দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল মিকো। যাও, জলদি কাপড় বদলে এস, টমি। অলিভারের ঘরে থাকবে। তোমাকে চোখে চোখে রাখতে পারব।
জ্বলন্ত চোখে মিকোর দিকে তাকাল টমি। আপনি আমাকে আদেশ করার। কে? চেঁচিয়ে উঠল। বাড়িটা কি আপনার?
একই কথা তোমার বেলায়ও খাটে, বলে উঠলেন অলিভার। ছায়া শরীরেই হোক আর তরল শরীরেই হোক, তুমি আমার ঘরে ঢোকো কার হুকুমে? মিকো যা বলছে কর, নইলে জেলের ভাত খাওয়াব, চুরি করে অন্যের ঘরে ঢোকার অপরাধে। চোরাই মাল লুকিয়ে রাখার অপরাধে।
ঝটকা দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল টমি। গটমট করে হেঁটে গিয়ে ঢুকল শোবার ঘরে। টান দিয়ে খুলল আলমারির পাল্লা। কয়েক মুহূর্ত পরে বন্ধ করে দিল ধাক্কা দিয়ে। মিনিট কয়েক পরেই ফিরে এল সে। গায়ে কালো সোয়েটার, পরনে হালকা রঙের প্যান্ট।
রাতটা আমার বসার ঘরে কাটবে, এবং ঘুমোতে পারবে না! কড়া আদেশ জারি করলেন অলিভার।
গোমড়ামুখে মাথা ঝোঁকাল টমি।
মূর্তিটা এক হাত থেকে আরেক হাতে নিলেন অলিভার। কিশোর, তুমি বলেছিলে, আজ রাতে চোরটাকে ধরবে!
ধরতে তো চাই। তবে চেঁচামেচি করে ভাগিয়ে দিলাম কিনা, কে জানে! এখনও সময় আছে অবশ্য। আবার ফিরে আসতে পারে সে।
নীরবে মূর্তিটা কিশোরের হাতে তুলে দিলেন অলিভার। মিকো আর টমিকে নিয়ে রওনা হলেন তাঁর ঘরে।
আবার আস্তে করে পুলের পানিতে মূর্তিটা ছেড়ে দিল কিশোর। দুই সঙ্গীকে নিয়ে বসল ব্যালকনিতে। ঠাণ্ডা, অন্ধকার দীর্ঘ মুহূর্তগুলো পেরিয়ে গেল ধীরে ধীরে। পুব আকাশে ধলপহর দেখা দিল। ধীর পায়ে এগিয়ে এল শীতের কুয়াশামাখা ধূসর ভোর। চোর আর এল না সে রাতে।
আরও আগেই বোঝা উচিত ছিল, লাল চোখ ডলছে কিশোর। চোরটার আসার কোন দরকারই নেই। আগে টাকাটা নিয়ে নেবে মিস্টার অলিভারের কাছ থেকে, তারপর জানিয়ে দেবে কোথায় রেখেছে হাউণ্ডের মূর্তি। খুব সহজ। কেন খামোকা নিজে ওটা তুলে নিতে আসার ঝুঁকি নেবে?
পেছনে খুলে গেল দরজা। দাঁড়িয়ে আছেন অলিভার। নাশতা? ফিটফাট পোশাক পরনে, বেশ তাজা দেখাচ্ছে তাকে।
সবাই খেতে বসল, টমি গিলবার্ট ছাড়া। কাজের ঘরে একটা চেয়ারে বসে আছে গোমড়ামুখে। কিছু খেতে কিংবা কারও সঙ্গে কথা বলতে চায় না সে।
নাশতা শেষ করেই কাজে লেগে গেল কিশোর। পুরানো একগাদা খবরের কাগজ আর কাচি নিয়ে বসল। কেটে কেটে একের পর এক আয়তক্ষেত্র বানাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্র দুই ইঞ্চি চওড়া, পাঁচ ইঞ্চি লম্বা।
কি করছ? আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেলল রবিন।
শিগগিরই চোরটা জানাবে, কখন টাকা দিতে হবে তাকে। ওর জন্যে টাকার তোড়া তৈরি করে রাখছি, হাসল কিশোর। কুকুরটা কোথায়, জানেন এখন মিস্টার অলিভার। কাজেই সত্যি সত্যি টাকা দেবার কোন দরকারই নেই আর।
তাহলে ওই কাগজের তোড়া দেবারই দরকার কি? জানতে চাইল মুসা।
চোরটা কে জানার জন্যে, বলল কিশোর। তোড়াগুলোতে ম্যাজিক অয়েন্টমেন্ট মাখিয়ে দেব। ব্যাগটা ফেলে দিয়ে এলেই হল। তোড়ায় হাত দেবে
কালো দাগ পড়ে যাবে হাতে। তারপর চেপে ধরব ওকে।
এমনভাবে বলছ, যেন লোকটা আমাদের পরিচিত, বললেন অলিভার।
অবশ্যই পরিচিত, কিশোরের গলায় খুশির আমেজ। ও জানে, লারিসা ল্যাটনিনা চকলেটের পাগল। জানে, মিসেস ডেনভার ভোর চারটেয় বাজার করতে যায়। নিশ্চয় চোর এ-বাড়ির ভাড়াটে।
ব্রায়ান এনড্রু! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এ ছাড়া আর কেউ না!
হাসিল শুধু কিশোর, কিছু বলল না।
তুমি জান, সে কে? জিজ্ঞেস করলেন অলিভার।
জানি, কিন্তু প্রমাণ করতে পারব না, বলল কিশোর। টাকাটা নিতে এলে প্যাকেটটা ধরলে, তখন আর অসুবিধে হবে না।
নীরবে কাজ করে চলল কিলোর।
ডাকপিয়ন এল বেলা দশটায়। ততক্ষণে দশটা তোড়া বানিয়ে ফেলেছে। কিশোর। সাজিয়ে রেখেছে বসার ঘরের টেবিলে।
ডাকবাক্সে একটা মাত্র চিঠি ফেলে গেল পিয়ন।
খামটা নিয়ে এল কিশোর। ওপরে টাইপ করে লেখা অলিভারের ঠিকানা। তার দিকে তাকাল গোয়েন্দাপ্রধান। মাথা কাত করলেন অলিভার।
খামটা ছিঁড়ে ফেলল কিশোর। ভেতর থেকে বেরোল একটা ভাজ করা কাগজ। তাতে টাইপ করে ইংরেজিতে লেখা বাদামী কাগজে মুড়ে টাকাগুলো পার্কের কোণের ডাস্টবিনে ফেলে রেখে আসতে হবে আজ বিকেল ঠিক পাঁচটায়।
খামটা উল্টেপাল্টে দেখল কিশোর। উইলশায়ার ডাকঘরের ছাপ। গতকালের তারিখ। গুড, হাসল গোয়েন্দাপ্রধান। অয়েন্টমেন্ট মাখাতে শুরু করল কাগজের তোড়ায়। সবকটা তোড়াতে ভালমত মাখাল। তারপর বাদামী একটা বড় কাগজ পেচিয়ে সুন্দর করে প্যাকেট করল। বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই, ভেতরে টাকা আছে, না শুধু খবরের কাগজ কাটা।
ব্যস, হয়ে গেল, অলিভারের দিকে তাকাল কিশোর। বিকেল পাঁচটায় গিয়ে ডাস্টবিনে প্যাকেটটা রেখে আসবেন। দস্তানা পরে নেবেন। প্যাকেটের ওপরেও মলম মাখিয়েছি। আগে পুলিশে একটা ফোন করে নেবেন। হয়ত প্যাকেটটা তুলে নেবার সময়ই চোরকে ধরতে পারবে ওরা।
যদি অন্য কেউ তুলে নেয় প্যাকেটটা? বললেন অলিভার। সুন্দর প্যাকেট। কোন ছেলেছোকরার চোখে পড়লে তুলে নিতেও পারে।
তা পারে। তবে সেটা হতে দেবে না চোর। নিশ্চয় আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে। আপনি ফেলে দিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসে তুলে নেবে।
আমরা কি যাব? জানতে চাইল মুসা।
হ্যাঁ। পাঁচটায় আমরাও গিয়ে লুকিয়ে থাকব, চোখ রাখব ডাস্টবিনটার ওপর। মিস্টার অলিভার, আপনি আমাদেরকে দেখার চেষ্টা করবেন না। কোনদিকেই তাকাবেন না। সোজা গিয়ে প্যাকেটটা ফেলে রেখে চলে আসবেন।