রাসলারের চেহারা দেখেছ! হাহ্ হাহ! হাসি ঠেকাতে পারছে না। কিশোর। ওর জানালা ধসে পড়বে, এটা কল্পনাও করেনি সে।
পারকারদের বাড়িতে ঢুকল পিকআপ। মেরি চাচী বোধহয় ওদের অপেক্ষায়ই ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজা খুলে উঁকি দিলেন। এতক্ষণ! মিস মারভেলের অবস্থা আরও খারাপ। এখানকার ডাক্তারকেই ডেকেছি, কী করব! জিনা, ডাক্তারকে পেয়েছ?
না, লাফ দিয়ে নামল কিশোর। মেরি চাচীকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়ল।
জিনা ছুটল পেছনে।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার, ডাক্তার বললেন। কিন্তু রাজি হচ্ছেন না উনি।
একেক লাফে দুটো করে সিঁড়ি টপকে উঠতে লাগল জিনা, কিশোর তার পেছনে পড়ে গেছে।
চুপসে যাওয়া মস্ত একটা পুতুলের মত বিছানায় নেতিয়ে পড়েছে। মিস মারভেল। জিনার গলা শুনে ফিরে তাকাল।
খালা, আর চিন্তা নেই, জিনা বলল। জিহাভোর শয়তানী ফাঁস হয়ে গেছে। একটা ঠকবাজ, খুনী। পুলিশ খুঁজছে এখন তাকে।
নড়ল না মিস মারভেল।
হাত ধরে ঝাঁকুনি দিল জিনা। ভাবনাচিন্তা এক্কেবারে বাদ দাও। তোমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।
জিনার হাতে হাত রাখল মহিলা। ফিসফিস করে বলল, জিনা, নেকলেসটা…
এক ঝটকায় সরে এল জিনা। না! দেব না! কী বলছি, শুনছ না? জিহাভো একটা ঠকবাজ খুনী। ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে জেলে ভরবে।
পুলিশ। কারও আর কিছু করতে পারবে না সে।
ওর বিরুদ্ধে কিছু করেছিস! তাজা আতঙ্ক ফুটল মিস মারভেলের চেহারায়। জিনা, ও আমাকে দুষবে!
যত্তসব! খালার কব্জি ধরে টানল জিনা। হয়েছে, ওঠো।
জিনার বাহুতে হাত রাখল কিশোর। ছেড়ে দাও। তাকে নিয়ে। হল-এ এল সে।এভাবে খালাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে লাভ হবে না, বোঝাল কিশোর। দেখছ না, জিহাভো জেলে যাবে শুনে আরও ভয়। পেয়ে গেছেন? একটাই উপায় আছে। কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হবে।
কীভাবে?
ভূত ছাড়াতে হবে।
জনাব কিশোর পাশা, মাথামুথা ঠিক আছে তো তোমার?
ওঁর ভূত ছাড়াতে হবে, জিনার কথা শুনতেই পায়নি যেন কিশোর। অভিশাপ তুলে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ওঝা ডাকব। এক ওঝা কাউকে বাণ মারলে সেটা ছাড়ানোর জন্যে আরেক ওঝা দরকার। বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে এসব। চাচা বলতে বলতে একেক সময় খেপে ওঠে।
হতাশ ভঙ্গিতে দেয়ালে হেলান দিল জিনা। বাংলাদেশ এখান থেকে অনেক দূর! ওঝা কোথায় পাব?
পাব, পাব, হাত তুলল কিশোর। বোকা মানুষ দুনিয়ার সব দেশেই আছে। আমার তো ধারণা, লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও বেশি আছে। পাগলও বেশি এখানে। বোকা মানুষ বেশি যেখানে, সেখানে ঠকবাজও বেশি। আমি জানি, কোথায় ওঝা পাওয়া যাবে।
নিচে নামল কিশোর। উদ্বিগ্ন মেরি চাচীকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে রবিন আর মুসা। গম্ভীর মুখে পায়চারি করছেন ডাক্তার।
রবিন, কিশোর বলল, রুকসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রফেসর, পুরো নাম কী যেন?
জন এ. স্মিথ।
হ্যাঁ, জন স্মিথ, রান্নাঘরে এসে ঢুকল কিশোর। জানালা দিয়ে তাকাল পাহাড়ি উপত্যকার দিকে। রবিন আর মুসাও ঘরে ঢুকল।
প্রফেসরকে দরকার? জানতে চাইল রবিন।
হ্যাঁ। ওঝা দরকার একজন। কীভাবে কী করতে হবে, প্রফেসর স্মিথ ভাল বলতে পারবেন।
অনুসন্ধান-এ ফোন করল কিশোর। প্রফেসর জন এ, স্মিথের নাম্বারটা বলবেন, প্লিজ? …হা হা, রুকসটন ইউনিভার্সিটি।
কাগজ-কলম নিয়ে রবিন তৈরি। জোরে জোরে নম্বরগুলো বলল কিশোর, রবিন লিখে নিল। থ্যাঙ্ক ইউ, বলে লাইন কেটে দিল কিশোর। এখন তাকে পেলে হয়। আবার ডায়াল ঘোরাল সে। ডক্টর স্মিথ আছেন?
খানিকক্ষণ নীরবতা। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে অপেক্ষা করছে। কিশোর। ওপাশ থেকে সাড়া আসতেই বলল, প্রফেসর? স্যর, আমি কিশোর পাশা, রকি বিচ থেকে বলছি। একটা সাহায্য করতে পারেন? টেলিফোনে ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারব না। একজন মহিলাকে, মানে তাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। আমরা…
চুপ করে শুনল কিশোর। তারপর বলল, হ্যাঁ, স্যর, খুব অসুস্থ।
আবার চুপ। শুনে বলল, গতকাল, স্যর। প্যাকেটে করে একটা সাপের মূর্তি পাঠানো হয়েছে। আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওপাশের কথা শুনে বলল, পারকার হাউস। মহিলার নাম মিস মারভেল। আবার। চুপচাপ। থ্যাঙ্ক ইউ, স্যর, থ্যাঙ্ক ইউ, বলে প্রফেসরকে পারকার হাউসের ঠিকানা দিয়ে রিসিভার রেখে দিল।
আসছেন, রবিন আর মুসার কৌতূহল নিরসন করল কিশোর। সঙ্গে করে ওঝা নিয়ে আসবেন, অভিশাপ দূর করার জন্যে।
খাইছে রে, বিড়বিড় করল মুসা। আল্লাই জানে কী হবে! ভুডুর ওস্তাদ নিশ্চয়?
এলেই জানা যাবে।
দরজা খুলে উঁকি দিলেন মেরি চাচী। কিশোর, কী করছিস?
ডাক্তারকে পেয়েছি, চাচী।
অউ, গুড! যাক, বাঁচা গেল। চেনা ডাক্তারের কথা হয়তো শুনবে। মহিলা।
দেখা যাক, কী হয়। তিনি আসছেন।
গুড। আমি গিয়ে বসি জিনার খালার কাছে। আর এই, শোনো তো, একজন গিয়ে ওই ঘোড়াটাকে বাঁধো! জানালা দিয়ে দেখলেন মেরি চাচী। ঝাড়-টাড় সব নষ্ট করে ফেলবে!
চাচীর পেছনেই এসে দাঁড়িয়েছে জিনা। বলল, আমিই যাচ্ছি।
জিনা, কিশোর ডেকে বলল, ডাক্তার আসছেন।
পেয়েছ তা হলে! খুব ভাল!
জিনা চলে গেল। মেরি চাচী গেলেন মিস মারভেলের ঘরে। বারান্দার সিঁড়িতে পা রেখে বসল ছেলেরা। খানিক পরেই ফিরে এল জিনা। কতক্ষণ লাগবে?
বেশি দেরি হবে না, কিশোর বলল।
সত্যিই দেরি হলো না, গেট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকল। এসে থামল গাড়ি-বারান্দায়। ইঞ্জিন বন্ধ হতেই ড্রাইভারের পাশের দরজা খুলে। লাফিয়ে নামল একজন লোক। কিশোর প্যাশাআ!