আচ্ছা, উদ্দেশ্য কী ছিল ওর? মুসা বলল। ব্ল্যাকমেইল?
হতে পারে।
জিনা আমাদেরকে বললে পারত, তিক্ত শোনাল মুসার কণ্ঠ। আজ রাতে ফোর্ড বাসায় যাবে!
জানে না হয়তো।
হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। টেলিফোন বাজছে।
লাইনের সঙ্গে স্পিকারের কানেকশন রয়েছে, সুইচ অন করে দিয়ে রিসিভার তুলল কিশোর। জিনার কণ্ঠ শোনা গেল। কিশোর?
হ্যাঁ, কিশোরের চাঁছাছোলা জবাব। ফোর্ড ধরে ফেলেছিল আমাদেরকে।
সরি, আন্তরিক দুঃখিত মনে হলো জিনাকে। জানার পর তোমাদেরকে জানানোর অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু বেরিয়ে গেছ তোমরা তখন। ও বলল, বাসায় কী জরুরি কাজ আছে। কী করে আটকাই, বলো? চাপাচাপি করতে পারতাম, তাতে লাভ হত কী?
করে দেখতে পারতে, ক্ষোভ যাচ্ছে না কিশোরের। আমার শার্ট ছিঁড়ল; ও জেনে গেল, ওর ওপর আমরা গোয়েন্দাগিরি করছি; তোমারও আরেকজন কাজের লোক গেল।
আর ফিরে আসবে না বলছ?
দ্বিধা করল কিশোর। গরু হলে আসবে! ওর ঘরে ঢুকে এমন সব জিনিসপত্র পেয়েছি, প্রমাণ করতে পারলে কয়েক বছর জেল হয়ে যাবে। ওর। তোমার খালাকে বোধহয় ব্ল্যাকমেইল করার তালে ছিল ফোর্ড। সেরাতে গ্যারাজে লুকিয়ে ছিল ও-ই, বৈঠকের কথাবার্তা আর গান রেকর্ড করেছে।
ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ব্যাপারটা! খালাকে ব্ল্যাকমেইল করবে কী কারণে? কী অপরাধ করেছে খালা?
মিস অ্যানি পলের অ্যাকসিডেণ্টের জন্যে কে দায়ী?
চুপ করে রইল জিনা।
তোমার খালা কোথায়? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ওপরে। মন খারাপ।
ভ্যারাড?
লাইব্রেরিতে। কিছু একটা করছে।
ওই গান আর শুনেছ?
না। বাড়িটা কবরের মত নীরব।
ঠিক আছে, চোখ খোলা রাখো। সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবে। ফোর্ড ফিরলে তা-ও জানাবে।
কিন্তু ফোর্ড ফিরল না। পরদিন সকালে ইয়ার্ডে ফোন করে। কিশোরকে জানাল জিনা। দুপুরের আগে রবিনকে নিয়ে আবার সান্তা মনিকায় গেল কিশোর। আগের দিনের মতই বড় বাড়িটার সদর দরজায়। গিয়ে বেল বাজাল। আজ জবাব পেল, দরজা খুলে দিল এক শীর্ণকায় বৃদ্ধা। জানাল, সকাল বেলায়ই ঘর খালি করে মালপত্র নিয়ে চলে গেছে। ফোর্ড।
কোথায় গেছে বলতে পারেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর। দোকানে বিল বাকি ফেলে গেছে।
জানি না, মাথা নাড়ল বৃদ্ধা। কোত্থেকে একটা গাড়ি আর ট্রেলার এনে মালপত্র তুলে নিয়ে চলে গেল।
তেরো
খুব অসুবিধে হচ্ছে, কিশোরকে বলল জিনা। ফোর্ড গেছে তিন দিন হয়েছে। অন্তত খাওয়া-দাওয়াটা তো ঠিকমত করতে পারতাম। সারাদিন গুম হয়ে বসে থাকে খালা। ভ্যারাড় আছে আগের মতই, সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে খালাকে।
এখন কোথায়? নিশ্চয় ঘুমোচ্ছে? বেড়ার বাইরে রয়েছে কিশোর।
না, চুল কাটাতে গেছে।
এই সক্কাল বেলা!
আজকাল ভোরে ভোরেই উঠে পড়ে, ছুঁচোবাজি কমিয়ে দিয়েছে কেন জানি!
কী কী আলোচনা করে দুজনে? তারের বেড়ার ভিতরে ঘাস খাচ্ছে। আপালুসাটা, দেখছে কিশোর।
কোন আলোচনাই নয়।
উদ্ভট কিছুতে জড়িয়ে পড়েছেন তোমার খালা। প্রেততত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছে রবিন কদিন ধরে; ও বলছে, তোমার খালা প্রেতসাধকের পালায় পড়েছেন, প্রেতসাধনা চালাচ্ছেন। ছুরির ডগা দিয়ে। বিছানায় চক্র একে তাতে বসে থাকা, মোম জ্বেলে মন্ত্র পড়া, কিংবা রঙের ওপর বিশেষ জোর দেয়া, এসব প্রেত পূজারিরাই সাধারণত করে থাকে।
কদিন ধরে মোম জ্বালছে না খালা।
আগামী হপ্তায়ই তো র্যামন ক্যাসটিলোর বাড়িতে নিলাম, কথার মোড় ঘোরাল কিশোর। তোমার খালা যাচ্ছেন? ক্রিস্টাল বল কেনার জন্যে বোধহয় যেতে পারবেন না মিস পল।
আগামী এক মাসও কোথাও যেতে পারবে না। পায়ের হাড় দু জায়গায় ভেঙেছে। খালা খালি নিজেকে দোষ দিচ্ছে। রোজ সকাল বিকাল ফোন করে হাসপাতালে, নার্সের কাছে খবর নেয় মিস পল কেমন আছে।
ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন শুনে দুজনেই তাকাল বাড়ির সামনের দিকে। চকচকে কালো একটা লিমাজিন ঢুকছে। গাড়ি-বারান্দায় এসে থামল গাড়িটা, শোফার নেমে পেছনের দরজা খুলে ধরল। খুব দামী পোশাক আর, দস্তানা পরা একজন বেঁটেখাটো লোক বেরিয়ে এল।
ভুরু কোঁচকাল জিনা। মিস্টার ফন হেনরিখ!
কিশোরও দেখছে লোকটাকে।
সাধারণ জিনিস হলে কর্মচারী দিয়ে পাঠিয়ে দেয়, আবার বলল জিনা। বোধহয় নেকলেসটা নিয়ে এসেছে। চলো তো, দেখি।
বেড়া ডিঙিয়ে এপারে চলে এল কিশোর। জিনার সঙ্গে রান্নাঘর দিয়ে। হল-এ ঢুকল। ফন হেনরিখের হাত থেকে একটা প্যাকেট নিচ্ছে মিস। মারভেল। কিশোর লক্ষ করল; সেই নীলচে-লাল গাউনটাই পরে আছে মহিলা, তবে আগের মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়, জায়গায় জায়গায় কুঁচকে গেছে, ময়লা; ধোয়া হয় না কতদিন, কে জানে। এক কাপড় অনেক দিন পরছে মনে হচ্ছে।
মাল ডেলিভারি দিয়ে রিসিপ্ট এবং ধন্যবাদ নিয়ে চলে গেল ফন হেনরিখ।
জিনা… বলতে বলতেই কিশোরের দিকে চোখ পড়ল মিস মারভেলের। ভুরু কোঁচকাল। আরে, কিশোর। গুড মর্নিং! কখন এলে?
এই তো, এক পা এগোল কিশোর! কেমন আছেন, খালা?
ভাল না। জিনার দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল খালা। নে, নেকলেস। খুলে দেখ তো, কেমন পরিষ্কার করেছে?
সাদা কাগজের আবরণ ছিঁড়ে গাঢ় সবুজ রঙ করা চামড়ার একটা বাক্স বের করল জিনা। বাক্সের ডালা তুলতেই ঝিলিক দিয়ে উঠল একশোরও বেশি পাথর, ঠাণ্ডা, সাদা আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে।