একটা ব্যাপার পরিষ্কার, কিশোর বলল। ওরা কোন একটা সাধনার জন্যে জমায়েত হয়। শয়তানকে ডাকে তো, সম্ভবত প্রেতসাধনা। করে। গতরাতে তোমার খালার সমস্যা সমাধানের জন্যে এসেছিল। শুনবে না, কোন এক অ্যানি পলকে শহর থেকে তাড়াতে চাইছে ওরা।
পাগলামি! চেঁচিয়ে উঠল জিনা। স্রেফ পাগলামি!
বিজ্ঞের ভঙ্গিতে হাসল কিশোর। কোন্ বলের কথা বলেছে ওরা, আমি জানি।
জানো?
একুশ তারিখে একটা নিলাম হবে, বিখ্যাত অভিনেতা মরহুম র্যামন ক্যাসটিলোর বাড়িতে। অন্যান্য অনেক জিনিসের মাঝে কাঁচের বলটাও রয়েছে, এটা তিনি ব্যবহার করেছিলেন দ্য ভ্যাম্পায়ারস লেয়ার ছবিতে। সেদিন খবরের কাগজ পড়ে আলোচনা করছিল চাচা চাচী ব্যাপারটা নিয়ে। অভিনেতাদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র কেনার জন্যে পাগল তোমার খালা, কাঁচের বলটা কিনতে আগ্রহী তো হবেনই।
এখন বুঝতে পারছি, ভ্যারাডকে কেন এত খাতিরযত্ন করছে খালা।
শয়তান-সাধকের ক্ষমতা ব্যবহার করে অ্যানি পলকে তাড়াতে চান শহর থেকে, নিলামের সময়।
খালার সঙ্গে অ্যানি পলের সাপে-নেউলে সম্পর্ক, আমি জানি।
ওই মহিলাও তোমার খালার মত জিনিস কালেকশন করেন নাকি?
করে। খালার চেয়ে বড় পাগল। বিধবা, মস্ত ধনী। ওই মহিলা নিলামে হাজির থাকলে কাঁচের বল আর খালার ভাগ্যে জুটছে না। অত টাকা নেই খালার।
সেজন্যেই শয়তানের বৈঠক বসিয়েছেন ভ্যারাডকে দিয়ে, যাতে মহিলা নিলামেই হাজির হতে না পারে।
তাই তো মনে হচ্ছে, বলল জিনা। কিন্তু ভ্যারাডের এতে কী লাভ? টাকার জন্যে করছে না। নগদ টাকা প্রায় নেই খালার। সামান্য যা আছে, খাঁটিয়ে রেখেছে শেয়ারের ব্যবসায়; লাভ যা আসে, খাওয়া-পরা আর বাতিল জিনিস কিনতেই শেষ। তার মানে টাকার লোভে কাজটা করছে না ভ্যারাড!
হুম! মাথা দোলাল রবিন। উদ্দেশ্য জানা যাচ্ছে না তা হলে!
তবে, কিশোর বলল, খুঁজলে বাড়িতেই যন্ত্রটা পেয়ে যেতে পারি। জিনা, তোমার খালাকে বললে কি তখন বিশ্বাস হারাবেন ভ্যারাডের ওপর।
থেকে?ল জিনা। কানসেছিল ভ্যারাতে
হাসল জিনা। কানটা ধরে বের করে দেবে সোজা। আজই খুঁজতে পারবে। সকালে ফোন এসেছিল ভ্যারাডের কাছে।
নতুন কোন ব্যাপার? ভুরু কোঁচকাল কিশোর।
হ্যাঁ। এখানে এই প্রথম ফোন এসেছে তার কাছে। আমিই ফোন ধরেছিলাম। একটা লোক ভ্যারাডকে চাইল। ঘুমিয়ে ছিল ছুঁচোটা, দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ঘুম ভাঙাতে হলো।
এক্সটেনশন আছে নিশ্চয়, মুসা বলল। শুনেছ?
এ সময় পাইনি, জিনা বলল।ফোন ধরল আর ছাড়ল। শুধু শুনলাম, ভেরি গুড, তারপরেই লাইন কেটে দিল। খালাকে ডেকে বলল, আজ রাতে আবার বৈঠক বসবে, সব ভাইয়েরাই আসবে।
ওই বৈঠকের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করোনি তোমার খালাকে? জানতে চাইল রবিন।
করেছি। খালা ভারি খুশি, তার কাজের ব্যাপারে আমার আগ্রহ দেখে। অবশ্য কায়দা করে বলে তাকে ফুলিয়ে দিয়েছিলাম, নইলে কি আর মুখ খুলত? আজ রাতে ভ্যারাডের সঙ্গে যাচ্ছে খালা, বৈঠকে। বাড়িতে কেউ থাকবে না, আজই আমাদের সুযোগ। যন্ত্র লুকানো থাকলে, আজই খুঁজে বের করতে হবে।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর, গভীর চিন্তায় মগ্ন। যন্ত্রটা যদি সঙ্গে করে নিয়ে যায়?
তাই বলে চেষ্টা করেও দেখবে না একবার? জিনা বলল। ঘরের কোণে, কার্পেটের তলায়, কিংবা পর্দার আড়ালে…
তা থাকতে পারে, মাথা দোলাল কিশোর কী করে খুঁজতে হয়, জানো?
এসব কাজ করিনি তো কখনও, সত্যি কথাটাই বলল জিনা। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।
ফাইন। তা হলে আজ রাতে তুমিই খোঁজ। গ্যারাজেও বাদ দেবে না।
বাহ, কী চমৎকার! মুখ বাঁকাল জিনা। আমিই যদি এসব কাজ করব, তোমাদেরকে ডেকেছি কেন?
কোন জায়গা বাদ দেবে না, বুঝেছ? জিনার কথা কানেই নিল না। কিশোর। টেবিলের নিচে, সাইনবোর্ডের আড়ালে…
…কিংবা ওইসটেরিয়া ঝাড়ের আড়ালে, মনে করিয়ে দিল জিনা।
তা-ও দেখতে পারো। তবে সাবধানে জাফরিতে উঠবে। পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙো না আবার।
ভাঙব না। তা আমি যখন হাত-পা ভাঙার ঝুঁকি নেব তোমরা তখন কী করবে?
তোমার খালা আর ভ্যারাডকে অনুসরণ করব। দেখব, আজ রাতে কোথায় বৈঠক বসায়।
ছয়
সানসেট বুলভারের দিকে যাচ্ছে, বোরিস বলল।
জোরে। চেঁচিয়ে উঠল পাশে বসা কিশোর। আরও জোরে! ট্রাফিক লাইটে আটকা পড়বেন না!
পড়ব না, গ্যাস প্যাড়ালে পায়ের চাপ হঠাৎ বাড়িয়ে দিল বোরিস। প্রচণ্ড গোঁ গোঁ করে প্রতিবাদ জানাল পুরানো ইঞ্জিন, কিন্তু নিমেষে গতি বেড়ে গেল গাড়ির, সিগন্যাল পোস্ট পেরিয়ে এল চোখের পলকে, আর এক মুহূর্ত দেরি হলেই লাল আলোয় আটকা পড়ে যেত।
বেগুনি-লাল ছোট্ট করভেটকে অনুসরণ করে চলেছে ইয়ার্ডের হাফট্রাক। সাগর পেছনে ফেলে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে উঠে যাচ্ছে। দুটো গাড়ি। পথের দুধারে বেশ দূরে দূরে ছিমছাম বাড়িঘর, সুন্দর বাগানে উজ্জ্বল রঙের জিরেনিয়াম ফুটে আছে। মাঝে মাঝে বাকের। ওপাশে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে করভেট, কিন্তু ট্রাকটা মোড় পেরিয়ে এলেই। আবার দেখা যাচ্ছে। অবশেষে গতি কমাল গাড়ি।
টরেনটি ক্যানিয়ন, বিড়বিড় করল বোরিস। সামনে পথ শেষ, করভেটকে হারানোর ভয় নেই আর।
হাফট্রাককে পাশ কাটিয়ে ছুটে গেল আরেকটা কমলা রঙের গাড়ি।
জিনার খালার হেয়ারড্রেসার, কিশোর বলল। মিস গ্যানারিল।