উফফ! ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। আল্লাহ বাঁচিয়েছে।
ফিক করে হাসল রবিন। কান মলেনি তো!
এই, ভাল হবে না বলে দিচ্ছি! হাত তুলল মুসা।
আহ্, থামো তো! চাপা গলায় ধমক দিল কিশোর। কান পেতে শুনছে।
খোয়া বিছানো পথে গার্ডের বুটের শব্দ হচ্ছে। কয়েক কদম চলেই থেমে গেল।
আমরা গেছি কিনা, বোঝার চেষ্টা করছে, কণ্ঠস্বর আরও খাদে নামাল কিশোর। চলো, হাঁটি। এমনিতেই সন্দেহ করেছে গার্ড। গাড়িতে করে এসেছি দেখলে শিওর হয়ে যাবে, বেড়াল খুঁজতে আসিনি আমরা।
চলো তা হলে, তাড়াতাড়ি পালাতে পারলে বাঁচে মুসা, গার্ডের হাতে পড়তে চায় না আর।
জোরে কথা বলতে বলতে চলল ওরা পথ ধরে, খালি বেড়ালটার আলোচনা করছে। সিয়ামিজ ক্যাটের দাম কত, ওটা না পেলে মা কী পরিমাণ বকবে কিংবা পেটাবে, আরেকটা বেড়াল জোগাড় করা যায় কিনা, এসব। হাফট্রাকের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় নিচু গলায় বলল। কিশোর, বোরিস, কয়েক মিনিট পর আমাদের পিছনে আসবেন।
হাঁটতে হাঁটতে একটা মোড় পেরিয়ে এল ছেলেরা; পিছনে চেয়ে দেখল, গেট দেখা যায় না; তার মানে গার্ডের চোখের আড়ালে চলে এসেছে। থামল ওরা।
অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার! কিশোর বলল। পার্টি চলছে, কিন্তু একটা আলোও জ্বালেনি। ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি বসিয়েছে, তার ওপর গার্ড। এত কড়া পাহারা কেন? চুরি করে ঢোকার উপায় নেই, অ্যালার্ম বেল বেজে ওঠে, সার্চলাইট জ্বলে ওঠে! সাঙ্কেতিক কথার জবাব যে জানে না, তাকে ঢুকতে দেয়া হয় না। কী কাণ্ড চলছে ভিতরে?
পিছন থেকে ট্রাকটা এসে দাঁড়াল পাশে, উঠে বসল ছেলেরা। রবিন দরজা বন্ধ করে দিল।
পাক্কা হারামি লোক! পিছন দিকে হাত নাড়ল বোরিস। সব কথা শুনেছেন? মুসা জিজ্ঞেস করল।
শুনেছি। একবার ভাবলাম, যাই! আরেকটু বাড়াবাড়ি করলেই যেতাম। মুসা, ব্যথা পেয়েছ?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিল মুসা আমান। এখন আর পাচ্ছি! তবে পড়ার পরে মনে হয়েছিল, মেরুদণ্ড দুটুকরো!
একটা দুই রাস্তার মোড়ে এসে গতি কমাল বোরিস। বাঁ দিকে টরেনটি ক্যানিয়ন রোড ধরে তীব্র বেগে ছুটে আসছে আরেকটা ট্রাক, ওটাকে পথ ছেড়ে দেয়ার জন্যে থেমেই দাঁড়াতে হলো। পিছন থেকে এসে ঘ্যাচ করে হাফট্রাকের পাশে থামল একটা কমলা রঙের স্পোর্টস কার।
আরে! চাপা গলায় বলল রবিন। মিস গ্যানারিল, হেয়ারড্রেসার!
বাড়ি ফিরছে! উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল কিশোর। জলদি জিনার কাছে। ফোন করতে হবে! নিশ্চয় খোঁজাখুঁজি করছে। ভ্যারাড় কিংবা মিস মারভেল দেখে ফেললে কী ভাববে, কে জানে!
সামনে আধ মাইল দূরে একটা পেট্রল স্টেশন আছে, বোরিস জানাল।
তাড়াতাড়ি চলুন, বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে কিশোর, মিস মারভেলের গাড়ি আসছে কিনা দেখছে।
পেট্রল স্টেশন থেকে পারকার হাউসে ফোন করল কিশোর। দ্বিতীয় বার রিং হওয়ার আগেই ওপাশে রিসিভার তুলল জিনা।
বৈঠক শেষ, কোনরকম ভূমিকা করল না কিশোর। আমরা কিছুই করতে পারিনি। তোমার কদ্দূর? পেয়েছ?
না।
সব জায়গায় দেখেছ?
কিচ্ছু বাদ দিইনি। চুম্বকও ব্যবহার করেছি। খালি ধুলো, রুজ যাওয়ার পর আর ঝাড়া হয়নি।
তার মানে, যন্ত্রটা সঙ্গে নিয়ে গেছে ভ্যারাড। কিংবা তার সহকারীর। কাছে রয়েছে ওটা।
সহকারী? তাই হবে। নতুন একজন লোক আসছে বাড়িতে।
কে?
রুজের জায়গায়। খানিক আগে এসে বলল, কত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায়।
তারপর?
জানালাম, মা বাড়িতে নেই। যা বলার আমাকে বলতে পারে…
অপরিচিত একজনের সঙ্গে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি তোমার, জিনা!
শুধু তাই না, জিনার হাসি শোনা গেল। চাকরিটাও দিয়ে ফেলেছি তাকে।
চুপ করে রইল কিশোর। বুঝতে পারছে, আরও কথা বলার আছে। জিনার।
এভাবে হুট করে কেন রাজি হয়ে গেছি, জিজ্ঞেস করলে না?
কেন?
কারণ, চোখা গোঁফ আছে লোকটার। গতরাতে গ্যারাজে লুকিয়েছিল যে লোকটা, তারও গোঁফ ছিল। একই লোক কিনা, জানি না, কিন্তু যদি হয়, কোন বিশেষ কারণ আছে এভাবে যেচে এসে চাকরি চাওয়ার। হয়তো ও-ই ভ্যারাড় ইবলিশের সহকারী। তা হলে কী বলো, ওকে আসতে বলে ভালই করেছি, না? চোখে চোখে রাখা যাবে। কাল সকাল আটটায় কাজে যোগ দেবে সে। এসেই ভ্যারাডের কফিতে মাকড়সার ডিম মেশাতে শুরু করবে কিনা, কে জানে।
তোমার খালা জিজ্ঞেস করলে কী বলবে?
গল্প একখানা বানিয়ে রেখেছি মনে মনে। হ্যাঁ, কাল সকালে দেখা কোরো আমাদের বাড়িতে।
লাইন কেটে দিল জিনা। ট্রাকে ফিরে এল কিশোর।
কী ব্যাপার? কিশোরের চিন্তিত ভঙ্গি লক্ষ করল মুসা।
ঠিক বুঝতে পারছি না! হয় মেয়েটা অতি চালাক, নইলে এক্কেবারে বোকা, কিংবা দুটোই!
কী বলছ? একই সঙ্গে চালাক আর বোকা হয় কী করে একজন!
তা-ও জানি না! তবে জিনার ক্ষেত্রে হয়তো তা-ই ঘটেছে!
আট
পরদিন সকালে পারকার হাউসে এল তিন গোয়েন্দা। বারান্দায় সিঁড়িতে বসে আছে জিনা, হাসিতে উজ্জ্বল মুখ-চোখ।
শুনছ? বলল জিনা।
শুনছে তিন গোয়েন্দা। বাড়ির ভিতর থেকে আসছে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের গুঞ্জন।
কিছুই বলে দিতে হয়নি ওকে, জিনা বলল। সুটকেসটা রুজের ঘরে রেখে এসেই কাজে লেগে গেছে। ঝাড়টা নিয়ে আগে কুলি-ময়লা পরিষ্কার করেছে। খালার মাকড়সার জালের আশা একেবারেই খতম। হি
তার মানে রাতেও এখানে থাকছে সে? রবিন জানতে চাইল।