জোরে নিঃশ্বাস ফেলল জিনা। তার মানে এই বাড়িতেই!
নিশ্চয়! আর কোথায় রাখব? তবে নিরাপদেই আছে। আমি বের করে না দিলে কেউ খুঁজে পাবে না। আর কাউকে বলিওনি।
খালার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসল জিনা। খুব ভাল করেছ, খালা। আমাদেরকেও বলার দরকার নেই। পুলিশকে জানব? খুব নরম গলায় বলল সে।
এখন প্রমাণ রয়েছে আমাদের হাতে, কিশোর বলল। পুলিশকে বলতে পারবেন, নেকলেসের জন্যে ওরা আপনাকে চাপ দিয়েছে, না দিলে ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়েছে।
না!
খালা, ওরা ভয়ানক লোক। লস অ্যাঞ্জেলেসেই ওদের শয়তানী শেষ নয়, অন্য জায়গায় গিয়েও করবে। তার আগেই পুলিশকে বলা দরকার। নইলে আরও অনেকের সর্বনাশ করবে।
কিন্তু কী করে বলি! আমার দোষে এক বেচারী পা ভেঙে শুয়ে আছে! না না, আমি বলতে পারব না! তোমরা জানো না, বললে কী হবে!
বেশ, অন্যভাবে ভেবে দেখুন, কিশোর বলল। নেকলেসটা নকল। বুঝতে কতদিন লাগবে জিহাভোর? তারপর কী ঘটবে? কী করবে সে আপনাকে?
চুপ করে রইল মিস মারভেল।
ভাবুন, খালা। নকল নেকলেস গছিয়ে ফাঁকি দিয়েছেন, বুঝতে বেশি সময় লাগবে না ওদের! তখন কী করবে?
সতেরো
ঘোরের মধ্যে রয়েছে যেন মিস মারভেল। তাকে এখন আর কোন কথা বলে লাভ হবে না, বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
মাথামোটা মেয়েমানুষ! রাগে জ্বলছে মুসা।
আহ, ভদ্রভাবে কথা বলো, মুসা, বিরক্তি ঝরল, রবিনের গলায়। কেউ নিজের ভাল না বুঝলে, তাকে বোঝাতে যাবে কে?
এক কাজ করতে পারি আমরা, কিশোর বলল। জিহাভোর প্ল্যান আমরা জানি, ও রাসলারের শত্রুকে ধ্বংস করতে যাচ্ছে। খাবারের দোকানটা খুঁজে বের করে ওটার মালিককে সাবধান করে দিতে পারি।
বিশ্বাস করবে? রবিন প্রশ্ন রাখল।
হয়তো করবে না। কিন্তু একটা কার্ড দিয়ে বলতে পারি, দরকার মনে করলে যেন আমাদের ফোন করে। সাপটা এলেই কৌতূহল জাগবে তার। আমার ধারণা, তখন আমাদের ডাকবে সে।
ইয়ার্ডে পৌঁছে সোজা অফিসে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। টেলিফোন ডিরেকটরি ঘেঁটে রাসলারের দোকানের নাম-ঠিকানা বের করল কিশোর। বলল, রাসলারস ফুড। বেভারলি অ্যাও থার্ড স্ট্রিট।
যাব কী করে? ভুরু নাচাল রবিন। বোরিসকে বলবে?
নাহ, বার বার ওকে বলা বোধহয় উচিত হবে না। তার চেয়ে। বাসেই যাওয়া ভাল। রাসলারের শত্রুর দোকানটা সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। ওই রাস্তায় শুধু দুটো খাবারের দোকান। কিন্তু তিনজনেরই যাওয়ার দরকার আছে কি? যদি জিনাদের বাড়িতে জিহাভো আসে আবার? আমি বরং এখানেই থাকি, কী বলো?
ইচ্ছে করলে তুমিও থাকতে পারো, মুসা তাকাল রবিনের দিকে। কাজটা এমন কিছু না, আমি একাই গিয়ে সেরে আসতে পারব।
সান্তা মনিকার বাস ধরল মুসা। সেখান থেকে গাড়ি বদল করে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসে চাপল। দুপুর নাগাদ এসে ঢুকল বেভারলি অ্যাণ্ড থার্ড স্ট্রিটে।
ঢুকেই রাসলারের দোকানটা চোখে পড়ল মুসার। বাস স্টপেজের উল্টো দিকে। দোকানের সঙ্গে দোকানের মালিকের হুবহু মিল রয়েছে। রাসলারের শার্টের মতই অপরিষ্কার তার দোকানের জানালা। গাড়ি রাখার জায়গাটায় ছেঁড়া খবরের কাগজের স্তূপ, মুসার সামনেই এক লোক একটা লেমোনেডের খালি বোতল সেখানে ছুঁড়ে ফেলল। ভাঙা কাঁচের টুকরো, খাবারের খালি টিন, এটা-ওটা নানারকম আবর্জনায় বোঝাই, যেন ডাস্টবিনের বদলে ব্যবহার হচ্ছে জায়গাটা।
পাশে তাকাল মুসা। একটা টেলিভিশন মেরামতের দোকান, তারপরে আরেকটা খাবারের দোকান। রঙ করা পরিষ্কার দেয়ালে পিতলের তৈরি ঝকঝকে হরফে বসানো: ডলফ টারনারস ফুড। কাঁচের দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভেতরে বিশালদেহী এক লোক, কালো চুল, বাক্সে খাবার ভরছে। তার কাছেই এক মহিলা, ইয়া বড় ভুড়ি, লিস্ট মিলিয়ে নিচ্ছে। সাদা ফরমাইকার কাউন্টারে একটা দাগ নেই; কাছে গেলে হয়তো দেখা যাবে, ধুলোও নেই এক কণা। আশপাশে আর কোন খাবারের দোকান চোখে পড়ল না।
রাসলারের শত্রুকে পাওয়া গেছে, বুঝল মুসা। মোটা মহিলা বেরিয়ে যাওয়ার পর সে গিয়ে ঢুকল। মিস্টার টারনার?
হ্যাঁ? তাকাল কাউন্টারের ওপাশের বিশালদেহী লোকটা।
আপনি মিস্টার টারনার? মানে, এই দোকানটা আপনার?
মুসার দিকে চেয়ে রইল লোকটা এক মুহূর্ত। মুসাও তাকে দেখল ভাল করে। মস্ত শরীর, কিন্তু এক বিন্দু বাড়তি মেদ নেই। বাইরে থেকে যা মনে হচ্ছিল, চুল একেবারে কালো নয়, ধূসর একটা ছোঁয়া রয়েছে: বাদামী চোখের তারা স্থির, উজ্জ্বল, পরিষ্কার। দেখেই বোঝা যায়, শরীরের যত্ন নেয় টারনার। কাজ চাইছ, খোকা? অবশেষে বলল সে। গত সপ্তায় একটু ছেলে নিয়ে ফেলেছি, তবু যদি চাও…
না না, চাকরির জন্যে আসিনি, হাত তুলল মুসা। আমি শিওর হতে চাইছি, এটা আপনারই দোকান কিনা।
হুঁ! টমাটোর আচার খারাপ পড়েছে? অসম্ভব…
…আমি ওসব কিছুই বলতে আসিনি! আপনিই মিস্টার টারনার তো?
হ্যাঁ, আমিই ডলফ টারনার, এ-দোকানের মালিক। কী চাও?
আপনাকে সাবধান করতে এসেছি, মিস্টার টারনার। কথাটা অবিশ্বাস্য শোনাবে হয়তো, কিন্তু অবিশ্বাস্য কাণ্ডই ঘটতে যাচ্ছে। ঠিক কী ঘটবে, এখনও জানি না; তবে খারাপ কিছু, সন্দেহ নেই। তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে কাউন্টারে রাখল মুসা, হেডকোয়ার্টারের টেলিফোন নম্বর লিখল। কী ভেবে তার তলায় ইয়ার্ডের নম্বরটাও লিখল। যদি সাপ দেখেন…