কোন ভাবনা নেই, হলঘর থেকে জবাব এল ভ্যারাডের। আপনার ইচ্ছে পেশ করা হয়েছে। পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মহাসর্পকে। বিলিয়াল দায়িত্ব নিয়েছেন। চুপচাপ বসে বসে শুধু দেখুন এখন কী ঘটে।
কিন্তু একুশের আর দেরি নেই, নিশ্চিন্ত হতে পারছে না মিস মারভেল। এর মধ্যে হবে তো? তেমন কিছুই না, তবু, জিনিসটা আমার চাই। আগেই যদি অ্যানি পল…
ঈমান নষ্ট করছেন! গম্ভীর কণ্ঠ ভ্যারাডের।
না না! আঁতকে উঠল যেন খালা। আমি সে-কথা বলিনি! ঈমান ঠিকই আছে…
তা হলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকুন গে। আমি যাই, রেস্ট নেয়া দরকার। বড় কঠিন কাজ করতে হয়, মাঝে মাঝে একেবারে কাহিল হয়ে
হ্যাঁ হ্যাঁ, যান!
সিঁড়িতে ভ্যারাডের জুতোর শব্দ মিলিয়ে গেল।
ব্যস, গিয়ে ঢুকল আবার গর্তে, সরে আসতে আসতে বলল জিনা। ছুঁচোও লজ্জা পাবে!
মহাসৰ্পকে পাঠানো হয়েছে! নিজেকেই প্রশ্ন করল যেন কিশোর, মানেটা কী?
ডাকে সাপ-টাপ পাঠায়নি তো খালার কাছে? মুসা বলল।
মাথা নাড়ল জিনা। না। সাপ দেখলেই মূৰ্ছা যায় খালা। ভ্যারাড আর তার ভক্তরা ওভাবেই কথা বলে। ওদের কথার মানে ওরাই শুধু বোঝে! মনে আছে, সেদিন রাতে বলেছিল, যোজন যোজন দূরে রয়েছেন। মহাসর্প, তিনি কথা বলবেন কিনা, তাই বা কে জানে!
কথা অবশ্য বলেছিলেন মহাসর্প! চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। এমন বেসুরো সুরে, শুনলে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে চায়! কী যে করছে। ওরা, ওরাই জানে! বৈঠক বসাচ্ছে, একবার এখানে, একবার ওখানে! …তোমাদের নতুন কাজের লোকটাও এসবে জড়িত কিনা, কে বলবে! যাই হোক, এখন আর এখানে কিছু করার নেই আমাদের। আবার কিছু ঘটলে খবর দিয়ো। যাই, চাচী বলেছিল কী নাকি জরুরি কাজ আছে।
আমারও লাইব্রেরিতে যেতে হবে, রবিন বলল। ডিউটির সময় হয়েছে।
আমিই বা আর থাকি কেন? বলল মুসা। কদিন ধরেই মা তাগাদা দিচ্ছে লনটা পরিষ্কার করার জন্যে।
দারুণ ছেলে তো হে তোমরা! প্রশংসায় উজ্জ্বল হলো জিনার মুখ। গোয়েন্দাগিরি, লেখাপড়া, তার ওপর আবার বাড়তি কাজ! নাহ, তোমাদের ওপর ভক্তি আমার বাড়ছে! তা যাও, নতুন কিছু ঘটলে ফোন করব। মুসার দিকে ফিরে বলল, তোমার বোতল তো খালি। দেব আরেকটা?
তা দিতে পারো, হাসল সে।
বাড়তি আরেকটা অবশ্য ওর প্রাপ্য, টিপ্পনী কাটল রবিন। বেচারা গতরাতে যেভাবে দেয়াল থেকে পড়ল। যদি দেখতে! হাহ হা!
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল মুসা, আরেকটা বোতল তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে জিনা।
লেমোনেড শেষ করে জিনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে-যার পথে চলে গেল তিন গোয়েন্দা।
ইয়ার্ডে ফিরে দেখল কিশোর, সাংঘাতিক ব্যস্ত বোরিস আর রোভার; দুটো ট্রাকে উঁচু হয়ে আছে মালপত্র, ওগুলো নামাচ্ছে।
এত দেরি করলি? মেরি চাচী বলে উঠলেন কিশোরকে দেখে।
হ্যাঁ, চাচী, একটু দেরিই হয়ে গেল।
তোর চাচার কাণ্ড দেখেছিস? দেখ, কী-সব নিয়ে এসেছে!
দেখল কিশোর। ঢালাই লোহার তৈরি পুরানো আমলের এক গাদা চুলো।
লাকড়ির চুলো! চাচীর গলায় প্রচণ্ড ক্ষোভ। বল, এসব জিনিস আর আজকাল রাখে কেউ? ব্যবহার করে? শহরের পুবে কোন এক পুরানো গুদামে পড়ে ছিল অনেক বছর। নতুন শহর হচ্ছে ওদিকে, গুদাম ভেঙে ফেলা হচ্ছে, তাই বাতিল মাল সব নিলামে বেচে দিচ্ছে। কী জানি, মরতে কেন ওদিকে গিয়েছিল তার চাচা! চোখে পড়েছে, আর কী রেখে আসে! আরও পেয়েছে কমদামে! কিশোরের দিকে তাকালেন। তোর কী মনে হয়? বিক্রি হবে এগুলো?
হবে, হবে, নির্দ্বিধায় জবাব দিল কিশোর। আজকাল অনেকেরই তো পুরানো আমলের জিনিস ব্যবহারের শখ চাপে। দেখো, একটাও থাকবে না, সব বিক্রি হয়ে যাবে।
কী জানি, বাপু! আমার তো মনে হয়, শখানেক বছরেও ওগুলো পার করা যাবে না, বোরিস আর রোভারের দিকে ফিরলেন। ওই ওদিকে জঞ্জালের ধারে কোথাও নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখো। আমার চোখে যেন না পড়ে!
রাগে গটমট করে অফিসে চলে গেলেন মেরি চাচী।
চুলো নামাতে বোরিস আর রোভারকে সাহায্য করল কিশোর। ইয়ার্ডের এক ধারে নিয়ে গিয়ে তূপ করে ফেলতে লাগল। ভীষণ ভারি জিনিস, তার ওপর লাকড়ি ঢোকানোর ফোকরের দরজা আলগা, বয়ে নেয়ার সময় যখন-তখন খুলে পড়ে, সে আরেক ঝামেলা। ফলে কাজে দেরি হতে লাগল।
লাঞ্চের সময় হয়ে গেল, একটা ট্রাক খালি হয়েছে, আরেকটা তখনও পুরো বোঝাই।
খেয়েদেয়ে এসে আবার কাজে লাগল তিনজনে।
তিনটের দিকে বোরিস আর রোভারের ওপর বাকি কাজের ভার ছেড়ে দিয়ে গোসল করতে চলল কিশোর। হলঘরে ঢুকে দেখল, চাচা বসে বসে টেলিভিশন দেখছেন।
কিশোরকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠলেন রাশেদ পাশা, ভয়ানক!
কী ভয়ানক? দাঁড়িয়ে পড়ল কিশোর।
আরে, লোকের কাণ্ডজ্ঞান নেই! এত অসাবধানে গাড়ি চালায়! হাইওয়েতে উঠলে যেন আর দুনিয়ার খেয়াল থাকে না! দেখ! টেলিভিশনের দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি।
কিশোর তাকাল। পরিচিত দৃশ্য। প্রায়ই দেখে টেলিভিশনে, খবরের কাগজে। হলিউড ফ্রিওয়ে-তে একটা পুলের রেলিঙে বাড়ি খেয়ে বেঁকেচুরে পড়ে আছে একটা স্যালুন গাড়ি। পথ প্রায় বন্ধ। ট্রাফিক জ্যাম ছাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
স্পিকারে ভেসে আসছে ঘোষকের কণ্ঠ: মিস অ্যানি পল নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁকে অ্যাঞ্জেল অভ মারসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন, তার অবস্থা তেমন আশঙ্কাজনক নয়…