দারুণ, না? কিশোরকে দেখিয়ে বলল জিনা। দারুণ হবে না?
সীসের মত ভারি! জিনা বলল। ভারি বলেই পরে না মা। আরেকটা হালকা হার আছে, ওটা পরে সব সময়। হীরা আমারও পছন্দ, তার চেয়ে মুক্তো ভাল। হালকা। তবে কিনেছে যখন, এই হারটাই পরে থাকা উচিত ছিল মা-র। যে-কোন আয়রন, সেফের চেয়ে গলায় থাকা অনেক নিরাপদ।
অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল মিস মারভেল। জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই বলল, ওই যে, এসেছে!
রকি বিচের আপদ! মুখ কালো করে ফেলল জিনা। নাপিত ওর গলাটা কেটে দিল না কেন!
জিনা, জলদি সেফে রেখে দে নেকলেসটা!
দড়াম করে গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হলো। গাউনের পকেটে হাত ঢোকাল মিস মারভেল, হাতটা যেন দেখাতে চায় না, তাই লুকিয়ে ফেলল। যা, দেরি করছিস কেন!
বাক্সসহ হারটা নিয়ে চলে গেল জিনা। ঝটকা দিয়ে দরজা খুলে ঘরে এসে ঢুকল ভ্যারাড, আর এক মুহূর্ত আগে ঢুকলেই জিনার হাতে বাক্সটা দেখতে পেত। হেয়ার টনিকের মিষ্টি ঝাঁঝাল গন্ধ এসে লাগল কিশোরের নাকে।
খানিক পরেই সিঁড়ির মাথায় দেখা দিল আবার জিনা। কিশোর, পরে কথা বলব।
আচ্ছা, আমি যাই, দরজার দিকে পা বাড়াল কিশোর।
সারাদিন ইয়ার্ডে কাজ করল কিশোর, কান টেলিফোনের দিকে। বিকেল পাঁচটায় জিনার ফোন এল।
আজ সকালে খালার ব্যবহারে অবাক হওনি? জিনা বলল।
হয়েছি, জবাব দিল কিশোর। একটা ব্যাপার পরিষ্কার, নেকলেসটা আবার বাড়িতে ফিরে এসেছে, এটা কিছুতেই ভ্যারাডকে জানতে দিতে চান না।
হ্যাঁ। ভ্যারাড নাপিতের দোকানে যাওয়ার পর নিশ্চয় ফোন। করেছিল খালা, তাড়াতাড়ি হারটা ডেলিভারি দিয়ে যেতে বলেছিল ফন হেনরিখকে। কিন্তু এতসবের কী দরকার ছিল? হারটা থাকত পড়ে হেনরিখের দোকানে, মা এসে আনিয়ে নিতে পারত।
তার মানে হারটা তোমার খালার দরকার।
কী দরকার! চেঁচিয়ে উঠল জিনা। ওটা আমার মায়ের জিনিস! খালার না!
সে তো ঠিকই। এক কাজ করতে পারবে? জিনিসটা একবার নিয়ে আসতে পারবে আমাদের এখানে? কাজ আছে।
নিশ্চয়ই, সামান্যতম দ্বিধা নেই জিনার গলায়। জ্যাকেটের পকেটে করেই নিয়ে আসতে পারব। কেউ দেখবে না।
ভেরি গুড। নিয়ে এসো। আমি ওয়ার্কশপে আছি।
ছটা নাগাদ জিনা এল। বাক্সসহ হারটা কিশোরের হাতে দিয়ে। খানিকক্ষণ আলাপ-আলোচনা করে চলে গেল।
পরদিন ওয়ার্কশপে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা আর জিনা। বোরিসকে এক জায়গায় পাঠিয়েছে কিশোর, তার ফেরার অপেক্ষা করছে। ওরা!
দুপুর দুটোয় ফিরল বোরিস। একটা বাক্সে বসে পকেট থেকে সবুজ বাক্সটা বের করে ডালা খুলল। খুবই সুন্দর জিনিস, মিস পারকার, জিনার দিকে চেয়ে হাসল সে। কিন্তু কোন দাগ নেই।
দাম নেই! লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল জিনা। জানেন, ওটা ইউজেনির সম্রাজ্ঞীর জিনিস! অনেক দামী, ঐতিহাসিক মূল্য ধরলে তো কথাই নেই!
একটু যেন থমকে গেল বোরিস। সরি, মিস পারকার, কিন্তু আমি ঠিকই বলছি। সম্রাজ্ঞীর জিনিস নয় এটা, মেকি। তিনটে বড় বড় দোকানে দেখিয়েছি, একই কথা বলল। একজন তো হেসে রসিকতাও করল, ইনশিওরেন্স করাতে বলল।
মেকি! দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন জিনার। দিন!
বাক্সটা জিনার হাতে দিয়ে উঠল বোরিস। আমি যাচ্ছি। কিশোর, মিসেস পাশা কিছু বলেছেন? খুঁজেছেন আমাকে?
খুঁজেছিল, আমি বলেছি।
আচ্ছা, বেরিয়ে গেল বোরিস।
ওকে পাঠালে কেন? জিনা বলে উঠল। তুমি গেলেই পারতে?
না, পারতাম না, মাথা নাড়ল কিশোর। আমার বয়েসী কারও হাতে ওই জিনিস দেখলে লোকে সন্দেহ করত। বোরিস বড় মানুষ…তখন অবশ্য জানতাম না ওটা নকল!
আমি যাচ্ছি!
তোমার খালাকে জিজ্ঞেস করবে নিশ্চয়?
করব মানে! কঠিন গলা জিনার। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব! পেয়েছে কী? আসলটা কী করেছে না জেনে ছাড়ব মনে করেছ?
কী করেছেন, অনুমান করতে পারি, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। নকল একটা বানিয়ে এনেছেন তোমাদের সেফে রাখার জন্যে। আসলটা রয়ে গেছে ফন হেনরিখের কাছে। ইচ্ছে করেই আনাননি তোমার খালা।
ধীরে ধীরে আবার বাক্সের ওপর বসে পড়ল জিনা। তাই তো! এটা তো ভাবিনি! আগাথা ক্রিস্টির পোয়ারোকে হার মানাচ্ছ তুমি, কিশোর পাশা, নাহ, স্বীকার করতেই হচ্ছে। তার মানে আসল হারটা নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে খালা!,
কিন্তু নকল হার বানানোর দরকার কী ছিল? মুসা ঠিক বুঝতে পারছে না। কী করবে এটা দিয়ে?
ভ্রূকুটি করল জিনা। ওই ছুচো ভ্যারাডটা বোধহয় কোনভাবে ভয় ঢুকিয়েছে খালার মনে! আসল হারটা তাই ব্যাটাকে দেখতে দিতেই রাজি নয় খালা।
ভ্যারাড হারটা চুরি করবে, এই ভয়? রবিন বলল।
তা হলে তো ভালই, বলে উঠল মুসা। পালাক না! নকল হার নিয়ে ভাগুক ছুঁচোটা, জিনাও বাঁচুক।
এত সহজ চুরির কেস বলে মনে হচ্ছে না আমার, কিশোর বলল। সাংঘাতিক কোন ঘাপলা রয়েছে! মিস অ্যানি পলের অ্যাকসিডেন্ট, প্রেতবৈঠক, মহাসর্পের গান, সব কিছু মিলিয়ে কোথায় জানি একটা মস্ত প্যাঁচ রয়েছে। তারই মাঝে কোনভাবে জড়িয়েছে এই হারের ব্যাপারটা।
এখনও কি গান শোনা যায়? জিনাকে প্রশ্ন করল রবিন।
না। আর একদিনও শুনিনি।
ভয় করে বাড়িতে থাকতে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
একটু যে করে না, তা বলব না!
এক্ষুণি তোমার কোন বিপদ নেই, কিশোর অভয় দিল, এটুকু বলতে পারি। তোমাকে ভ্যারাড যতক্ষণ না সন্দেহ করছে, তুমি নিরাপদ। ব্যাপারটাতে ফোর্ড জড়িত, আবার ফিরে আসবে সে কোনভাবে, তবে তাকে বিপজ্জনক লোক মনে হলো না। আর যা-ই করুক, মানুষের রক্তে হাত রাঙাবে না।