— সেটা আপনার ব্যাপার নয়! ধমকে উঠলেন অলিভার। কথাটা বেশি কড়া হয়ে গেছে বুঝে স্বর নরম করলেন। ওরা কিছু করেনি। কাকে যেন খুঁজছে পুলিশ! বাড়ির পেছন থেকে এসে গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে। ধাওয়া করে এসেছে পুলিশ!
চোর-ছ্যাচোড় হবে! পেছন থেকে বলে উঠল তরুণ। পরনে কালো সোয়েটার, হালকা বাদামি ট্রাউজার। পায়ে চপ্পল।
খুটিয়ে দেখছে ওকে কিশোর। রোগাপাতলা লোকটা, মাথায় কালো চুল, কতদিন আগে ধুয়েছে, কে জানে! তবে খুব শিগগির নয়। মুসার মতই লম্বা, তবে অনেক রোগা।
বাহ্, বেশ বুদ্ধি তো তোমার, টমি! মুখ বাঁকাল মিসেস ডেনভার। কি করে জানলে, চোর-ছাচোড়কে খুঁজছে পুলিশ?
অপ্রস্তুত হয়ে গেল টমি গিলবার্ট ঢোক গিলল। গলাবন্ধ সোয়েটারের ওপরে উঠে আবার নেমে পড়ল কণ্ঠ। চোর-ছ্যাচোড় ছাড়া আর কে হবে?
ছড়িয়ে পড়! বড় রাস্তার দিক থেকে চিৎকার শোনা গেল। গলিপথগুলো আটকাও! গির্জার ভেতরে দেখ!
গোটা চারেক পেট্রলকার দেখা গেল রাস্তার মোড়ে। নাচানাচি করছে টর্চের আলো। প্রতিটি কোণ, গলিঘুপচি, ঝোঁপঝাড়ের ভেতর উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখছে। পুলিশ। প্রচণ্ড শব্দ তুলে মাথার ওপরে চলে এল একটা হেলিকপ্টার, ঘুরে ঘুরে চক্কর দিতে শুরু করল পুরো এলাকাটায়। সার্চলাইটের আলো ফেলে খুঁজছে লোকটাকে। পথে, বাড়ির দরজায় বেরিয়ে এসেছে কৌতূহলী লোকজন।
বেশি দূরে যেতে পারেনি, বলে উঠল একজন পুলিশ। নিশ্চয় এদিকেই কোথাও লুকিয়েছে।
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে মোটাসোটা একজন লোক। মাথায় ধূসর ঘন চুল। উত্তেজিত ভঙ্গিতে লেফটেন্যান্টের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল লোকটা। এগিয়ে এল অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের গেটের দিকে। ফ্র্যাঙ্ক। ডাকল। লোকটা। ফ্র্যাঙ্ক অলিভার।
এগিয়ে গেলেন অলিভার। তার হাত ধরল লোকটা। নিচু গলায় বলল কি যেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছেন অলিভার। ভুলেই গেছেন যেন ছেলেদের উপস্তিতি।
কিশোরকে খোঁচা লাগাল মুসা। চল, দেখি গির্জায় কি করছে পুলিশ!
অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছে গির্জার দিকে। তিন গোয়েন্দাও এগোল।
ইতিমধ্যেই গির্জার চত্বরে ভিড় জমিয়েছে অনেক লোক, তাদের মাঝে মিসেস ডেনভারও আছে। খোলা দরজা দিয়ে সবাই উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। ভেতরে খোঁজাখুজি করছে দুজন পুলিশ। কোথাও বাদ দিচ্ছে না ওরা। নুয়ে পড়ে বেঞ্চগুলোর তলায়ও দেখছে।
জনতার ভেতর দিয়ে পথ করে এগিয়ে গেল কিশোর। গির্জার সিঁড়ির দুটো ধাপ উঠল। তাকাল ভেতরে। বেদিতে জ্বলছে সারি সারি লাল নীল সবুজ মোমবাতি, খানিক আগে অনুষ্ঠান হয়েছিল, তার সাক্ষী। বেশ কিছু স্থির মূর্তি চোখে পড়ল তার। স্ট্যাচু। দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ছোট নিচু বেদিতে, মেঝেতে, ঘরের কোণে দেয়ালে ঠেস দিয়ে। একগাদা ছোট পুস্তিকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেঁটেখাট মোটা এক লোক, লাল মুখ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ সার্জেন্ট।
আমি বলছি, কেউ ঢোকেনি এখানে, বলল মোটা লোকটা। সারাক্ষণ এখানে ছিলাম আমি। কেউ ঢুকলে অবশ্যই দেখতে পেতাম।
তা হয়ত পেতেন, চেঁচিয়ে বলল সার্জেন্ট। দয়া করে বেরিয়ে যান এখন। ভাল করে খুঁজব আমরা। ফিরে তাকাল সে। কিশোরের ওপর চোখ পড়তেই বলল, এখানে কি করছ, খোকা? যাও।
পুস্তিকা হাতে বেরিয়ে এল মোটা লোকটা। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিঁড়ি থেকে নেমে পড়ল কিশোর।
জনতার সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছেন এখন রোগাপাতলা, মাঝবয়েসী একজন লোক। গায়ে কালো আলখেল্লা, সাদা কলার, পাদ্রীর পোশাক। তার সঙ্গে রয়েছে। এক বেঁটে মহিলা। ধূসর চুল ঘাড়ের ওপর পরিচ্ছন্ন করে বাঁধা। পোশাকেই বোঝা যায়, গির্জায় কাজ করে।
ফাদার স্মিথ! চেঁচিয়ে উঠল পুস্তিকা-হাতে লোকটা। ওদেরকে বলুন আপনি। এ সারাক্ষণ গির্জায় ছিলাম আমি। আমার চোখ এড়িয়ে কারও পক্ষে ঢাকা সম্ভব ছিল না।
আহ, চুপ কর, পল! বিরক্ত গলায় বললেন ফাদার। খুঁজুক না ওরা, তোমার কি?
কি বললেন? কানের ওপর হাত রেখে ফাদারের দিকে চোখ ফেরাল পল।
খুঁজুক ওরা! চেঁচিয়ে বললেন ফাদার। কোথায় ছিলে তুমি?
চিলেকোঠায় উঠেছিলাম, পুস্তিকা পাড়তে।
তাহলে তো হয়েছেই! হেসে ফেলল ধূসর-চুল মহিলা। গির্জার ভেতরে হাজারখানেক হাতি ঢুকে দাপাদাপি করলেও ওখান থেকে শুনতে পাবে না তুমি। রোজই বলছি ডাক্তার দেখাও, কানের ব্যামো সারাতে পার কিনা দেখ। তবে দেখালেও সারবে কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
জনতার ভেতর থেকে হেসে উঠল কেউ।
মিসেস ব্রাইস, শান্ত গম্ভীর কণ্ঠে বললেন পাদ্রী, ইচ্ছে করে কেউ বধির হতে চায় না। ওভাবে কারও সম্পর্কে কথা বলা উচিত নয়। এস, রেকটরিতে যাই। চা খেতে ইচ্ছে করছে। পল, তুমিও চল। পুলিশের খোঁজা শেষ হলে এসে দরজায় তালা লাগিও। এখানে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই।
সরে পথ করে দিল জনতা। পাশের আস্তরবিহীন বাড়িটার দিকে চলে গেলেন ফাদার, পল আর ব্রাইস।
তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে হাসল জনতার একজন। তোমরা কি এদিকেই কোথাও থাক? ফিরে এসেছে হেলিকপ্টার, প্রচণ্ড শব্দ। জোরে কথা বলতে হচ্ছে। লোকটাকে।
না, জবাব দিল রবিন।
তাহলে জান না, মজার সব লোক বাস করে ওখানে, রেকটরির দিকে ইঙ্গিত। করে বলল লোকটা। পল মিনের ধারণা, গির্জাটা সে-ই চালাচ্ছে। তামারা ব্রাইস মনে করে, সে না থাকলে বন্ধই হয়ে যেত গির্জা। অথচ একজন দারোয়ান, আরেকজন হাউসকিপার! ওদের দুজনকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান ফাদার স্মিথ।