আছে। এই যে, আরেকটা মনে হয় সেই মোটা মহিলা, সবুজ পোশাক পরেছিল যে। লোনের জন্যে ব্যাঙ্কে দরখাস্ত করেছে, আরেকটা দোকান করবে। আরও অনেকের নাম লেখা আছে, তাদেরকে চিনি না আমরা।
ম্যাজিক অ্যাণ্ড উইচক্র্যাফট, টেবিলে রাখা বইটায় আঙুল রাখল রবিন। সেই সঙ্গে টাকা!
টাকার সঙ্গে প্রেততত্ত্বের সম্পর্ক আছে বোধহয়, কিশোর বলল।
টান দিয়ে একটা ড্রয়ার খুলল মুসা। কয়েকটা পেপার ক্লিপ আর। একটা ছোট টেপরেকর্ডার, ব্যস, আর কিছু নেই। রেকর্ডারে টেপের ছোট একটা স্কুল লাগানো রয়েছে! দারুণ জিনিস। মেরে দিলে কেমন হয়?
যন্ত্রটা তুলে নিল রবিন। সত্যিই ভাল! ব্যাটারিতে চলে। ছোট একটা বোতাম টিপতেই এক প্রান্তের একটা খোপের দরজা খুলে গেল। ভেতরে খুদে মাইক্রোফোন। বাহ! চমৎকার! পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার জিনিস। জেমস বণ্ড এটা পেলে বর্তে যেত।
কিন্তু কী টেপ করা হয়েছে? যন্ত্রটার দিকে চিন্তিত চোখে চেয়ে। আছে কিশোর। দেখো তো, প্লে করা যায় কিনা।
বোতামের কাছে নির্দেশ চিহ্ন রয়েছে, একটা বোতাম টিপল রবিন। মৃদু হিররর শব্দে ঘুরতে শুরু করল ফিতে, পুরোটা রিভার্স করে নিয়ে প্লে লেখা বোতামটা টিপল সে। কয়েক সেকেণ্ড খুটখাট করার পর ভেসে এল। একটা পুরুষ কণ্ঠ: শুরু করা যায়!
ভ্যারাড! চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
সবাই আসেনি আজ রাতে। ডাক্তার শয়তান আজ দেখা না-ও দিতে পারেন। যোজন যোজন দূরে রয়েছেন মহাসর্প, তিনি কথা বলবেন কিনা, তাই বা কে জানে! তবু চেষ্টা করে দেখা যাক!
টেপরেকর্ডারটা পারকারদের বাড়িতে কোথাও লুকিয়ে রাখা। হয়েছিল! মুসা বলল।
ডাইনিং রুমের কাছাকাছি কোথাও হবে, ভেবে বলল রবিন।
স্পিকারে জেরি গ্যানারিলের কোলা ব্যাঙের মত কণ্ঠস্বর শোনা গেল, রাসলারের ঘোঁত ঘোত আর অন্যান্য কথাবার্তা সবই শোনা গেল স্পষ্ট। তারপর ভেসে এল সেই গা-শিউরানো গান, ভরে দিল যেন ঘর!
মহাসর্প! ফিসফিস করল কিশোর।
শিউরে উঠে আস্তে করে যন্ত্রটা টেবিলে নামিয়ে রাখল রবিন। বিচ্ছিরি গান গেয়েই চলেছে মহাসৰ্প।
ধীরে ধীরে শেষ মাথায় পৌঁছে গেল ফিতে, গুঙিয়ে উঠে আরেকবার ফুঁপিয়েই শেষ হয়ে গেল গান। স্পিকারের স্বাভাবিক অতি মৃদু সসস ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল কিশোরের, শীতেই বোধহয়। হঠাৎই খেয়াল করল, ঘরে আলো নেই, কখন ডুবে গেছে সূর্য। আবছা অন্ধকার।
দরজায় শব্দ হতেই একসঙ্গে ঘুরল তিন গোয়েন্দা। ফোর্ড!
বারো
ইয়াল্লা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
লাফ দিয়ে গিয়ে টেপরেকর্ডারের সুইচ অফ করে দিল রবিন।
স্থির দাঁড়িয়ে আছে কিশোর; ফোর্ডকে কী বলবে, ভাবছে। আমতা আমতা করে বলল, আমরা চলে যাচ্ছিলাম।
দরজায় একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোঁফওয়ালা লোকটা। যে পথে ঢুকেছ সে-পথে? জানালা দিয়ে ঢুকেছ, না? ঝাঝাল কণ্ঠস্বর, খোলস। পাল্টে ফেলেছে, বাড়ির নম্র কাজের লোক আর নয় এখন না। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে ফোর্ড; কিশোরের মনে হলো, ডিনামাইট ছাড়া তাকে ওখান থেকে নড়ানো যাবে না। পালানোর উপায় খুঁজল। রবিন, হাত বাড়াল সে। টেপটা।
রেকর্ডার থেকে খুলে টেপের শুলটা কিশোরের হাতে দিল রবিন।
ওটা আমার। কপাল কুচকে গেছে ফোর্ডের।
স্পুলটা বাড়িয়ে ধরল কিশোর। রেকর্ড করলেন কী করে? ডাইনিং রুমে কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলেন?
প্রায় অন্ধকার ঘরের ভেতরে লাফিয়ে এসে পড়ল ফোর্ড। খপ করে চেপে ধরল কিশোরের হাত।
দৌড় দাও! বন্ধুদেরকে চেঁচিয়ে বলল কিশোর।
খোলা দরজার দিকে দৌড় দিল দুই সহকারী গোয়েন্দা। হাত থেকে শুলটা ছেড়ে দিল কিশোর। ফোর্ডের বা হাটুর পেছনে ডান পা বাধিয়ে হ্যাঁচকা টান মারল।
পেছনে বাঁকা হয়ে গেল ফোর্ডের শরীর, গাল দিয়ে উঠল সে। স্কুলের ফিতের এক প্রান্ত ধরে রেখেছিল কিশোর, মেঝেতে ছড়িয়ে পডেছে ফিতে, প্রান্তটা ছেড়ে দিয়ে আচমকা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়েই দৌড় দিল।
কিশোর দরজার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে, এই সময় পেছন থেকে তার শার্ট চেপে ধরল ফোর্ড। কিন্তু গতি সামান্যতম শিথিল করল না। কিশোর। শার্টের পিঠের খানিকটা ছিঁড়ে ফোর্ডের হাতে রয়ে গেল, কেয়ারই করল না গোয়েন্দাপ্রধান, একেক লাফে দুতিনটে করে সিঁড়ি টপকে নিচে নেমে চলল।
অনুসরণ করল না ফোর্ড। হাতে ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো নিয়ে হাঁ। করে চেয়ে আছে। সাঁই সাঁই প্যাড়াল করে সাইকেল নিয়ে চলে যাচ্ছে তিন কিশোর।
.
গোলমাল রাধাবে না তো ফোর্ড? পাশাপাশি সাইকেল চালাতে চালাতে এক সময় বলল মুসা। হয়তো পুলিশে ফোন করবে। করলে আমরা বলে। দেব টেপ আর ফাইলের কথা।
ও-দুটো জিনিস সহজেই নষ্ট করে, কিংবা লুকিয়ে ফেলা যায়, কিশোর বলল। আমরা রীতিমত অপরাধ করেছি। চুরি করে ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করেছি, অভিযোগ করতে পারবে সে। জিনাদের বাড়িতে দেখেছে আমাদের; কোথায় থাকি, সহজেই বের করে ফেলতে পারবে।
তো, আমরা এখন কী করব? রবিনের প্রশ্ন।
ইয়ার্ডে ফিরে আগে জিনাকে ফোন করব। হয়তো কিছুই করবে না। ফোর্ড। ও যে রাতে চুরি করে পারকারদের গ্যারাজে ঢুকেছে, এটা তো মিথ্যে নয়। তা ছাড়া লোকের ব্যক্তিগত ব্যাপারে খোঁজখবর করে। তাদের সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরি করেছে। অপরাধবোধ আছে তার মনে। পুলিশকে ফোন করার আগে অন্তত দশবার ভাববে।