! ভাগ্যিস কাছে যাইনি! ভয়ে ভয়ে ঘোড়াটার দিকে তাকাল মুসা, নিজের অজান্তেই পিছিয়ে গেল এক পা।
তেইশ
এসো, এসো, তিন গোয়েন্দাকে দেখেই ডাকলেন হলিউডের বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার। তোমাদের জন্যেই বসে আছি। বসো।
বিশাল টেবিলে পড়ে আছে এক গাদা খবরের কাগজ, তার ওপাশে পরিচালকের গলার ওপরের অংশ শুধু দেখা যাচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে বোমা বিস্ফোরণের খবর পড়েছি। জানলাম, রকি বিচের তিনজন কিশোর ছিল তখন ওখানে, আর একটা মেয়ে। সন্দেহ হলো, তোমরা ছাড়া কেউ না। তাই সেক্রেটারিকে বলেছি তোমাদের ডাকতে।
মোটা একটা ফাইল বাড়িয়ে দিল রবিন। ঠিকই অনুমান করেছেন, স্যর, আমরাই ছিলাম।
কোন কেস? ফাইল খুলতে শুরু করলেন চিত্রপরিচালক।
নীরব ঘর, মাঝে মাঝে শুধু ফাইলের পাতা ওল্টানোর শব্দ, গভীর মনোযোগে পড়ছেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। অবশেষে মুখ তুললেন, সব নেই এখানে।
বাকিটুকু বলেনি কিশোর পাশা, রবিন জানাল।
কী মানুষ ওরা! নাক কোচকালেন চিত্রপরিচালক। কিশোর, ধোয়ার ওপরে সাপের ছবি কী করে তৈরি করল, বুঝেছ?
হ্যাঁ, স্যর, মাথা নোয়াল কিশোর। সিনেমা প্রোজেক্টর। রঙিন একটা খেলনা সাপের ফিল্ম তৈরি করেছে। আগুনে কেমিকেল পুড়িয়ে ধোয়া সৃষ্টি করে তাতে ফেলেছে সাপের ছবি। এর জন্যে স্পেশাল গ্লাস ব্যবহার করেছে ওরা। ধোয়ার পর্দার মধ্যে দর্শকদের মনে হয়েছে, জ্যান্ত সাপ দেখেছে। একটু থেমে বলল, তোমাদেরকেও বোকা বানিয়ে ফেলেছিল। পরে ভালমত চিন্তাভাবনা করতেই বুঝে গেছি আসল ব্যাপারটা।
আর গান?
ওটা ভ্যারাডের কাজ। প্রথমে ভেবেছি, টেপরেকার ব্যবহার করেছে। কিন্তু পরে বুঝলাম, যন্ত্র নয়, নিজেই শব্দটা করেছে। ভেনট্রিলোকুইজম। শব্দ আর সুর ব্যবহারের বাহাদুরি আছে তার, স্বীকার করতেই হবে। বিকট গান প্রোজেক্টরের ঝিরঝিরও ঢেকে দিয়েছে। আউরোও এই ব্যাপারে ওস্তাদ।
সে-ও ভেনট্রিলোকুইস্ট?
হ্যাঁ, স্যর। ডক্টর স্মিথের কাছে টেপ করা আছে ভ্যারাডের বিকট গান, সেটা শুনে শুনে প্র্যাকটিস করে নিয়েছে আউরো। মিস মারভেলের। চিকিৎসা করার সময় ব্যবহার করেছে।
আউরো খুব চালাক। মিস মারভেলকে কীভাবে যে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ল! আমি শিওর, তার গাউনের অন্য পকেটে আরেকটা সবুজ থলে ছিল। গড়াগড়ি করার সময় হাত সাফাই করে কোন এক ফাঁকে সাপভরা। থলেটা পকেটে চালান করে দিয়ে, খালি থলেটা বের করে নিয়েছে।
ওঝাদের পুরানো কৌশল, বললেন চিত্রপরিচালক। তা, ডক্টর স্মিথের এত আগ্রহ কেন মিস মারভেল আর প্রেতসাধকের ব্যাপারে, জিজ্ঞেস করেছ?
কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানসিক রোগীদের ওপর একটা বই লিখতে যাচ্ছেন তিনি, বলল কিশোর। লস অ্যাঞ্জেলেসে নাকি আজকাল বড় বেশি ছড়িয়ে পড়েছে এসব, লোককে হুঁশিয়ার করে দিতে চান। তাই, ব্ল্যাক ম্যাজিকের গন্ধ পেলেই ছুটে যান তিনি সেখানে, ঝুঁকিও নিতে হয়। অনেক সময়। সাধকরা বাইরের লোককে বৈঠকে ঢুকতে দেয় না, ফলে। লুকিয়ে-চুরিয়ে কাজ সারতে হয় ডক্টরকে। ওরা কী করে না করে, দেখেন; দরকার মনে করলে তাদের কথাবার্তা, মন্ত্র, গান টেপ করে নেন, পরে গবেষণার জন্যে।
ওই কারণেই মিস মারভেলের প্রতি তার আগ্রহ? হ্যাঁ। এতবড় বাড়ি পারকারদের, কাজের লোকও নেই, সুযোগ পেয়ে গেলেন ডক্টর। তাই কাজের লোকের ছদ্মবেশে কাছে কাছে থাকতে চেয়েছেন তিনি। আমরা মাঝখান থেকে গিয়ে পড়ে ভণ্ডুল করে দিয়েছি। সব।
ও না থাকলে বিপদে পড়তে, বললেন চিত্রপরিচালক। গুলি
হ্যাঁ, স্যর, রবিন বলল। তবে মুসা যেদিন দেয়াল থেকে পড়ল, সেদিন বোধহয় ছিলেন না উনি।
হাসলেন পরিচালক। ঠিক। তবে মুসা না থাকলে তোমরাও জিহাভোর হাত থেকে মুক্তি পেতে না। অন্তত নেকলেসটা তো যেতই। ও-ই বুদ্ধি করে কমেটের বাধন খুলে দিয়েছিল।
হাসি ফুটল মুসার মুখে।
হ্যাঁ, একটা ব্যাপার, হাত তুললেন পরিচালক। ওই গ্যারাজের ওপরে বাসা ভাড়া নিতে গেল কেন ডক্টর? তার তো ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারই আছে।
রকি বিচ থেকে বাসাটা কাছে, তাই, বলল কিশোর। জিজ্ঞেস করেছিলাম; তিনি বললেন, ওখান থেকে যখন খুশি চলে আসতে পেরেছেন পারকার হাউসে।
আউরোকে জোগাড় করল কোত্থেকে?
আউরো তার স্ত্রী। জিপসি, ওঝাদের কাজকারবার দেখে দেখে অভ্যস্ত মহিলা। তাই ছদ্মবেশ নিতে আর অভিনয় করতে কোন অসুবিধে হয়নি।