তোমার বুদ্ধি আছে, খোকা, কিশোরের দিকে চেয়ে মাথা সামান্য নোয়াল জিহাভো। ঠিকই ধরেছ। একটা গুহা আছে, ওখানেই লুকিয়ে থেকেছি। বাজে জায়গা!
একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, টরেনটি ক্যানিয়ন থেকে পালালেন কী করে? মুসা জিজ্ঞেস করল। ভ্যারাড় আর রডকে তো পুলিশ ধরে ফেলল।
বাগানের পেছনে ছিলাম। পুলিশের গাড়ি দেখলাম।
ব্যস, অমনি দেয়াল ডিঙিয়ে ঢুকে পড়লেন ঝোপে, না? রবিন বলল। বন্ধুদেরকে বিপদে রেখে।
কথায় আছে না, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা! হাসি হাসি ভাবটা হঠাৎ দূর হয়ে গেল জিহাভোর চেহারা থেকে। ওই মাথামোটা মেয়েমানুষটা কোথায়? নিশ্চয় দোতলায়। সিঁড়ির দিকে পিস্তলের ইঙ্গিত করে বলল, চারজনই ওঠো। আমি পেছনে থাকছি।
যাব না, গ্যাঁট হয়ে বসে রইল জিনা।
বোকামি কোরো না, মুসা বলল। ওর হাতে পিস্তল!
আমি কেয়ার করি না। খালার সঙ্গে আর দেখা করতে দিচ্ছি না আমি ওকে, যথেষ্ট করেছে। আস্তে করে উঠে দাঁড়াল জিনা। কোমরে দুহাত রেখে মুখোমুখি হলো জিহাভোর। আমি জানি, তুমি কী চাও। ওই নেকলেসটা। ওটা নেই এখানে, কাজেই, যেতে পারো এবার।
তা হলে কোন ব্যাঙ্কে কিংবা জুয়েলারের দোকানে আছে, শান্ত কণ্ঠে বলল জিহাভো। মিস মারভেল ফোন করে ওটা আনাতে পারবে।
না, ওটা…
জিনা! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। বোলো না!
জিনার ওপর থেকে চোখ সরে গেল জিহাভোর, নীরবে এক মুহূর্ত দেখল কিশোরকে, তারপর আবার জিনার দিকে ফিরল।
ব্যাঙ্কে নেই, না? জিহাভো বলল। জুয়েলারের দোকানেও না? তা হলে কোথায়? এত দামী একটা জিনিস কোথায় থাকতে পারে? হাত নেড়ে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করল ছেলেদেরকে। তারপর এসে দাঁড়াল জিনার একেবারে সামনে। তুমি জানো। কোথায়?
পিছিয়ে গেল জিনা। জানি না।
নিশ্চয় জানো, হঠাৎ বাঁ হাতে জিনার কাধ খামচে ধরল জিহাভো। কোথায়?
হাত সরান! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ছাড়ন! ছাড়ন ওকে।
আমি বলব না! জিনাও চেঁচাল। বলব না!
বলবে, কাধ ধরে জিনাকে ঝাঁকাতে শুরু করল লোকটা।
ছাড়ুন বলছি! নইলে ভাল হবে না! রবিনও চেঁচিয়ে উঠল। পিস্তলের জন্যে সামনে বাড়তে সাহস করছে না।
গ্যারাজ থেকে ঘোড়ার উত্তেজিত চিহিহিহি শোনা গেল। জিনা। বিপদে পড়েছে, কল করে জানি টের পেয়ে গেছে কমেট।
আরে! কী ব্যাপার! ভুরু কোঁচকাল জিহাভো।
ঘোড়ার ডাক চেনেন না? খেঁকিয়ে উঠল জিনা।
চিনি, নিশ্চয় চিনি! আনমনে মাথা দোলাল জিহাভো। সারাদিন ঘোড়া নিয়েই থাকো, দিনের মধ্যে অসংখ্য বার গ্যারাজে ঢুকতে দেখেছি। তোমাকে…ওখানেই বেধে রাখো, না?
চুপ করে রইল সবাই।
গ্যারাজ! বলে উঠল জিহাভো। হ্যাঁ, গ্যারাজেই আছে! ঘোড়াটার অগোচরে কেউ সরাতে পারবে না ওটা। ভাল বুদ্ধি করেছ!
ঝটকা দিয়ে কাধ ছাড়িয়ে নিল জিনা।
বেরোও। আদেশ দিল জিহাভো। সবাই!
আবার ডেকে উঠল ঘোড়া।
বেরোও! ধমকে উঠল জিহাভো। কোথায় রেখেছ হারটা, দেখাও!
না! চোখে পানি এসে গেছে জিনার।
যা বলছে করো, জিনা, কিশোর বলল। তোমার শরীর বুলেটপ্রুফ।
হ্যাঁ, দেখাও, রবিনও বলল। নিয়ে বেশিদূর যেতে পারবে না ও।
সেটা দেখা যাবে, পিস্তল নাচাল জিহাভো।
পেছনের আঙিনায় বেরিয়ে এল ওরা। গ্যারাজের দরজা ফাঁক হয়ে আছে। গিয়ে টেনে পুরো খুলে দিল কিশোর।
কোথায় ওটা? ভুরু নাচাল জিহাভো।
জবাব দিল যেন কমেট, বিরাট মাথাটা ঝাঁকিয়ে জিনার দিকে চেয়ে ডেকে উঠল।
গ্যারাজের ভেতরে চেয়ে আছে জিহাভো। কোথায় আছে! গামলায় নয়, ঘাসের মধ্যে নয়, তা হলে খেয়ে ফেলতে পারে ঘোড়া। তা হলে? ওট বিন…হা হা, ওট বিনের টিনে!
স্থির হয়ে গেল জিনা।
তা হলে ওট বিনেই আছে! জিনার পরিবর্তন লক্ষ করেছে জিহাভো। টিনে।
চারজনকেই গ্যারাজে ঢোকার হুকুম দিল জিহাভো। পেছনে ঢুকল সে। এবার বের করো, জিনাকে বলল, শীতল কণ্ঠস্বর! চালাকির চেষ্টা করলে ঘাড় ভেঙে দেব।
আস্তে করে হাত বাড়াল মুসা, তার দিকে পেছন ফিরে রয়েছে। জিহাভো। ঘোড়ার বাধন খুলতে শুরু করল সাবধানে।
বের করো! ধমকে উঠল জিহাভো। জিনার এক হাত ধরে মুচড়ে নিয়ে এল পিঠের ওপর।
উহ্ উহ্, ব্যথা পাচ্ছি! ছাড়ুন! ককিয়ে উঠল জিনা।
গিঁট খুলে দিয়ে সরে গেল মুসা। ধীরে ধীরে মাথার সঙ্গে কান লেপ্টে ফেলছে আপালুসা।
কমেট, ধরো! আচমকা চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
লাফিয়ে পেছনের দুপায়ের ওপর খাড়া হয়ে গেল কমেট। চেঁচিয়ে। উঠল প্রচণ্ড রাগে।
জিনার হাত ছেড়ে দিয়ে এক লাফে সরে দাঁড়াল জিহাভো। খবরদার! পিস্তল তুলল সে ঘোড়ার দিকে।
না, না! বলতে বলতেই জিহাভোর হাতে থাবা মারল জিনা।
বদ্ধ জায়গায় গুলি ফোঁটার বিকট আওয়াজ হলো। মনে হলো, ধসে পড়বে গ্যারাজটা। কারও কোন ক্ষতি করল না বুলেট, মেঝেতে বাড়ি খেয়ে পিছলে গিয়ে বিধল দেয়ালে, আস্তরণ খসিয়ে দিল খানিকটা জায়গার।
কমেটের সামনের পা খটাস করে আবার মেঝেতে পড়েছে। মাথা দোলাল সামনে। মুগুর দিয়ে বাড়ি মারল যেন কেউ জিহাভোকে। উড়ে গিয়ে বাড়ি খেল দেয়ালের সঙ্গে। কিন্তু পিস্তল ছাড়ল না হাত থেকে। আবার তুলতে শুরু করল গুলি করার জন্যে।
এক লাফে কাছে গিয়ে দাঁড়াল কমেট। বড় বড় দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল পিস্তল ধরা হাত। চেঁচিয়ে উঠে হাত থেকে অস্ত্রটা ছেড়ে দিল জিহাভো। খটাস করে মেঝেতে পড়ল পিস্তল। কমেটের পায়ের ফাঁক দিয়ে ঢুকে চট করে ওটা তুলে নিয়ে এল কিশোর।