ম্যাজিক পাউডার, বলল কিশোর।
ধপ করে একটা আধপোড়া চেয়ারে বসে পড়ল মুসা। একটা ফাইল কেবিনেটে কাঁধ ঠেকিয়ে হেলান দিল। ওভাবে রহস্য করে যখন কথা বল না, বড় বিরক্ত লাগে! ওই পাউডার দেখানর জন্যে কম্বলের তলা থেকে তুলে এনেছ?
জবাব দিল না কিশোর। হাতের কাছের তাক থেকে একটা ফ্লাস্ক নামাল। মুখ। খুলে কয়েক ফোঁটা পানি ঢেলে দিল পাউডারে। ছোট একটা প্লাস্টিকের চামচ নিয়ে। নাড়তে শুরু করল। এটা এক ধরনের স্ফটিকের গুঁড়ো, মেটালিক কম্পাউণ্ড। অনেক পুরানো আমলের একটা অপরাধ বিজ্ঞানের বইয়ে পড়েছি এটার কথা। পানিতে গলে যায় এই পাউডার।
ভুরু কোঁচকাল রবিন। কেমিস্ট্রির ওপর লেকচার দিতে ডেকেছ নাকি?
শুনে যাও, ড্রয়ার খুলে টুথপেস্টের টিউবের মত একটা টিউব বের করল কিশোর। মুখ খুলে টিপ দিতেই টুথপেস্টের মতই সাদা জিনিস বেরোল। খানিকটা ফেলল জারে। তারপর মুখ বন্ধ করে রেখে দিল ড্রয়ারে। চামচ দিয়ে জোরে জোরে নেড়ে পাউডারের সঙ্গে মেশাতে লাগল পানি আর পেস্ট। এক ধরনের মলম তৈরি করছি।
কপালে লাগাবে? মস্তিষ্ক বিকৃতির ওষুধ? হতাশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল মুসা।
জবাব দিল না কিশোর। গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে, কি জিনিস বানিয়েছে। পানি, পেস্ট আর পাউডার মিলে চমৎকার এক ধরনের ক্রীমমত তৈরি হয়েছে। ব্যস, এতেই চলবে। ঘোষণা করল গোয়েন্দাপ্রধান। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগিয়ে দিল। জারের মুখ। এখন আমাদের কাছেও আছে ম্যাজিক অয়েন্টমেন্ট।
তাতে কি? কৈফিয়ত চাওয়ার মত করে বলল মুসা।
ধর, কোথাও এই মলম মাখিয়ে দিলাম, বলল কিশোর। মিস্টার অলিভারের। ডেস্কের কথাই ধর। ড্রয়ারের হাতলে লাগাতে পারি, ওটা চীনামাটির তৈরি। পাতলা করে মাখলে দেখা যাবে না। হাতল ধরলেই মলম লেগে যাবে হাতে। আধঘণ্টা পর। কালো কালো দাগ পড়ে যাবে লোকটার আঙুলে। হাজার ধুয়েও পুরোপুরি ভোলা যায় না ওই দাগ, অন্তত কয়েকদিন তো নয়ই।
অ, এই ব্যাপার, চেপে রাখা শ্বাসটা শব্দ করে ফেলল রবিন। তাহলে কেসটা নিচ্ছি আমরা?
গতরাতেই ফোন করেছিলেন মিস্টার অলিভার, বলল কিশোর। জানিয়েছেন, তিনি ঘুমোতে পারছেন না। আমরা চলে আসার পর কয়েকবার নাকি ওই ভূতটা ঢুকেছিল তাঁর ঘরে। অস্তিত্ব টের পেয়েছেন, ছায়াটা দেখেছেন। ভয় পাচ্ছেন। তিনি।
ইয়াল্লা! কিশোর, ওই লোকটার মতিভ্রম ঘটেছে, বলে উঠল মুসা। ওর জন্যে আমাদের কিছুই করার নেই।
হয়ত, মাথা ঝোকাল কিশোর। নিঃসঙ্গ লোকের বেলায় এটা বেশি ঘটে। অনেক উদ্ভট কল্পনা আসে মাথায়, একসময় সেটাকে বাস্তব বলে ধরে নেয়। এজন্যেই কেসটা নিতে দ্বিধা করেছিলাম কাল। কিন্তু, পুরো ব্যাপারটা তদন্ত না করেই যদি সরে আসি, মানুষটার প্রতি অবিচার হয়ে যাবে। একটা কথা তো ঠিক, পুলিশকে বললে বিশ্বাস করবে না তার কথা। বড় কোন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে যেতে পারেন, কিন্তু তারাও বিশ্বাস করবে না। যদি সত্যিই পুরো ব্যাপারটা তার কল্পনা হয়ে থাকে, আমাদের কিছুই করার নেই। কিন্তু কোন বদলোকের শয়তানীও। হতে পারে এটা। তাহলে ধরতে হবে লোকটাকে। মিস্টার অলিভারকে এই মানসিক অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। একে একে দুই সঙ্গীর দিকেই তাকাল। গোয়েন্দাপ্রধান। কি বল? ওঁকে বলব, আমরা অসিছি?
রবিন হাসল। খামোকা জিজ্ঞেস করছ কেন আমাদেরকে? জবাবটা তো তুমি জানই।
গুড, বলল কিশোর। ইসস, একটা মাস ফুড়ৎ করে উড়ে চলে গেল। গাড়িটা থাকলে কি ভালই না হত…।
ওটা তো প্রায় ব্যবহারই করতে পারলাম না আমরা, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল রবিন। বাইরে বাইরেই কাটালাম। সত্যি একটা গাড়ি থাকলে—
নেই যখন, ভেবে আর কি লাভ? বাধা দিয়ে বলল কিশোর। সকাল সাতটায় লস অ্যাঞ্জেলেসের বাস, রকি বীচ থেকে ছাড়ে, খোঁজ নিয়েছি। ওটাই ধরব আমিরা। চাচী ওঠেনি এখনও। একটা চিঠি লিখে রেখে যাব।
আমি যাচ্ছি না, গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা করল মুসা।
যাচ্ছ না মানে! প্রায় একই সঙ্গে প্রশ্ন করল কিশোর আর রবিন।
কিছু না খেয়ে এক কদম নড়ছি না আমি এখান থেকে। এত সকালে গরম গরম না পাওয়া যাক, বাসি পান্তা হলেও চলবে—
হেসে ফেলল অন্য দুজন।
বেশ, হাসতে হাসতে বলল কিশোর। চল। রান্নাঘর থেকে ঠাণ্ডা স্যাণ্ডউইচ নিয়ে নেব। গতরাতে ইয়া বড় এক কেক বানিয়েছেন চাচী। অর্ধেকটা মেরে দেব আমরা। চলবে?
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। দুই নাম্বার সুড়ঙ্গে নেমে পড়ল সবার আগে।
.
০৪.
আটটা নাগাদ উইলশায়ারে বাস থেকে নামল তিন গোয়েন্দা। কাছেই প্যাসিও প্লেস। হেঁটেই চলল ওরা।
রেকটরির সামনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সেইন্ট জুডস গির্জার যাজক ফাদার স্মিথ। তিন গোয়েন্দাকে দেখে মৃদু হাসলেন। মাথা সামান্য নুইয়ে গুড মর্নিং বললেন।
ছেলেদের আশঙ্কা ছিল, মিসেস ডেনভারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। হল না। নিরাপদেই সিঁড়ি বেয়ে ব্যালকনিতে উঠে এল ওরা। দরজা বন্ধ। টেপ দিয়ে আটকানো রয়েছে একটা কাগজ। তাতে লেখা: ছেলেরা আমি ২১৩, লুকান কোর্টে গেলাম। ওখানেই পাবে আমাকে। এই বাড়ির ঠিক পেছনের বাড়িটাই। পাশের সরু পথটা পেরোলেই ওটার সামনের দরজায় পৌঁছে যাবে। তোমাদের অপেক্ষায় রইলাম।-ফ্র্যাঙ্ক অলিভার।
কাগজটা তুলে নিয়ে পকেটে ভরল কিশোর। ওই বাড়িতেই চোর ঢুকেছিল গতরাতে।