- বইয়ের নামঃ প্রেতসাধনা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
প্রেতসাধনা
এক
ওই দেখো! কিশোরকে দেখেই বলে। উঠলেন মেরি চাচী। সাঁতারের পোশাক পরেই চলে এসেছে! তোকে না কতবার বলেছি এসব পরে নাস্তা খেতে আসবি না কখনও।
স্পোর্টস শার্টের হাতা কনুইয়ের কাছে গুটিয়ে তুলে দিয়ে কমলার রসের দিকে, হাত বাড়াল কিশোর পাশা। সাঁতার কাটতে যাচ্ছি, শান্ত কণ্ঠে বলল সে। মুসা আর রবিন এই এল বলে।
তাই বলে এসব পরে? খেয়ে গিয়ে পরলে চলত না?
কালো মস্ত গোঁফে লেগে থাকা রুটির কণা মুছলেন টেবিলের ওপাশে বসা রাশেদ চাচা। হালকা কিছু খা। ভরাপেটে সাঁতরাতে অসুবিধে হয়।
আরে, না না, সবই খাক, তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন মেরি চাচী। না খেলে পরিশ্রম করবে কী করে? কফির কাপ, সেই সঙ্গে টেবিলে পড়ে থাকা দৈনিকটা টেনে নিলেন।
পাউরুটির টুকরোতে পুরু করে মাখন মাখতে শুরু করল কিশোর।
আরে! বিস্মিত কণ্ঠ মেরি চাচীর।
কৌতূহলী চোখে তাকাল কিশোর। সহজে কোন ব্যাপারে তো অবাক হয় না চাচী!
অনেক আগে অডিয়নে দেখেছিলাম ছবিটা! আপন মনেই বললেন। চাচী। এই ষোলোসতেরো বছর বয়েস তখন আমার।
শূন্য দৃষ্টিতে তাকালেন রাশেদ চাচা।
দেখার পর পুরো এক হপ্তা ঘুমোতে পারিনি, বলতে বলতে কাগজটা স্বামীর দিকে ঠেলে দিলেন চাচী।
ঘুরে এসে চাচার কাঁধের ওপর দিয়ে কাগজটার দিকে তাকাল। কিশোর। হালকা-পাতলা একজন মানুষের ছবি, ঠেলে বেরিয়ে আছে। চোয়াল, তোতাপাখির ঠোঁটের মত বাঁকানো নাক, কালো চোখের তারা। উজ্জ্বল একটা কাঁচের গোলকের ওপর দৃষ্টি স্থির।
র্যামন ক্যাসটিলো, বিড়বিড় করল কিশোর। দ্য ভ্যাম্পায়ারস লেয়ার ছবিতে। অভিনয় তো বটেই, মেকাপেও মাস্টার ছিল লোকটা।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল মেরি চাচীর। উফফ! ক্রাই অভ দ্য ওয়্যারউলফ ছবিতে যদি দেখতি ওকে!
দেখেছি, বলল কিশোর। গত মাসে টেলিভিশনে দেখিয়েছে।
লেখাটা পড়া শেষ করে মৃত অভিনেতার ছবির দিকে চেয়ে রইলেন রাশেদ চাচা কয়েক মুহূর্ত। মুখ তুললেন। ক্যাসটিলোর প্রাসাদে নিলাম। হবে, একুশ তারিখ। যাওয়া দরকার।
ভ্রূকুটি করলেন মেরি চাচী। জানেন, বাধা দিয়ে লাভ হবে না, যাবেনই রাশেদ পাশা। আশপাশে যেখানে যখন পুরানো জিনিসপত্র নিলাম হয়, তার যাওয়া চাই-ই। যা পান, কিনে এনে স্তূপ দেন পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডে। দেখে মনে হয়, অদরকারী জিনিস, কিন্তু এসব জিনিসেরও দরকার পড়ে লোকের, কিনতে আসে তারা। বেশ ভালই লাভ পুরানো জিনিসে। তবে এমন সব জিনিসও নিয়ে আসেন রাশেদ চাচা, যেগুলো একেবারেই বাতিল। হয়তো কোনদিনই বিক্রি হবে না, সেসব নিয়েই মেরি চাচীর আপত্তি। কিন্তু চাচীর কথায় থোড়াই কেয়ার করেন। চাচা।
ক্যাসটিলোর জিনিসপত্র সব বেচে দেবে ওরা, আবার বললেন চাচা। এমনকী এই ক্রিস্টাল বলটাও, ছবিতে আঙুল রাখলেন। দ্য ভ্যাম্পায়ারস লেয়ারে ব্যবহার করা হয়েছিল এটা।
ওসব অ্যানটিক জিনিস কেনার মানুষ আলাদা, তাদের আলাদা। ব্যবসা, প্রতিবাদ করলেন চাচী। তা ছাড়া দামও নিশ্চয় অনেক উঠবে।
তা উঠবে, কাগজটা এক পাশে সরিয়ে রাখলেন চাচা। অ্যানটিক যারা জোগাড় করে, তারা তো পাগল হয়ে ছুটে আসবে।
তা হলে আর গিয়ে কী করবে? উঠে টেবিল পরিষ্কার করতে শুরু করলেন চাচী। কাপ-প্লেটগুলো নিয়ে গিয়ে সিঙ্কে চুবিয়ে রাখলেন। একটা একটা করে তুলে ধুয়ে মুছে সাজিয়ে রাখতে লাগলেন তাকে। পথে ঘোড়ার খুরের শব্দ হতেই কান পাতলেন। ওই যে, পারকারদের মেয়েটা যাচ্ছে।
জানালার কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর। হ্যাঁ, পারকারদের মেয়েটাই। অন্য দিনের মতই ঘোড়ায় চেপে চলেছে। চমৎকার একটা মাদী আপালুসা, বাদামী লোম থেকে যেন তেল চুঁইয়ে পড়ছে। লেজের কাছে খানিকটা সাদা ছোপ আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে ঘোড়াটাকে। খুব সুন্দর! আপন মনেই বলল কিশোর। আপালুসা আরও দেখেছি, কিন্তু এমনটি দেখিনি!
ঘোড়ার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল কিশোর, কিন্তু আরোহিণীর ব্যাপারে কোন মন্তব্যই করল না। মাথা উঁচু করে বসে আছে মেয়েটা, নজর সামনে, ডানে-বায়ে কোন দিকেই ফিরছে না।
সৈকতে যাচ্ছে বোধহয়, কাজ করতে করতেই বললেন মেরি চাচী। দৌড় করাতে। মেয়েটা বড় বেশি একা। রুজের কাছে শুনলাম, বাবা-মা ইউরোপে থাকে।
জানি, বলল কিশোর। সে আরও জানে, পারকারদের বাড়ি দেখাশোনা করে রুজ, মেয়েটাকেও। বিকেলে প্রায়ই ইয়ার্ডে আসে রুজ, মেরি চাচীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করে। আশপাশে ঘুরঘুর করে তখন কিশোর, কথা শোনে।
মাস কয়েক আগে মোড়ের কাছের পুরানা প্রাসাদটা কিনেছেন। মিস্টার পারকার। আগে যা ছিল তা-ই রয়েছে বাড়িটা, সারানো দরকার মনে করেননি তিনি। কিশোর জানে, বাড়িটার খাবার ঘরে পুরানো আমলের মস্ত এক ঝাড়বাতি ঝোলানো আছে। বাতিটা আগে ছিল। ভিয়েনার এক জমিদারের প্রাসাদে। জানে, মিসেস পারকারের একটা হীরের হার আছে, ওটার আগের মালিক ছিল ইউজেনি-র এক সম্রাজ্ঞী। পারকারদের মেয়েটার নাম জিনা, ঘোড়াটা তার খুব প্রিয়। কিশোর। এটাও জানে, বর্তমানে জিনার এক খালা আছে তাদের বাড়িতে। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে দিন কয়েক আগে এসেছে মহিলা। রুজের মন্তব্য: বুড়িটার কাণ্ডকারখানা ভারি অদ্ভুত!