কিন্তু আমরা জানি, সাপের জন্যে হয়নি অ্যাকসিডেন্ট। জিহাভো কাউকে দিয়ে চাকার নাট ঢিল করিয়ে রেখেছে, ফলে খুলে এসেছে। চাকাটা। অ্যাকসিডেন্ট করেছে মিস পুল।
এখন রাসলারের সুবিধের জন্যে অন্য কারও ক্ষতি করার প্ল্যান করছে জিহাভো! রবিনের কণ্ঠে অস্বস্তি।
কপাল ডলল কিশোর। ওই রকমই কিছু করবে মনে হলো ওদের কথা শুনে।
পাগলামি! স্রেফ পাগলামি! বলে উঠল মুসা।
আমাদের কাছে, কিশোর বলল। কিন্তু মিস মারভেল? সে তো বিশ্বাস করে বসে আছে, মহাসর্প তাকে র্যামন ক্যাসটিলোর ক্রিস্টাল বল পাইয়ে দেবে। মিস গ্যানারিলের বাড়িওলীর সঙ্গে গোলমাল চলছিল, সেটাও নাকি মিটমাট করে দিয়েছে মহাসৰ্প।
রাসলার চাইছে ক্ষমতা। যে যা চাইছে, টাকার বিনিময়ে তাকে তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে জিহাভো। কিছু কেরামতি দেখিয়েছে সে।
কিন্তু ফোর্ডের ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না! সে কী চায়!
ওরও হয়তো টাকা চাই, রবিন অনুমান করল। তবে ব্ল্যাকমেইলার হোক, আর যা-ই হোক ওর কাছে তোমার কৃতজ্ঞ থাকতেই হবে। তোমাকে বাঁচিয়েছে।
তা রয়েছি। কিন্তু লোকটা কি সত্যি সত্যিই টাকা চায়?
বড় একটা রহস্য! গলা চুলকাল রবিন। তবে তথাকথিত শয়তান। উপাসকদের উদ্দেশ্য জানা গেছে। ওরা একদল ঠকবাজ, বোকাদেরকে ঠকিয়ে দুপয়সা কামিয়ে নিচ্ছে। তো, এখন কী করব আমরা?
পুলিশকে জানাব, পরামর্শ দিল মুসা।
বিশ্বাস করবে পুলিশ? কিশোর বলল।
কেন করবে না? মিস পলের অ্যাকসিডেন্ট তো মিথ্যে নয়।
অ্যাকসিডেন্ট? গাড়ির চাকা খুলে গেছে, অমন তো খুলতেই পারে। টরেনটি ক্যানিয়নে পুলিশকে নিয়ে যেতে পারি হয়তো। কিন্তু গিয়ে কী পাবে? দুজন মানুষ, আর কিছু কালো, মোমবাতি! না, এখনও পুলিশকে বলার সময় আসেনি। প্রমাণ দরকার।
ভ্যারাড প্রমাণ নয়? রবিন বলল। মিস মারভেলকে কিছু একটার জন্যে চাপাচাপি করছে না সে?
ভ্যারাড কি স্বীকার করবে সে-কথা? না মিস মারভেল তার বিপক্ষে বলবে? ঠোঁটে তালা এঁটে থাকবে সে।
কিন্তু ব্যাটারা কী চাইছে তার কাছে? মুসার প্রশ্ন।
টাকা নয়, অন্য কিছু। বোধহয় নেকলেসটার ওপর চোখ পড়েছে ব্যাটাদের।
কিন্তু ওটা পাচ্ছে না ওরা। ফন হেনরিখের ভল্টে… কথা শেষ
করতে পারল না রবিন, বাইরে থেকে ডাক শোনা গেল।
কিশোর! কিশোর পাশা! ট্রেলারের ছাতের ভেন্টিলেটার দিয়ে ভেসে এল তীক্ষ্ণ কণ্ঠ।
জিনা! লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর।
এক টানে দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা তুলে ফেলল মুসা। নিশ্চয় কোন বিপদ!
পাইপের ভেতর দিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারল, ওয়ার্কশপে বেরিয়ে এল ছেলেরা। ছুটল।
ছোট অফিসটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে জিনা। কাঁদো কাঁদো ভাব। এক গালে লাল একটা দাগ। বলল, ডক্টর জিহাভো! আমাদের বাড়িতে!
শিস দিয়ে উঠল মুসা। ও-ই মেরেছে?
কী! মুসার দিকে ফিরল জিনা।
গালে লাল দাগ। চড় মেরেছে বুঝি?
পেছনে চুল সরাল জিনা। না, খালা।
দূর, কী বলছ! তোমার খালা মেরেছেন?
মারতে চায়নি! খুব ভয় পেয়ে গেছে, তাই। জানালা দিয়ে দেখল, কালো একটা গাড়ি ঢুকছে। গাড়ি-বারান্দায় থামল গাড়িটা, কালো আলখেল্লা আর টুপি পরা জিহাভো নামল। গার্ড ছুঁচোটা শোফার সেজেছে। আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলল খালা। মানা করে দিলাম। রেগে গিয়ে চড় মারল আমাকে খালা, ঠেলে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দরজা লাগিয়ে দিল। এই সময় সামনের দরজায় বেল বাজল, বিষণ্ণ হাসি হাসল জিনা।
এখন তো পুলিশের কাছে যাওয়া যায়? কিশোরের দিকে ফিরল মুসা।
না, যায় না, জবাবটা দিল জিনা। সময় নেই। বুঝতে পারছ না, তিনটে শয়তানের সঙ্গে বাড়িতে একা খালা। ওরা যা খুশি করতে পারে।
চলো, তোমাদের বাড়িতেই যাই! ব্যস্ত হয়ে বলল কিশোর। জলদি!
চারজন দৌড় দিল একই সঙ্গে। কিন্তু তবুও দেরি হয়ে গেল। দেখল, গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কালো গাড়িটা। গাড়ি চালাচ্ছে রড, তার পাশে ভ্যারাড। জিহাভো পিছনের সিটে।
সদর দরজার তালা খোলা। এত জোরে ধাক্কা মারল জিনা, ভ্রামম করে দেয়ালের সঙ্গে বাড়ি খেল পাল্লা। খালা! খালাআ! চেঁচিয়ে ডাকল সে।
সোনালি-সবুজ বসার ঘরে গুম হয়ে বসে আছে মিস, মারভেল। দেখেই বলে উঠল, জিনা, জিনা, কিছু মনে করিস না, মা! আমার মাথার ঠিক ছিল না!
ছুটে গেল জিনা। তোমার কিছু হয়নি তো, খালা!
না, আমি ঠিক আছি, থিরথির করে গলা কাঁপছে মিস মারভেলের। চিবুকে চোখের পানি শুকিয়ে দাগ লেগে আছে। মিস্টার ভ্যারাড, আর. আর…
ডক্টর জিহাভো? বলল কিশোর।
অন্ধের মত দুহাত বাড়িয়ে এগোল মিস মারভেল, একটা চেয়ার হাতে ঠেকতেই তাতে বসে পড়ল।
নেকলেসটা চায় ওরা? আবার প্রশ্ন করল কিশোর। নকলটা দিয়ে দিয়েছেন তো?
স্থির দৃষ্টিতে এক মুহূর্ত কিশোরের দিকে চেয়ে রইল মিস মারভেল, একে একে নজর দিল অন্য তিনজনের দিকে। তোমরা জানো?
জানি, কিশোর জবাব দিল। আপনাকে শাসিয়েছে ওরা, খালা?
আবার কেঁদে ফেলল মিস মারভেল। আরিব্বাপ রে! কী সাংঘাতিক! সাংঘাতিক! বলল, বিনিময়ে কিছু দিতেই হবে! গাউনের পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছল। নাকের পানি মুছল। কিন্তু ফাঁকি দিতে পেরেছি ওদের। বুদ্ধিটা ঠিকই হয়েছে, না? নকলটা নিয়ে চলে গেছে ওরা, আসলটা নিরাপদ।
ফন হেনরিখের কাছে? জানতে চাইল কিশোর।
না, তা হবে কেন? ও দুটোই দিয়ে গেছে। আসলটা এনেছিল সাধারণ কাগজে পোটলা করে। চট করে গাউনের পকেটে রেখে দিয়েছিলাম ওটা, তারপর সুযোগ বুঝে লুকিয়ে ফেলেছি।