নিশ্চয় বোমার সরঞ্জাম কিনতে? বলে উঠলেন চিত্রপরিচালক। এসব জিনিস বাড়িতে রাখে না লোকে হরহামেশা।
অতি সাধারণ কয়েকটা কেমিক্যাল কিনে নিয়ে এল জ্যাকবস, আবার বলল কিশোর। সাধারণ একটা বোমা বানিয়ে বসিয়ে রাখল মিসেস ডেনভারের গাড়ির ইঞ্জিনে। মোটেই মারাত্মক ছিল না বোমাটা। প্রচণ্ড শব্দ আর ধোয়া বেরোনর জন্যে তৈরি, ক্ষতি সামান্যই করে। ভয় দেখিয়ে মহিলাকে তাড়াতে চেয়েছে আসলে। জ্যাকবস। যাতে অন্তত দুটো দিন পুলটা পরিষ্কার করাতে না পারে ম্যানেজার। রহস্যটা সমাধান প্রায় করে এনেছিলাম, কিন্তু ঘরে আগুন লাগিয়ে একটা গোলকধাঁধায় ফেলে দিল আমাকে জ্যাকবস। আগুন লাগাটা দুর্ঘটনা নয়, তখনই বুঝেছি। খটকা লাগল। সিগারেটের ব্যাপারে খুবই সতর্ক জ্যাকবস, সঙ্গে অ্যাশট্রে নিয়ে ঘোরে, ছাই থেকে আগুন লেগে যাবার ভয়ে। ধরে নিলাম, এনড্রু চোর। আগুন। লাগিয়ে জ্যাকবসকেও সরাতে চয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগল মনে, কেন সরাতে যাবে? পুলের সঙ্গে জ্যাকবসের কোন সম্পর্ক নেই। কোন যুক্তিই খুঁজে পেলাম না। দ্বিধায় পড়ে গেলাম। সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেল, যখন চিঠি নিয়ে এল পিয়ন। খামে উইলশায়ার পোস্ট অফিসের ছাপ। তাছাড়া সময় ঠিক করেছে বিকেল পাঁচটা, বেড়ালকে খাবার খাওয়ার সময় তখন এনড্রুর। কিছুতেই এই সময়ে টাকা আনতে যাবে না সে। শিওর হয়ে গেলাম, জ্যাকবসই চোর।
হাসলেন চিত্রপরিচালক। ঠিক। পাঁচটায় কিছুতেই অনুপস্থিত থাকবে না এনড্রু। মোটেল থেকে এসেও বেড়ালদেরকে খাওয়ায়। একবার গরহাজিরা দিলেই চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলবে বেড়ালের পাল। বেড়াল-মানবের অনুপস্থিতি জানিয়ে দেবে। কিছুতেই এই ঝুঁকি নিত না এনড্রু হলে। ঠিকই ভেবেছ তুমি। ভুরু কোচকালেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। কিন্তু চুরি করতে গেল কেন জ্যাকবস? টাকার এতই টান পড়েছিল?
টান পড়েছিল, পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে জ্যাকবস। তার ব্যবসা খুব। মন্দা যাচ্ছিল। অনেক ধার হয়ে গিয়েছিল ব্যাংকে। এমনিতেই টাকা পরিশোধ করতে না পারার দায়ে জেলে যেতে হত তাকে। কাজেই নিয়েছে ঝুঁকি।
সেই পুরানো প্রবাদ! দীর্ঘশ্বাস ফেললেন চিত্রপরিচালক। অভাবে স্বভাব নষ্ট! নইলে জ্যাকবসের মত লোক একাজ করতে যেত না! ভীষণ চাপে পড়েই কাজটা করে ফেলেছে বেচারা!
আয় যখন ভাল ছিল, ভাগ্নের পড়ার খরচের জন্যে, তার নামে ব্যাংকে অনেক টাকা জমা করেছে জ্যাকবস মাসে মাসে, বলল কিশোর। দশ হাজার ডলারের বেশি হবে। ব্যাংকের ঋণ শোধ করে দিয়েছে বব তার টাকা থেকে। কিন্তু ব্যাপারটা এখন আর শুধু তার হাতে নেই। আরও কয়েকটা কেস ঝুলছে জ্যাকবসের মাথায়। পল মিনকে পিটিয়ে বেহুশ করেছে, মিস ল্যাটনিনাকে বিষ খাইয়েছে, মিসেস ডেনভারের গাড়িতে বোমা ফাটিয়েছে। জানালা ভেঙে অন্যের ঘরে ঢুকে জিনিস চুরি করেছে, সেটা আবার ফেরত দেয়ার কথা বলে দশ হাজার ডলার দাবি করেছে। মালিকের কাছে। এগুলো মস্ত অপরাধ।
হু! মাথা ঝোঁকালেন চিত্রপরিচালক। আচ্ছা, কবে, কে মিস্টার। অলিভারের কাছে নিয়ে আসবে, জ্যাকবস জানল কিভাবে?
টমি বলেছে, বলল কিশোর। সেদিন সকালেই মিস্টার অলিভারের ঘরে ঢুকেছিল সে। ফোনে তাকে কথা বলতে শুনেছে মিকো ইলিয়টের সঙ্গে। মিসেস ডেনভার জ্যাকবসকে বলেছিল, কুকুর আনার কথা। সে ব্যাপারেই টমির সঙ্গে কথা বলছিল জ্যাকবস। এক পর্যায়ে টমি বলে বসেছে, ওটা জ্যান্ত কুকুর নয়, ক্রিস্টালের মূর্তি। অনেক দাম। কথায় কথায় তার কাছ থেকে খবর বের করে নিয়েছে স্টকব্রোকার। তারপর মিউজিয়মে চলে গেছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছে, মূর্তিটা কে বানিয়েছে, কেমন মূল্যবান। সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জেনে এসেছে শো গ্যালারি থেকে। মনে মনে প্ল্যান তৈরি করে ফেলেছে। মিকো ইলিয়টকে অনুসরণ করে এসেছে গ্যালারি থেকেই। জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে মিকো ঘরে থাকতেই…
বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল একেবারে! মন্তব্য করলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
হ্যাঁ। তবে ওর কপাল খারাপ, রাস্তার মোড়েই পুলিশ ছিল। তাড়া খেয়ে নিজের ঘরে এসে ঢুকতে পারত, কিন্তু তাহলে ধরা পড়ে যেত। গির্জাটাই নিরাপদ জায়গা মনে করেছে। ঠিকই মনে করেছিল। পুলিশকে তো ফাঁকি দিয়ে ফেলেছিল।
কিন্তু সে জানত না, সে-সময়ে মিস্টার অলিভারের বাড়িতে হাজির তিন গোয়েন্দা, বুক ফোলাল মুসা। মুখে হাসি।
আসলেই তার কপাল খারাপ, বলল কিশোর। ফাঁকি তো প্রায় দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সে কি আর জানত, পুলে যখন মূর্তিটা ছাড়ছে, কাছেই ছায়া। শরীরে দাঁড়িয়েছিল টমি গিলবার্ট?
টমি আছে এখনও ও-বাড়িতে? জানতে চাইলেন পরিচালক।
না, বলল মুসা। বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তাঁকে, মিস্টার অলিভার। কাছেপিঠে ওরকম একটা প্রেতসাধককে রেখে শান্তিতে থাকতে পারবেন না, বুঝে ফেলেছেন। পশ্চিম লস অ্যাঞ্জেলেসের কোথায় একটা বাড়িতে গিয়ে উঠেছে এখন সে।
ওখান থেকেও তো আসতে পারে তার ছায়া শরীর?
পনেরো দিন হয়ে গেল, জবাব দিল রবিন। এর মাঝে একবারও আসেনি, জানিয়েছেন মিস্টার অলিভার। মিসেস ডেনভারকেও বিদেয় করে দিয়েছেন। ভাড়াটেদের শান্তি নষ্ট করবে তার ম্যানেজার, এটা কিছুতেই চান না। নতুন ম্যানেজার রেখেছেন। কমবয়েসী একটা মেয়ে। কারও সাতে ও থাকে না পাঁচেও না। কাজ যা করার করে, বাকি সময় ঘরে বসে নিজের কাজ করে, বই পড়ে, কিংবা টিভি দেখে। যেচে পড়ে কারও সঙ্গে কথা বলতেও যায় না।