মিস অ্যানি পল! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
চিনিস নাকি? ভুরু কোঁচকালেন চাচা।
নামটা পরিচিত, বলেই আর দাঁড়াল না কিশোর, টেলিফোনের দিকে ছুটল।
নয়
কাজ আছে, ফিরতে দেরি হবে, সে-সন্ধ্যায় ঢাচীকে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল কিশোর। ওয়ার্কশপে পৌঁছে দেখল সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছে রবিন আর মুসা।
সোয়ানসন কোভ-এ যাব, কিশোর বলল। ওখানে থাকবে জিনা।
সবুজ ফটক এক দিয়ে বেরোব? জানতে চাইল রবিন।
মাথা ঝোকাল কিশোর। ও-পথেই সুবিধে। চাচীর ঘর থেকে দেখা যাবে না।
বেড়ার কাছে গিয়ে ছোট্ট একটা ফোকরে দুই আঙুল ঢুকিয়ে গোপন সুইচে চাপ দিল মুসা। নিঃশব্দে খুলে গেল দুটো পাল্লা। মাথা বের করে উঁকি দিল সে, রাস্তার এ-মাথা ও-মাথা দেখল, নির্জন। জানাল বন্ধুদেরকে। ছাপার মেশিনের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা সাইকেলটা নিয়ে আগে বেরোল কিশোর, তার পিছনে অন্য দুজন।
পাল্লা দুটো আবার বন্ধ হয়ে গেল। চিন্তিত দৃষ্টিতে বেড়ার দিকে। তাকিয়ে আছে রবিন। বেশ বড়সড় একটা ছবিতে সাগর আকা রয়েছে, ঝড় উঠেছে, ডুবতে বসেছে একটা জাহাজ, মুখ তুলে তা দেখছে একটা বড় মাছ। ওই মাছের চোখ টিপে ধরলেই খুলে যাবে আবার সবুজ পাল্লা দুটো। তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার থেকে বেরোনোর অনেকগুলো গোপন পথের একটা এটা।
লাল কুকুর চার গেল! বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল রবিন। বড় বেশি ছেক ছোঁক করে মেয়েটা! কী করে যে দেখে ফেলল! কবে আবার সবুজ ফটকটাও দেখে ফেলে, কে জানে!
দেখলে দেখবে, কিশোর বলল। আরেকটা পথ বানিয়ে নেব। ওসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, মুসা বলল। চলো।
সাইকেলে চাপল তিন গোয়েন্দা। পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ড থেকে কোস্ট হাইওয়ে ধরে সোয়ানসন কোভ মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ।
বড় একটা পাথরে হেলান দিয়ে আছে জিনা, কাছেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আপালুসাটা, লাগামের মাথা ঝুলছে সামনের হাটুর কাছে।
বেশ ভালই ব্যথা পেয়েছে মিস অ্যানি পল, পাথরের ওপর বসে পড়ল জিনা।
জিনার মুখোমুখি আরেকটা পাথরে বসল কিশোর।তোমার খালা কী বলেন? আমি ফোন করার পর কিছু ঘটেছে?
খালার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। কাঁদছে। খবরটা শোনার পর থেকেই খালি কাঁদছে।
পাথরের গায়ে হেলান দিল রবিন। ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে!
এবং খুব তাড়াতাড়ি, যোগ করল কিশোর। মাত্র আজ সকালে ভ্যারাড় বলল, মহাসকে পাঠানো হয়েছে, ব্যস, দুপুর পেরোতে না। পেরোতেই কর্ম সারা! মিস মারভেলের ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেল। ক্যাসটিলোর বাড়িতে নিলামে আর যেতে পারছে না মিস পল। ক্রিস্টাল বল গেল তার হাতছাড়া হয়ে।
কিন্তু এরকম কিছু ঘটুক এটা চায়নি খালা, একটু যেন লজ্জিতই মনে হলো জিনাকে। খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠেছে: হায় হায়, এ-কী করলাম! মহিলা মারা যেতে পারত! সব দোষ আমার, সব আমার দোষ! তাকে ঘর থেকে ধরে ধরে নিয়ে যেতে হয়েছে ভ্যারাডকে।
স্বাভাবিক, মন্তব্য করল মুসা।
তার কথায় কান দিল না জিনা। খালার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল ভ্যারাড। হল-এ থেকে ওদের কথাবার্তা শুনেছি। সব শুনিনি, তবে এটুকু বুঝেছি, কোন একটা ব্যাপারে খালাকে চাপাচাপি করছে ভ্যারাড। বলল, অপেক্ষা করতে রাজি আছে সে, তবে বেশি দিন নয়। খালাকে কান্নাকাটি করতে বারণ করে নিচে চলে গেল সে। খালার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই ধমকে উঠল খালা। বেরিয়ে এলাম, তবে রইলাম কাছাকাছিই, লুকিয়ে।
নিশ্চয় হল-এ? মুসা বলল।
হ্যাঁ। ফোন করল খালা, মিস্টার ফন হেনরিখকে চাইল।
বাড়তি রিসিভারটা তুলতে কত দেরি করেছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
অনেক, জিনার কণ্ঠে বিরক্তি। নিচে নেমে রিসিভার তুলে শুনলাম, খালা বলছে: …একটা চিঠি সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি তা হলে। জবাব এল: হ্যাঁ, দিন। তারপরই কেটে গেল লাইন।
তারপর? প্রশ্ন করল রবিন।
ওপরতলায় খালার পায়ের আওয়াজ শুনলাম। ফোর্ডকে ডাকল। একটা ছোট্ট বাদামী কাগজের মোড়ক হাতে নিয়ে নেমে এল ফোর্ড, খালার গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
ভ্যারাডের আগ্রহ কেমন দেখলে? কিশোরের প্রশ্ন।
কামানের গোলার মত ছুটে গেল সে ওপরতলায়। খালা তৈরিই হয়ে ছিল। চেঁচাতে শুরু করল ভ্যারাড়, পাল্টা জবাব পেল। খালা বলল, ফোর্ডকে বেভারলি হিল-এ পাঠিয়েছে একটা ফেসক্রিম কিনে আনতে।
বিশ্বাস করেছ?
না। ভ্যারাডও করেনি। এক কৌটা ক্রিম নিয়ে ফিরতে দেখল ফোর্ডকে, তাই আর কিছু বলারও থাকল না ওর। কিন্তু আমি জানি, মিথ্যে কথা। গোলাপের পাপড়ি, গ্লিসারিন আর আরও কী কী দিয়ে নিজের ক্রীম নিজেই বানিয়ে নেয় খালা, বাজারের জিনিস কক্ষনো কেনে না।
খালাকে জিজ্ঞেস করেছ কিছু? নাকি ফোর্ডকে?
কাউকেই করিনি। আমি জানতাম, কোথায় গেছে ফোর্ড। মিস্টার। ফন হেনরিখ বেভারলি হিলের অনেক বড় একটা জুয়েলারি শপের মালিক। আমাদের বাড়ির সেফের কম্বিনেশনও আমার জানা। মা-র ঘরে গিয়ে সোজা সেটা খুললাম। নেকলেসটা গায়েব।।
স্তব্ধ হয়ে গেল ছেলেরা। খবরটা হজম করতে সময় নিল। ( অবশেষে বলল কিশোর, কোন নেকলেস? ইউজেনির সম্রাজ্ঞীরটা? এত দামী জিনিস প্রায় অপরিচিত একটা লোকের হাতে পাঠাতে সাহস করলেন তোমার খালা?
খালার বুদ্ধিশুদ্ধি এমনিতেই কম, জিনা বলল। মা-ই কম্বিনেশনটা বলেছে খালাকে। কত রকমের অঘটনই তো আছে, বাড়িতে আগুন লাগতে পারে, ভূমিকম্পে ধসে যেতে পারে, তা-ই বলে রখেছে, যাতে দরকার পড়লে নেকলেসটা সরিয়ে ফেলতে পারে খালা।