কি হল? জিজ্ঞেস করল হেগান।
তাড়াহুড়োর কিছু নেই, কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর। হাঁপাচ্ছে। কোথায় গেছে লোকটা, জানি আমি। লুকোতে চেষ্টা করবে না সে। চমৎকার অ্যালিবাই রয়েছে।
ও, তুমিই সেই ছেলে, যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মিস্টার অলিভার, বলল সার্জেন্ট। তো, খোকা, কোথায় পাওয়া যাবে তাকে?
এখান থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে। হ্যামলিন ক্লিনিকে।
স্কোয়াড কারের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে সবই শুনল পুলিশ অফিসার। ডাকল, এস, গাড়িতে ওঠ।
পেছনের সিটে উঠে বসল তিন গোয়েন্দা। দেখতে দেখতে ক্লিনিকের গেটে পৌঁছে গেল গাড়ি। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দুপাশের দরজা। লাফিয়ে নেমে এল আরোহীরা।
রিসেপশন রুমে ঢুকে পড়ল ওরা হুড়মুড় করে। চোখ তুলে তাকাল। রিসেপশনিস্ট। কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেই চুপ হয়ে গেল। তাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করল না। পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়ল বারান্দায়।
দুপদাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে দোতলায় উঠে এল ওরা! থমকে দাঁড়াল ডিউটি-নার্স। কাকে চাই? রিসেপশনে আমাকে কিছু বলল না তো!
দরকার নেই, বলল কিশোর। ছুটে গেল বারান্দা দিয়ে। তার পেছনে আর সবাই। হাঁ করে চেয়ে রইল নার্স।
দরজা বন্ধ জ্যাকবসের কেবিনের। ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। কিশোর।
বিছানায় শুয়ে আছে জ্যাকবস। গলার কাছে টেনে দিয়েছে কম্বলটা। বিছানার উল্টোদিকের দেয়াল ঘেঁষে রাখা টেলিভিশনটা অন করা।
চোখ ফিরিয়ে তাকাল জ্যাকস। কি ব্যাপার?
প্যাকেটা কোথায়, মিস্টার জ্যাকবস? জিজ্ঞেস করল কিশোর। আলমারিতে নাকি কম্বলের তলায় নিয়ে শুয়ে আছেন?
উঠে বসল জ্যাকবস। মুখ লাল হয়ে গেছে, শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে যেন। গা থেকে খসে পড়ে গেল কম্বল। চেক চেক একটা জ্যাকেট গায়ে, নিচে শার্ট নেই।
টান দিয়ে আলমারির পাল্লা খুলে ফেলল কিশোর। ওপরের তাকেই পাওয়া। গেল প্যাকেটটা। খালা হয়নি এখনও।
গুঙিয়ে উঠল জ্যাকবস।
প্যাকেটটা ধরেছেন, বলল কিশোর। আপনার হাতে মলম লেগে গেছে। শিগগিরই ভরে যাবে কালো কালো দাগে।
চোখের সামনে হাত নিয়ে এল জ্যাকবস।
সামনে বাড়ল সার্জেন্ট হেগান। উকিলকে ডাকবেন নাকি?
আর উকিল ডেকে কি করব! দীর্ঘশ্বাস ফেলল জ্যাকবস।
কিশোরের দিকে ফিরল সার্জেন্ট। অলিভার বললেন, তোমরা খুব চালাক! ঠিকই বলেছেন। সুন্দর অ্যালিবাই! প্রাইভেট হসপিটাল! কে ভাবতে পেরেছিল…
নিজের ফ্ল্যাটে নিজেই আগুন লাগিয়েছেন জ্যাকবস, বলল কিশোর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্যে। তিনি জানেন, এ-সময়ে এ-হাসপাতালে রোগীর ভিড় থাকে না। শহরের বেশির ভাগ লোকই বাইরে চলে গেছে বড় দিনের ছুটিতে। ফলে ডিউটি-নার্স আর ডাক্তারের সংখ্যাও কমিয়ে দেয়া হয়। ওদের চোখ এড়িয়ে কয়েক মিনিটের জন্যে বেরিয়ে যাওয়া কিছু না। তাছাড়া হাসপাতালটা বাসার কাছে। হাসপাতালের পেছনে ঝাড়দার ঢোকার পথ দিয়ে সহজেই ঢোকা কিংবা বেরোনও যায়। আসলে কিন্তু খুব বেশি আহত হননি জ্যাকস। যা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি করেছেন ভান। গাঁটের পয়সা খরচ করে কেউ যদি প্রাইভেট হাসপাতালে আসতে চায়, ডাক্তারদের কি? তাই তাঁর এখানে আসার ব্যাপারে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তাররাও আপত্তি করেননি। তাই না, মিস্টার জ্যাকবস?
.
২০.
শহরের বাইরে গিয়েছিলেন চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার। জানুয়ারির মাঝামাঝি ফিরে এলেন।
অফিসে, বিশাল ডেস্কের ওপাশে বসে আছেন চিত্রপরিচালক। এ পাশে বসেছে তিন গোয়েন্দা। গভীর মনোযোগ দিয়ে একটা রিপোর্ট পড়ছেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। দীর্ঘক্ষণ পরে মুখ তুললেন। চমৎকার! রবিন লিখেছেও খুঁটিয়ে। নিজের ছায়াদেহ নিয়ে ঘুরতে বেরোনো! সাংঘাতিক ব্যাপার! বড় বড় ভূতও ওস্তাদ মানবে টমি গিলবার্টকে!
ওর এই বিশেষ ক্ষমতার কথা সে একবারও স্বীকার করেনি, বলল রবিন। বলে, স্বপ্ন দেখে। কিন্তু প্রফেসর লিসা রোজারের কাছে সব শুনে এসেছি। কিভাবে স্বপ্ন দেখে টমি, জানি আমরা।
হ্যাঁ, কিশোরের দিকে ফিরলেন চিত্রপরিচালক। কিশোর, কি করে জানলে, জ্যাকবসই চোর?
কিছু যোগ কিছু বিয়োগ করে, কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল কিশোর। প্রথমেই সন্দেহ করলাম, চোর মিস্টার অলিভারের ভাড়াটেদের কেউ হবে। সে জানে গির্জার চাবি রেকটরির কোথায় রাখা হয়। মিস ল্যাটনিনা আর মিসেস। ডেনভারের স্বভাবচরিত্র জানাও তাদের কাছাকাছি যারা থাকে, তাদের পক্ষেই সহজ। জানে, ওই দুজনকে সরাতে পারলে পুলটা নিরাপদ। টমিকে সন্দেহ করলাম। পরে বুঝল, সে চোর নয়। চুরিটা যখন হয়, সে ঘুমিয়েছিল তার ঘরে। একই সময় দুজায়গায় থাকার ক্ষমতা অবশ্য তার আছে। তবে বড় জোর দেখতে এবং শুনতে পারে ছায়া শরীরে যখন থাকে। কোন জিনিস নাড়াচাড়া করতে পারে না। তার মানে ছায়া শরীর নিয়ে কারও ঘরে ঢুকে কোন জিনিস চুরি করতে পারে না। সে। বাদ দিলাম তাকে সন্দেহ থেকে। বব বারোজকেও সহজেই বাদ দেয়া গেল। সে ছিলই না চুরির রাতে প্যাসিও প্লেসে। পুরুষ ভাড়াটেদের মাঝে বাকি রইল। ব্রায়ান এনড্রু, আর জ্যাকবস। চুরির সময় ও-বাড়িতে দুজনের কাউকেই দেখা যায়নি। দুজনেই শুনেছে, মিসেস ডেনভারের পুলের পানি পরিষ্কার করার কথা। পরে মনে পড়েছে আমার, কথাটা শুনে একটু যেন চমকে উঠেছিল জ্যাকস। এনড্রুর কোন ভাবান্তরই হয়নি। তাছাড়া সে রাতে গাড়ি নিয়ে কোথাও বেরিয়েছিল। জ্যাকবস।