…তো চিড়িয়াখানায় ফোন করব, কথা শেষ করে দিল টারনার।
আরে, না না, ওই সাপের কথা বলছি না, জ্যান্ত সাপ নয়। হয়তো পাথরের, রবারের, কিংবা ধাতুর। হয়তো সাপের চেহারার টাই-পিনও পাঠাতে পারে। তবে সাপটা হবে, গোখরো। যা-ই আসুক না কেন, সাপের চেহারা হলেই ফোন করবেন, সঙ্গে সঙ্গে, এই ওপরেরটায় প্রথমে করবেন, কেউ না ধরলে নিচেরটায়।
কার্ডটা চুল, না টারনার। থমথমে হয়ে গেছে চেহারা।
দোকানের মালিকের চেহারা দেখে অস্বস্তি বোধ করছে মুসা, তাড়াতাড়ি বলল, আশা করি, আপনাকে সাহায্য করতে পারব। খুব। সাংঘাতিক ব্যাপার! কেউ একজন আপনার ক্ষতি করতে চায়। সাপ দেখলেই বুঝবেন, খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আমাদেরকে ডাকবেন…
ভাগো! হাত নাড়ল টারনার।
বুঝতে পারছেন না, মিস্টার টারনার…
ভাগো বলছি! বাদামী চোখ দুটো কঠিন।
সাপটা দেখলে হয়তো মত বদলাবেন… টারনারকে কাউন্টার ঘুরে আসতে দেখে থেমে গেল মুসা, পিছিয়ে গেল এক পা এক পা করে। যে-কোন সময় ফোন করবেন, কোন…
এখনও দাঁড়িয়ে… টারনারের কথা শেষ হওয়ার আগেই এক টানে। দরজা খুলে বেরিয়ে এল মুসা, রাস্তা পেরিয়ে একেবারে বাস স্টপেজে। বাস দাঁড়িয়েই আছে।
ভাবছে মুসা, সুবিধে করতে পারেনি সে। কিশোর হলে হয়তো অন্য রকম ঘটত। মানুষকে বোঝানোর ব্যাপারে ওস্তাদ কিশোর; অভিনয় করে, এভাবে-সেভাবে কথা বলে কী করে জানি আজগুবি কথাও বিশ্বাস করিয়ে ফেলে মানুষকে! টারনারের ব্যাপারে মুসা যা পারেনি, কিশোর হয়তো পারত।
বিকেলের দিকে ইয়ার্ডে ফিরে এল মুসা। রবিন আর কিশোর আছে। কোথা থেকে জানি পুরানো একটা সূর্যঘড়ি কিনে এনেছেন রাশেদ চাচা, ময়লা আর মাটিতে একাকার, হোস পাইপ দিয়ে পানি ছুঁড়ে সেটা ধুচ্ছে কিশোর।
কাছে এসে দাঁড়াল মুসা। রাসলারের শত্রুর নাম ডলফ টারনার। কঠিন ঠাই!
হুঁশিয়ার করেছ? জানতে চাইল রবিন।
করতে চেয়েছি। কাউন্টারে কার্ডও ফেলে এসোছ, দরকার মনে করলে আমাদের ফোন করবে। দোকান থেকে বের করে দিল সে আমাকে, আরেকটু দাঁড়িয়ে থাকলে মেরেই বসত।
বিশ্বাস করেনি, হোসের চাবি বন্ধ করে দিল কিশোর। জানতাম। কিন্তু সাপটা পেলেই অন্য রকম ভাববে। মানে, ভাবতে পারে।
ওর ফোনের অপেক্ষা না করাই ভাল, রবিন বলল। চলো, পুলিশের কাছেই যাই। কেউ তার নিজের ভাল না বুঝতে চাইলে, আমরা কী করতে পারি?
গেটে গাড়ির শব্দ হলো। তিনজনেই ফিরে তাকাল সেদিকে। পুলিশের গাড়ি ঢুকছে, একটা পেট্রোল কার। ড্রাইভিং সিটে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান, ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার।
আমাদেরকে আর পর্বতের কাছে যেতে হলো না, কিশোর বলল। পর্বতই চলে এসেছে!
গাড়ি থেকে নামলেন ক্যাপ্টেন। এই যে, ছেলেরা, এবার কী নিয়ে মেতেছ?
আমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে, স্যর? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।
জুভেনাইল ডিভিশন ফোন করল। তোমাদেরকে চিনি কিনা, জিজ্ঞেস করল। বলে দিয়েছি, চিনি, মুসার দিকে আঙুল তুললেন ফ্লেচার। টারনারের খাবারের দোকানে গিয়েছিলে।
ঢোক গিলল গোয়েন্দা সহকারী।
কার্ড আর ফোন নম্বর রেখে এসেছ, আবার বললেন ক্যাপ্টেন। ওরা ভাবছে, তুমি টারনারকে হুমকি দিতে গিয়েছিলে।
হুমকি! চমকে গেছে মুসা। হুমকি, কে বলল! হুশিয়ার করতে গিয়েছিলাম।
টারনারের সেটা মনে হয়নি। ও ধরে নিয়েছে, হুমকি। খুলে বলবে?
ও আনন্দের সঙ্গে, গম্ভীর হয়ে গেছে কিশোর, ভারি শব্দ ব্যবহার শুরু হলো তার।
ফাইন, বললেন ফ্লেচার। বলো।
জিনা আর মিস মারভেলের কথা বাদ দিয়ে, এ-যাবৎ আর যা যা ঘটেছে, সব খুলে বলল কিশোর। শেষে বলল, আমাদের অনুমান, মিস্টার টারনার বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। গান-গাওয়া সাপের, ক্ষমতা…
ব্যস ব্যস, হাত তুললেন ফ্লেচার, হয়েছে। ওসব কথা বাদ। এটা লস অ্যাঞ্জেলেস, খুঁজলে অনেক পাগল পাবে। প্রায়ই অঘটন ঘটিয়ে বসে ওরা। এক এক করে যদি ধরতে শুরু করি, জেলে জায়গা দিতে পারব না। যাক গে, গিয়ে এখন তোমাদের জন্যে সাফাই গাইতে হবে আরকী। জুভেনাইল পুলিশের কাছে। আমার একটা কথা শুনবে? ওভাবে আর কক্ষনো লোকের বাড়িতে চুরি করে ঢুকো না। নইলে সত্যি সত্যি একদিন গুলি খাধে।
চলে গেলেন ক্যাপ্টেন।
মুসা বলল, মিস মারভেল আর নেকলেসটার কথা বললে না কেন?
কী করে বলি? হাত নাড়ল কিশোর। হাজার হোক, জিনা আমাদের মক্কেল, তার খালার বদনাম ঢেকে রাখতে হবে আমাদের।
অফিসে ফোন বাজল। কেউ নেই, কিশোরই এসে রিসিভার তুলল। কয়েক সেকেণ্ড পরই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এল। জিনা! তার খালাকে সাপ পাঠানো হয়েছে! এইমাত্র!
আঠারো
দরজায় দাঁড়িয়ে তিন গোয়েন্দার অপেক্ষা করছে জিনা, উত্তেজিত, হাতে একটা গোখরো। চমৎকার একটা শিল্পকর্ম, ধাতুর তৈরি, একেবারে জ্যান্ত মনে হয়। কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে, তবে ভেতর থেকে উঁচু করে রেখেছে ফণা, ছোবল মারতে প্রস্তুত। জিনা মূর্তিটা উঁচু করতেই চকমক করে উঠল সাপের দুটো লাল পাথরের চোখ।
কে নিয়ে এসেছে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
ছেলেদের আগে আগে বসার ঘরে এসে ঢুকল জিনা। মূর্তিটা কফির টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, জানি না। বেল বাজতেই গিয়ে দরজা খুললাম। দেখি, একটা বাক্স পড়ে আছে।
হবে না কিছু, মুসা বলল।
আমারও মনে হয়, হবে না। তবে খালাকে নিয়ে ভাবনা। পিছন থেকে এসে আমার আগেই বাক্সটা তুলল খালা, ডালা খুলেই কাঁপতে শুরু করল।