অবাক হয়ে লোকটার দিকে চেয়ে আছে চার ছেলেমেয়ে।
জিনা, লোকটা বলল, আমি সত্যিই দুঃখিত! জানতাম না, এতখানি গড়াবে!
আস্তে করে উঠে দাঁড়াল কিশোর। আপনি!
আমি ডক্টর জন স্মিথ।
হাঁ হয়ে গেছে জিনা। আপনি…আপনি গোঁফ কামিয়ে ফেলেছেন, মিস্টার ফোর্ড!
ওপরের ঠোঁটে আঙুল বোলালেন প্রফেসর। হাসলেন। ওটা নকল গোঁফ ছিল। ফোর্ড নামটাও বানানো। আমি আসলে ডক্টর জন এ. স্মিথ, রুকসটন ইউনিভার্সিটির অ্যানথ্রোপলজির প্রফেসর।
একুশ
হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মূর্তিটা দেখলেন প্রফেসর। চমৎকার কাজ। এ জিনিসে ভয় না পেলে আর কীসে পাবে?
সত্যিই কি কাজ হয়? মুসা জানতে চাইল।
সাপটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন প্রফেসর। যার বিরুদ্ধে করা হলো, সে না জানলে কিছুই হবে না। ভয় পেল কি, মরল!
আপনি খালাকে ভাল করতে পারবেন? জিনা বলল। বোঝাতে পারবেন, তার ওপর থেকে অভিশাপ দূর হয়েছে?
না, আমি পারব না। আমাকে কি ওঝার মত দেখাচ্ছে?
দেখাচ্ছে না, স্বীকার করল জিনা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নিখুঁত পোশাক। তোমার খালা আমাকে বাড়ির কাজের লোক হিসেবে দেখেছেন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে বালি পরিষ্কার করতে দেখেছেন, আমি বললে কি বিশ্বাস করবেন? না। এজন্যেই আউরোকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। গাড়িতে বসে আছে। কী কী করতে হবে, বুঝিয়ে দিয়েছি তাকে, করতে পারবে।
তিনি কি ওঝা? জানতে চাইল কিশোর।
জিপসি, প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন প্রফেসর। ভূতে পাওয়া এরকম আরও অনেককেই ভাল করেছে। আঁচিল সারাতে পারে, ভবিষ্যৎ বলতে পারে, শত্রুর পিঠে মাথা গজিয়ে দিতে পারে…)
দূর! তাই কি হয়? বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা।
নিজের চোখেই দেখবে, হাসলেন প্রফেসর। যাই, ওকে নিয়ে আসি।
মহিলাকে নিয়ে এলেন প্রফেসর। বৃদ্ধা, গালের চামড়া কোঁচকানো। মাথায় কয়েকটা রঙিন রুমাল বেঁধেছে, তাতেও পুরোপুরি ঢাকতে পারেনি লম্বা জটা। ব্লাউজ ফেকাসে নীল, সবুজ গাউন পায়ের পাতা ঢেকে দিয়েছে। কাপড়-চোপড়ে কেমন একটা পুরানো পুরানো গন্ধ, বালি নেই, তবু মনে হয় বালিতে ঢাকা। ঘন কাঁচাপাকা ভুরুর নিচে গভীর কালো উজ্জ্বল দুটো চোখ।
মূর্তিটা তুলে নিল মহিলা। এটাই?
হ্যাঁ, বললেন প্রফেসর।
হাহ! অবজ্ঞা দেখাল আউবো। এই, মেয়ে, এই, তোমরাও, ছেলেদের দিকে হাত তুলল সে। এসো আমার সঙ্গে। যা যা বলব, করবে। টু শব্দ করবে না। বুঝেছ।
বুঝেছি, কিশোর বল।
মেয়েমানুষটা কোথায়?
ওপরে, দোতলা দেখাল জিনা।
চলো, মূর্তিটা হাতে নিয়েই সিঁড়ির দিকে এগোল আউরো।
সিঁড়ির মাথায় দেখা হয়ে গেল মেরি চাচীর সঙ্গে। আরে, এ-কী! এই পাগল ধরে এনেছে কেন! আরে, এই, কিশোর…
ঠিকই আছে, চাচী, দুহাত তুলল কিশোর। ডক্টর স্মিথই নিয়ে এসেছেন ওকে।
ডক্টর স্মিথ? কখন এলেন? কই, আমাকে ডাকলি না কেন? এসব হচ্ছে কী?
পরে বলব, প্রফেসরের দিকে ফিরে বলল কিশোর। আমার চাচী।
সালাম জানালেন প্রফেসর।
মাথাটা সামান্য একটু নুইয়ে আবার কিশোরের দিকে ফিরলেন মেরি চাচী। পরে-টরে না, আমি এক্ষুণি জানতে চাই কী হচ্ছে এসব!
এই, বেটি, সরো! ধমক লাগাল আউরো।
কী! চেঁচিয়ে উঠলেন মেরি চাচী।
প্রমাদ গণল তিন গোয়েন্দা। বড় কেশ বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। ওঝা!
বলছি, সরো, আউরোও গলা চড়াল। আমার জরুরি কাজ আছে! শিগগির সরো, নইলে পরে পস্তাবে বলে দিচ্ছি!
দীর্ঘ এক মুহূর্ত দুজনের চোখে চোখ আটকে থাকল। তারপর তিন গোয়েন্দাকে অবাক করে দিয়ে এক পাশে সরে দাঁড়ালেন মেরি চাচী।
জিনার সঙ্গে মিস মারভেলের ঘরে ঢুকল আউরো, পেছনে তিন গোয়েন্দা। ওঝার ওপর ভক্তি বেড়েছে। দুর্ব্যবহার করে মেরি চাচীকে কুপোকাৎ করে দেয়া…আরিব্বাপ রে!
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ পড়ে আছে মিস মারভেল। তার পায়ের কাছে এসে ডাকল আউরো। অই, ভূতের বাসা! শুনছ? চাও!
চোখ পিটপিট করে তাকাল মিস মারভেল, শিউরে উঠে গায়ের চাদরটা গলা পর্যন্ত টেনে দিল।
বেটির মাথার তলায় বালিশ দাও, জিনাকে আদেশ দিল আউরো। ওরও দেখা দরকার।
এই যে, দেখো! মূর্তিটা উঁচু করে ধরল আউরো। শয়তানের বাহন।
আবার কেঁপে উঠল মিস মারভেল। বিলিয়াল, বিড়বিড় করল। বিলিয়ালের দূত!
হাহ! অবজ্ঞায় মুখ বাকাল আউরো। অমন কত দূত আছে আমার। যে-কোন একটা পাঠালেই বিলিয়ালের অস্তিত্ব বিনাশ করে দিয়ে আসবে! ঘুরে এসে মূর্তিটা বাড়িয়ে ধরল ওঝা। ধরো! এটা হাতে নাও!
না, না, আমি পারব না। দুহাত নাড়তে লাগল মিস মারভেল।
একশোবার পারবে, কড়া গলায় ধমক দিল আউরো। খপ করে মিস মারভেলের একটা হাত তুলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা আঙুলে গুঁজে দিল মূর্তিটা। বাঁচতে চাও? ধরো শক্ত করে!
এই প্রথমবার মিস মারভেলের চোখে আলো ঝিলিক দিয়ে গেল, আশার আলো। মূর্তিটা ধরল শক্ত করে।
ঢোলা গাউনের অসংখ্য পকেটের একটা থেকে সবুজ কাপড়ের থলে বের করল আউরো। ভারি গলায় একটা একটা করে শব্দ উচ্চারণ করল, সবুজ বসন্তের প্রতীক! জীবনের রঙ! থলেটা মিস মারভেলের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল, দাও, সাপটা ঢুকিয়ে দাও এর মধ্যে।
আউরোর চোখ থেকে চোখ না সরিয়ে থলের ভেতরে মূর্তিটা রেখে। দিল মিস মারভেল।
ব্যস, তাড়াতাড়ি থলের মুখ শক্ত, মোটা সুতো দিয়ে বেঁধে ফেলল আউরো। জিনাকে বলল, দরজা বন্ধ করো। মোম জ্বালো! এই, মেয়ে, নড়তে-চড়তে পারো না!