সেটাই ভাল হবে, না? পাল্টা প্রশ্ন করল জিনা। দিনে-রাতে সব। সময় নজর রাখতে পারব ওর ওপর।
লোক ভাল হলে হয়, কিশোরের কণ্ঠে সন্দেহ। তোমার খালা কী বলেন? তাঁকে বলেছ?
বলেছি। খুব ভাল বলে সোজা গিয়ে বিছানায় উঠেছে।
এর আগে কোথায় কাজ করত লোকটা?
বলেনি, আমিও চাপাচাপি করিনি।
খুব ভাল করেছ! নইলে হয়তো… বলতে গিয়ে বাধা পেল মুসা।
ওর সঙ্গে দেখা করতে চাও? জিনা বলল। দেখলে চিনতে পারবে?
সন্দেহ আছে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। রবিন চিনলে চিনতে পারে।
মাথা ঝোকাল রবিন।
চিনতে পারলেও এমন ভাব দেখাবে, যেন নতুন দেখছ, রবিনকে সাবধান করে দিল কিশোর।
তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে চলল জিনা।
বসার ঘরে কাজে ব্যস্ত লোকটা। সবুজ-সোনালি কার্পেট থেকে ধুলো ঝাড়ছে। সারা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল ছেলেদের দিকে। এগিয়ে গিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সুইচ অফ করে দিল জিনা।
কিছু লাগবে, মিস পারকার? জিজ্ঞেস করল লোকটা।
না, মাথা নাড়ল জিনা। আমিই নিতে পারব। লেমোনেড়।
নিন, যন্ত্রের সুইচ অন করে দিয়ে আবার কাজে লেগে গেল লোকটা।
বন্ধুদেরকে রান্নাঘরে নিয়ে এল জিনা। ফ্রিজ খুলে চারটে লেমোনেডের বোতল বের করল। চাপা গলায় বলল, ওই লোকই?।
শিওর না, অনিশ্চিত রবিন। আকার-আয়তন এক রকম, গোঁফেরও মিল রয়েছে, তবে ও কিনা, কে জানে! মাত্র এক পলক দেখেছিলাম তো।
দেখে তো খারাপ লোক মনে হলো না, মন্তব্য করল মুসা। ওই লোক কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালাবে…নাহ, বিশ্বাস হচ্ছে না।
বর্ণচোরা! জোর গলায় বলল জিনা। আস্ত এক বর্ণচোরা। লম্বাও, খাটোও না, পাতলাও না, মোটাও না। ধূসর চুল, আর দশজনের মতই স্বাভাবিক। রাস্তায় বেরোলে ওরকম লোক অনেক দেখা যায়। মস্ত গোফ বাদ দিলে লোকের ভিড়ে অতি সহজেই মিশে যেতে পারে, আলাদা করে চেনা মুশকিল, একটা বটল ওপেনার নিয়ে বোতলের ছিপি খুলতে লাগল সে। তা গতরাতে কী কী ঘটেছে বললে না তো।
সংক্ষেপে সব জানাল কিশোর।
এখনও তোমাদের চেয়ে এগিয়ে আছি আমি, হাসল জিনা। তোমরা শুধু দেয়াল থেকে পড়ার কেরামতি দেখিয়েছ, আর আমি? হার্ডে পার্সেন্ট রহস্যময় একটা লোককে আবিষ্কার করে তাকে কাজে লাগিয়েছি।
রহস্যময় আরেকটা লোককে তাড়ানোর জন্যেই আমাদের সাহায্য চেয়েছিলে, মনে আছে? মনে করিয়ে দিল মুসা। কিন্তু, ব্যাপারটা কী? ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের আওয়াজেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে না কেন নিশাচরদের?
ভ্যারাড বাইরে, লেমোনেডের বোতলে চুমুক দিল জিনা।
দিনের বেলা কক্ষনো গুহা থেকে বেরোয় না বলেই তো জানতাম!
আজ সকালে বেরিয়েছে। কোন গোরস্থানে মড়ার হাড্ডি চুষতে গেছে, কে জানে! খালার গাড়িটা নিয়ে গেছে।
দরজায় দেখা দিল মিস মারভেল। জিনা, লোকটা কে রে? সারা। বাড়ি মাথায় তুলেছে! খালার পরনে ফিকে নীল হাউসকোট, বেগুনি-নীল বেল্ট এটেছে কোমরে। পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুলে নতুন করে রঙ লাগিয়েছে।
নতুন কাজের লোক, খালা, জিনা বলল। তোমাকে না বললাম। গতরাতে?
ও, হা হা! খুব ভাল। কী নাম যেন বলেছিলে?
নাম বলিনি। ওর নাম ফোর্ড।
ফোর্ড! ফোর্ড! ভেরি গুড, গাড়ির নামে নাম। মনে রাখতে পারব। ছেলেদের দিকে চেয়ে আনমনে হাসল খালা। ছেলেরা গুড মর্নিং জানাল, মহিলা খেয়াল করল কিনা বোঝা গেল না। রাঁধতে পারে তো? জিনাকে জিজ্ঞেস করল।
বলল তো পারে।
তা হলে যাই, ডিনারের জন্যে কী কী রাঁধতে হবে, বলি গিয়ে। চলে গেল মিস মারভেল।
সিঙ্কে হেলান দিয়ে দাঁড়াল জিনা। বহুদিন পরে খাওয়া জুটবে মনে হচ্ছে। জানালার দিকে চোখ পড়তেই স্থির হয়ে গেল। জনাব এসে গেছেন! দেখ দেখ, গর্ত থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছে যেন ছুচোটা!।
হেসে ফেলল ছেলেরা। ছোট্ট করভেট থেকে বেরোতে গিয়ে প্রাণান্তকর অবস্থা ভ্যারাডের। দুমড়ে মুচড়ে বাঁকা হয়ে স্টিয়ারিঙের তলা থেকে বেরোনোর চেষ্টায় অস্থির, আটকে গেছে লম্বা লম্বা পা! কাত হয়ে অনেক কষ্টে শরীরটাকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে বেরিয়ে এল অবশেষে, প্যান্টের ভিতর থেকে খুলে এসেছে শার্টের নিচের দিক টানের চোটে, প্রায় বুকের কাছাকাছি উঠে গেছে, বেরিয়ে পড়েছে রোমশ পেট।
ব্যাটা কোথায় গিয়েছিল জানতে পারলে হত, জিনা বলল।
পিছনের দরজা খুলে ঘরে এসে ঢুকল ভ্যারাড। ছেলেমেয়েদেরকে দেখে থমকে গেল, দৃষ্টি এক মুহূর্ত স্থির রইল জিনার ওপর, তারপর তাকে পাশ কাটিয়ে এগোতে গেল। নীরবে।
পথরোধ করে দাঁড়াল জিনা। মিস্টার ভ্যারাড, আমার বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করবেন না?
নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিচয় করার জন্যে দাঁড়াল ভ্যারাড। খুশি খুশি ভাব করে হাত বাড়িয়ে দিল রবিন, নিষ্প্রাণ একটা রবারের হাত ধরে যেন ঝুঁকি দিল বার কয়েক।
নীরবে সব অত্যাচার সহ্য করল ভ্যারাড। পরিচয়ের পালা শেষ। হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পা বাড়াল; জিনা যেন একটা খুঁটি, এমনভাবে তাকে পাশ কাটিয়ে এগোল। বেরিয়ে গিয়েই দড়াম করে বন্ধ করে দিল দরজার পাল্লা।
কেমন বুঝলে? হাসিতে উদ্ভাসিত জিনার মুখ। সুযোগ পেলেই খোঁচাই লোকটাকে। ও ভাব করে, যেন আমি জ্যান্ত কিছু নই। তাই আমিও ছাড়ি না। কবে যে যাবে ইতরটা!
মিস্টার ভ্যারাড? মিস মারভেলের উঁচু কণ্ঠ শোনা গেল রান্নাঘর থেকেও। কাজ হয়েছে?
দুই লাফে দরজার কাছে চলে গেল জিনা, ফাঁকে কান পেতে দাঁড়াল।