ঠিকই, লোকটার কথায় সায় দিল এক মহিলা। ফাদারকে জ্বালিয়ে মারে ওরা। আইরিশ মেয়েমানুষটা ভাবে, সে-ই গির্জার সব। আরও দোষ আছে ওর। প্রায়ই ভূত দেখে গির্জার ভেতরে। তার ধারণা, অন্ধকার জায়গা মানেই ভূতের আস্তানা। আর ওই দারোয়ানটা, পল, সে তো ভাবে, সে না থাকলে ধসেই পড়ে যেত গির্জাটা।
গির্জা থেকে কনস্টেবল দুজনকে নিয়ে বেরিয়ে এল সার্জেন্ট। চতুরে দাঁড়ানো। জনতার ওপর চোখ বোলাল একবার। এখানকার চার্জে রয়েছেন কে?
তিনি চা খেতে গেছেন রেকটরিতে, বলল তিন গোয়েন্দার সঙ্গে কথা বলছিল যে লোকটা। দাঁড়ান, ডেকে আনছি।
শেষবারের মত মাথার ওপর চক্কর দিয়ে গেল পুলিশ হেলিকপ্টার। চলে গেল উত্তরে।
মিস্টার অলিভার আর তার মোটা সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলছিল লেফটেন্যান্ট, এগিয়ে এল।
গির্জার ভেতরে নেই, জানাল সার্জেন্ট।
কাঁধ ঝাঁকাল লেফটেন্যান্ট। আশ্চর্য! এত তাড়াতাড়ি পালাল কি করে? হেলিকপ্টারের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে গেল! নাহ, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আজ রাতে আর কিছুই করার নেই আমাদের, সার্জেন্ট।
প্রায় ছুটতে ছুটতে এল পল। ছুটে গেল গির্জার দিকে। দড়াম করে বন্ধ করে দিল দরজা।
কয়েক মিনিট পর, পুলিশের গাড়িগুলো চলে গেল। একে একে যার যার বাড়ির দিকে চলে গেল জনতা।
অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের দিকে চলল তিন গোয়েন্দা। গেটের কাছে সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে সেই মোটা লোকটার সঙ্গে এখনও কথা বলছেন মিস্টার অলিভার।
মিস্টার অলিভার, বলল কিলোর। আপনাদের আলোচনায় বাধা দিলাম না
না না, তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন অলিভার। তার সঙ্গীর দিকে কিশোরকে তাকাতে দেখে বললেন, ও, এ হল মিকো, মিকো ইলিয়ট। কি হয়েছিল, ওর কাছেই জানলাম।
আমার ভাইয়ের ঘরে চোর ঢুকেছিল, তিন গোয়েন্দাকে জানাল মিকো। লুকান কোর্টে তার বাসা। এই রাস্তার পরের রাস্তাটাই।
সত্যিই, মিকো, বললেন অলিভার। আমারই খারাপ লাগছে, তোমার তো লাগবেই।
লাগারই কথা, মাথা ঝোঁকাল মিকো। যাকগে, এখন আর ওসব ভেবে লাভ নেই। যাই। সকালে দেখা হবে।
অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের চত্বরে উঠে পড়ল মিকো। বাড়ির পাশের সরু পথ ধরে হেঁটে চলে গেল পেছনে।
ধপ করে সিঁড়ির ওপরেই বসে পড়লেন অলিভার। হতাশ। কি সর্বনাশ করেছে, কে জানে!
কি? চুরি? জানতে চাইল রবিন।
মিকোর ভাই জ্যাক ছিল আমার বন্ধু, জানালেন মিস্টার অলিভার। আমার বন্ধু, গুরু এবং মস্তবড় শিল্পী। হপ্তা দুয়েক আগে মারা গেছে, নিউমোনিয়ায়।
চুপ করে আছে ছেলেরা।
বড় রকমের ক্ষতি, আবার বললেন অলিভার। বিশেষ করে আমার জন্যে, শিল্পরসিকদের জন্যে। তার ঘরে চোর ঢোকাটা—নাহ, ভারি খারাপ কথা!
কিছু চুরি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
এখনও জানে না মিকো। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকে দেখবে আজ রাতেই।
পায়ের শব্দ হল। ফিরে তাকাল রবিন আর মুসা। হাসিখুশি একটা লোক আসছে। গায়ে ধূসর রঙের পশমী-সায়েটার। বলিষ্ঠ, স্বচ্ছন্দ পদক্ষেপ। কাছে এসে–দাঁড়িয়ে পড়ল লোকটা। কি ব্যাপার?
পড়শীর বাড়িতে চোর ঢুকেছিল, মিস্টার জ্যাকবস, বললেন অলিভার। পুলিশ এসেছিল।
তাই, বলল আগন্তুক। সেজন্যেই কয়েকটা স্কোয়াড-কারের আওয়াজ শুনলাম। চোর ধরতে পেরেছে?
নাহ!
খুব খারাপ কথা, বলল জ্যাকবস। অলিভারের পাশ কাটিয়ে সিঁড়িতে উঠে পড়ল। গেট পেরিয়ে ঢুকে গেল চত্বরে। খানিক পরেই অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের একটা দরজা খোলা এবং বন্ধ হওয়ার আওয়াজ হল।
আমিও যাই, বললেন অলিভার। যেন খুব দুর্বল লাগছে, এমন ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন। হ্যাঁ, আগামীকাল সকালেই তোমাদের সিদ্ধান্ত জানিও। এসব আর সইতে পারছি না। প্রথমে ভূত, তারপর জ্যাকের মৃত্যু, এখন এই চোর! আমার মত বুড়োর জন্যে অনেক বেশি হয়ে গেছে!
.
০৩.
পরদিন, খুব ভোরে, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে এসে হাজির হল রবিন আর মুসা।
ডিসেম্বরের এই হিমেল সকালে একজন খদ্দেরও নেই ইয়ার্ডে। কেমন যেন মৃত মনে হচ্ছে নির্জন, বিশাল, বাতিল মালের ডিপোটাকে। মেরিচাচী আর রাশেদ চাচা ঘুম থেকে ওঠেনি এখনও।
বড় করে হাই তুলল মুসা। মাঝে মাঝে মনে হয়, কিশোর পাশার সঙ্গে বন্ধুত্ব না হলেই ভাল হত। সক্কাল বেলা, এখনও কাকপক্ষী ওঠেনি, ঘুম থেকে ডেকে তুলে আনল! কটা বাজে? বড় জোর ছটা।
না এলেই পারতে, বলল রবিন। কিশোর তত তোমাকে জোর করেনি। নিশ্চয় জরুরি কোন ব্যাপার আছে, নইলে এভাবে ডেকে পাঠাত না।
ইয়ার্ডের বড় লোহার গেটটা আবার বন্ধ করে দিল ওরা। এগোল।
দুই সুড়ঙ্গের কাছে চলে এল। বিশাল গ্যালভানাইজড় পাইপের মুখ থেকে লোহার পাতটা সরিয়ে ঢুকে পড়ল রবিন। পেছনে ঢুকল মুসা। ভেতর থেকেই হাত বাড়িয়ে আবার জায়গামত দাঁড় করিয়ে দিল পাতটা।
হামাগুড়ি দিয়ে এসে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল ওরা।
এত দেরি করলে কেন? দেখেই বলে উঠল কিশোর।
রবিন জবাব দিল না।
গোঁ গোঁ করে উঠল মুসা। দেরি? ঘুম থেকে উঠেই তো ছুট লাগালাম। দাঁত মাজার সময়ও পাইনি। খাওয়া তো দূরের কথা। কিশোরের দিকে তাকাল। তা। ভোররাতে এই জরুরি তলব কেন? হাতে ওটা কিসের জার? ব্যাঙ-ট্যাঙ ধরে। ভরেছ?
দুআঙুলে ধরে আছে কিশোর চীনামাটির ছোট একটা জার। মুখ খোলা। সামান্য একটু কাত করল। ভেতরে সাদা পাউডার দেখতে পেল মুসা আর রবিন।