ইস, যদি জানা যেত জবাবটা! ফ্লাডলাইটের আলোয় কিশোরকে দেখেছে নিশ্চয় জিহাভো, আর তাকে দেখে থাকলে ফোর্ডকেও অবশ্যই দেখেছে। তাতে ভয় পেয়ে গেছে ঠকবাজটা?
নড়েচড়ে শুল কিশোর। এখন ফোর্ডকে খুঁজে পেলেই অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যেত। কিন্তু পাবে কোথায়? পুরো ব্যাপারটার চাবিকাঠিই বোধহয় ওই রহস্যময় লোকটা! ওদিকে মস্ত বিপদ, ধীরে ধীরে অসুস্থতা বাড়ছে মিস মারভেলের, এগিয়ে যাচ্ছে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। আর টারনার? তার কী হবে? সাপ কি পাঠানো হয়েছে তার কাছে?
ডাইনীবিদ্যার ওপর লেখা বইটার কথা মনে পড়ল কিশোরের, রবিন যেটা লাইব্রেরি থেকে এনেছিল; ফোর্ডের বাসায় যেটা দেখেছিল, সেই বই। লেখক রুকসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রকি বিচ থেকে রুকস্টন মাত্র দশ মাইল। হাসি ফুটল কিশোরের ঠোঁটে। পেয়েছে, সমাধান। পেয়েছে! ফোর্ডকে ছাড়াও চলবে, মিস মারভেলের জন্যে কিছু করতে পারবে এখন। ডক্টর জিহাভোর তাড়া রয়েছে, এটা খারাপ না হয়ে ভালই হতে যাচ্ছে জিনার খালার জন্যে।
উপায় একটা পেয়ে গেছে গোয়েন্দাপ্রধান, দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে।
উনিশ
সকাল সকালই পারকারদের বাড়িতে এল তিন গোয়েন্দা। হাতে খাবারের
ট্রে নিয়ে ওপরতলায় যাচ্ছেন মেরি চাচী। রান্নাঘরে ঢকঢক করে কমলার রস গিলছে জিনা।
নেকলেসটা নিয়ে কী করব ঠিক করে ফেলেছি, ছেলেদের দেখেই বলে উঠল সে। ফন হেনরিখের কাছে দিয়ে আসব। ও-ই সামলাক।
ভাল! সমর্থন করল রবিন।
তা তোমরা কী করেছ? মানে করবে?
লস অ্যাঞ্জেলেসে এক লোক আছে, তার নাম উলফ টারনার, একটা খাবারের দোকানের মালিক, গল্প বলছে যেন কিশোর। আশা করছি, এতক্ষণে তার কাছে সাপ পৌঁছে গেছে। জিহাভোর তাড়া আছে, কাজেই দেরি করবে না সে। রাসলারের প্রতিদ্বন্দী টারনার, বিলিয়ালেরও শত্রু, বলার ঢং পাল্টাল গোয়েন্দাপ্রধান। আমরা লস অ্যাঞ্জেলেসে যাচ্ছি।
খালার কী হবে? তার অবস্থা খুব খারাপ।
চাচী আছে, মনে করিয়ে দিল কিশোর। খালাকে দেখবে। তুমিও আছ। ফন হেনরিখকে ফোন করে বাসাতেই থাকতে হচ্ছে তোমাকে। কখন ওদের লোক আসে, কে জানে।
তা ঠিক। কিন্তু জিহাভো যদি আসে?
আসবে না। দেখে, জিনা, তোমার খালা সাপের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। এতেই অসুখ বাড়ছে তার। জিহাভো জানে এটা। জানে বলেই আসবে না, কখন তার চাহিদামত জিনিস যাবে সে-অপেক্ষায় থাকবে।
জিনিস যাবে না। খালা উঠতেই পারে না, পাঠাবে কে? একেবারে অচল হয়ে গেছে।
তোমার খালাকে বাঁচানোর একটা উপায় আছে, জিনা, কিন্তু টারনারের কথা আগে ভাবতে হবে আমাদের। তোমার খালার হাতে সময় আছে, কিন্তু টারনারের একেবারেই নেই।
কী করতে যাচ্ছ? ভুরু কোঁচকাল জিনা।
টারনারের দোকান বাঁচাতে যাচ্ছি, রবিন আর চেপে রাখতে পারল না।
তা হলে আমিও যাব, ঘোষণা করল জিনা।
না, তুমি যাচ্ছ না, সাফ বলে দিল মুসা। টারনার দুর্বল লোক না, তাকে নোয়াতে কষ্ট হবে জিহাভোর। গোলমাল হতে পারে।
হোক, আমি যাবই! জেদ ধরল জিনা। মেরি চাচী থাকছেন, জিহাভো আসছে না। নেকলেসটাও এখনও যেখানে আছে, নিরাপদেই আছে। আমার যেতে বাধা কী? তোমরা ওদিকে মজা লুটবে, আর আমি বসে বসে আঙুল চুষব? তা হবে না। আমি যাব।
ট্রে হাতে এসে ঢুকলেন মেরি চাচী। কোথায়?
লস অ্যাঞ্জেলেসে যাব, চাচী, বলতে একটুও দেরি করল না জিনা। খালার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিশোরকে আমার সঙ্গে যেতে বলুন না!
অবাক হলেন মেরি চাচী। অবস্থা খুব খারাপ, একটা দানাও মুখে দেননি সকালে, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা দরকারই, কিন্তু যাওয়া লাগবে কেন? লস অ্যাঞ্জেলেস কি কম দূর? ফোন করলেই পারো।
ডাক্তারের নাম ভুলে গেছি, ফোন নম্বরও জানি না। তবে তার চেম্বার চিনি, উইলশায়ারে, গির্জার পাশে একটা বাড়ি।
এত কষ্ট করবে? তার চেয়ে তোমার খালাকে জিজ্ঞেস করে দেখো না। নাম, নাম্বার, দুটোই হয়তো পেয়ে যাবে। আ খালা বলবে না। জিজ্ঞেস করিনি ভাবছেন? করেছি। আরেক দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। ভূতে ধরেছে, ডাক্তারের কথা শুনতে চাইবে কেন!
নীরবে জিনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন মেরি চাচী। দুহাত নাড়লেন। ঠিক আছে! কিশোর, দৌড়ে যা তো, বোরিসকে বল গে পিকআপটা নিয়ে আসতে। বাসে গেলে সারাদিন লেগে যাবে।
আনন্দে মেরি চাচীকে জড়িয়ে ধরল জিনা। ও, মাই সুইট আন্টি!
ছেলেরা মুখ গোমড়া করে থাকল। কিশোরের পেছনে বেরোল জিনা, তাদেরকে অনুসরণ করল অন্য দুজন। রাগে ফুলছে। টারনারকে সাহায্য করতে যাচ্ছে, কিছুতেই বলা যাবে না চাচীকে। বিপদ আছে শুনলে যেতেই দেবেন না চাচী।
ইয়ার্ডে প্রচুর কাজ, তা থেকে মুক্তি পেয়ে খুশিই হলো বোরিস। চুপচাপ পিকআপের পেছনে উঠে বসল ছেলেরা, জিনা বসল ড্রাইভারের পাশে।
বেভারলি অ্যাণ্ড থার্ড স্ট্রিটের মোড়ে গাড়ি পার্ক করল বোরিস। দরজা খুলে গলা বাড়াল। আমি আসব?
না, বলল কিশোর। এখানেই থাকুন। বসে বসে জিরোন। আমাদের দেরি হতে পারে।
হোক! একটা খবরের কাগজ খুলে আরাম করে বসে তাতে মন দিল বোরিস।
জিনাকে হা-না কিছুই বলল না ছেলেরা। অনেকটা বেহায়ার মতই তাদের সঙ্গে সঙ্গে এল সে।
ওই যে, রাসলারের দোকান, হাত তুলে দেখাল মুসা।
নাক বকাল জিনা, থুথু ফেলল মাটিতে, নোংরামি দেখে।