কিন্তু কোনটাতে থাকে ফোর্ড, কী করে জানব? মুসা বলল।
বড় বাড়িটায় কাউকে জিজ্ঞেস করব। বলব, আমরা ফোর্ডের ভাইপোর বন্ধু, ওয়েস্টউড় যাচ্ছিলাম; ভাবলাম, ফোর্ড চাচার সঙ্গে দেখা করে যাই, হাসল কিশোর।
ফোর্ডের ভাতিজা। হা হা! সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়াল রবিন।
সাইকেলটা পথের ওপর শুইয়ে রেখে হেঁটে গিয়ে সদর দরজায় দাঁড়াল কিশোর, বোতাম টিপল। পুরো এক মিনিট অপেক্ষা করল, কেউ এল না, আবার বেল বাজাল। দরজা খুলল না কেউ। ফিরে এল সে।
বুদ্ধি খাটল না, মুসা বলল। এবার কী?
আগে ওই ছোট গ্যারাজটাতেই দেখব, সাইকেল তুলছে কিশোর। আমার মনে হয় ওখানেই থাকে সে। অনেক সময় মানুষকে দেখেই অনুমান করা যায় সে কেমন জায়গায় বাস করে।
চুরি করে ঢুকব? মুসার প্রশ্ন।
জানালা দিয়ে দেখব।
খুব সহজেই দেখা সম্ভব হলো। গ্যারাজের পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে, সিঁড়ির মাথায় খুদে একটা চতুরমত, সামনে দরজা, পাশে জানালা, জানালার খড়খড়ি ওঠানো।
কপাল ভাল আমাদের, জানালার কাছে নাক চেপে ধরল কিশোর।
তার গা ঘেঁষে এল মুসা। জুতোর ডগায় ভর রেখে মুসার কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিল রবিন।
ডুবন্ত সূর্যের সোনালি আলো জানালা দিয়ে এসে ঘরে ঢুকেছে, ফলে বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ভেতরটা। এক দিকের দেয়াল ঘেঁষে কয়েকটা তাক, বইয়ে ঠাসা। একটা কাজের টেবিল, তাতে নানারকম ফাইল-ফোল্ডার আর বইয়ের স্তূপ। ছোট আরেকটা টেবিলে একটা টাইপরাইটার, পাশে একটা ফ্লোর ল্যাম্প, একটা সুইভেল চেয়ার…বসে টাইপ করার জন্যে। বড় একটা কাউচ আছে, চামড়ায় মোড়া গদি।
বাড়ি না অফিস? মুসা বলল।
জানালার কাছ থেকে সরে এল কিশোর। লোকটা বইয়ের পোকা। লেখালেখির দিকেও ঝোঁক আছে মনে হচ্ছে।
শিস দিয়ে উঠল রবিন। বইয়ের নাম দেখেছ? উইচক্র্যাফট, ফোক মেডিসিন অ্যাণ্ড ম্যাজিক, আনকোরা নতুন বই। লাইব্রেরিতে এসেছে গত হপ্তায়, অনেক দাম। আরেকটা বই দেখলাম টেরিলে, ভুড়-রিচুয়াল অ্যাণ্ড রিআলিটি।
সাপ সংক্রান্ত কোন বই? মুসা জিজ্ঞেস করল।
থাকতে পারে, অনেক বই-ই তো আছে। সব টাইটেল পড়তে পারছি না এখান থেকে।
দরজার নব ঘোরানোর চেষ্টা করল কিশোর, তালা আটকানো। ফিরে এসে জানালার শার্সি টান দিল, খুলে গেল। ঢাকা যাবে! দুই বন্ধুর দিকে তাকাল সে।
গ্যারাজের নিচের চত্বরের দিকে তাকাল মুসা, শূন্য, নির্জন। বড় বাড়িটার কাছেও লোকজন দেখা যাচ্ছে না।
ধরা পড়লে বিপদ হবে, ফিসফিস করে বলল মুসা।
পড়ব না, জানালার চৌকাঠে উঠে ভেতরে লাফিয়ে নামল কিশোর।
মুসা আর রবিনও ঢুকল ঘরে। পায়ে পায়ে তিনজনেই এগিয়ে গেল কাজের টেবিলটার দিকে। তাকের বইগুলোর দিকে তাকাল রবিন। আদিম মানুষের আচার-ব্যবহার, উপকথা, লোককথা, ব্ল্যাক ম্যাজিকের ওপর লেখা নানারকম বই।
কয়েকটা বইয়ের নাম পড়েই মুসা বলে উঠল, ভ্যারাড আর মিস মারভেলের সঙ্গে ব্যাটার মিল হবে ভাল!
লোকটার ওপর ভক্তি এসে যাচ্ছে আমার, রবিন বলল। কঠিন কঠিন সব বিষয়, আজ দুপুরে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, মাথায়ই ঢুকল না। বেশির ভাগ।
অকাল্ট-বিশেষজ্ঞ দেখা যাচ্ছে! বিড়বিড় করল কিশোর। সত্যিই এটা ফোর্ডের ঘর তো? এমন একজন মানুষ লোকের বাড়িতে চাকর থাকতে গেছে! টেবিলের ওপর ঝুঁকে ফাইলে লাগানো ট্যাগে নাম পড়তে শুরু করল সে, আউরোস ক্লায়েন্ট, দ্য গ্রিন ট্রায়াঙ্গল, দ্য ফেলোশিপ অভ দ্য লোয়ার সার্কেল…আরিব্বাপরে। কী সব নাম! আপন মনেই বাংলা করল ওগুলোর, আউরোর মক্কেল, সবুজ ত্রিভুজ, নির্মচক্রের সঙ্… বলতে বলতেই মোটা ফাইলটা টেনে নিল। আমাদের ভ্যারাড মিয়ার সঙ্ কিনা, এখনি বোঝা যাবে, ফিতের বাঁধন খুলে ফেলল সে।
কী? তাকের দিক থেকে ফিরল রবিন।
ঘেটে ঘেঁটে দুই শিট কাগজ বের করল কিশোর ফাইল থেকে। এই যে, মিস মারভেলের নাম! হু, ফোর্ডের চোখ তার ওপর পড়েছে। নামধাম, নাড়ি-নক্ষত্র সব লেখা: গোটা পাঁচেক অস্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান। কিংবা সঙ্ঘের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল মিস মারভেল, অতীতে দুটো অ্যাস্ট্রলজি ম্যাগাজিনে ছবি ছাপা হয়েছে তার, সাধুদের সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ভারতেও গিয়েছিল একবার। বেশিদিন থাকেনি ওখানে, সন্ন্যাসগিরি বিশেষ ভাল লাগেনি বোধহয়। রকি বিচে পারকার হাউসে কবে উঠেছে মিস মারভেল, তা-ও পরিষ্কার করে লেখা আছে, এমনকী হিউগ ভ্যারাড কবে ঢুকেছে তা-ও।
আর কিছু? মুসা জানতে চাইল।
আরেক শিট কাগজ বের করল কিশোর। মিস মারভেলের সয় সম্পত্তি কী আছে না আছে, তার লিস্ট। নাহ্, বড়লোক নয় মহিলা।
টাকা চায় নাকি ফোর্ড?
ফাইলের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখল কিশোর। তাই তো মনে হচ্ছে। রাসলারের নামধামও লিখেছে, ওই যে, খাবারের দোকানের নোংরা মালিক। ইস্ট লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্পত্তি আছে তার। চেহারা দেখলে তো ভিখিরি মনে হয়; আসলে টাকাপয়সা আছে, দেখা যাচ্ছে।
কমলা লেডি?
জেরি গ্যানারিল, হেয়ারড্রেসার? ফাইলের পাতা উল্টে চলল কিশোর, এক জায়গায় এসে থামল। এই যে, বেশ কয়েকটা অস্বাভাবিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। নিজের ব্যবসা আছে, যথেষ্ট ভাল আয়। হেয়ারড্রেসিঙের দোকান ছাড়া আরও ব্যবসা আছে। স্টক। স্যান। ফারনানদো ভ্যালিতে অফিস, নিজের অ্যাকাউনটেন্ট আছে।
আর কারও নাম? রবিন জানতে চাইল।