এজন্যেই, মিসেস ডেনভারের কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে নেবার পর আর কোন জিনিস নাড়াচাড়া হয়নি, বললেন অলিভার। ঘাটাঘাটি করত শুধু ওই বুড়িটাই। টমি ব্যাটা শুধু বাইরে যা আছে দেখতে পারে, দেখে চলে যায়।
হ্যাঁ, মাথা ঝোকাল কিশোর। এখন বোঝা যাচ্ছে, মান্দালাটার কথা জানল কি করে টমি। ছায়াশ্বাপদের কথাও সে জানে। আপনি মিস্টার ইলিয়টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন, সে শুনেছিল। তবে, যেহেতু ছায়া শরীর কিছু ধরতে পারে। না, চোর টমি নয়। চুরিটা যখন হয়, তার ঘরে ঢুকছিল টমি। বারদুই নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল সে। বিশ্বাস করা কঠিন। তবে ডক্টর ক্লোজারের কথা অবিশ্বাসও করা যায় না। তিনি বিজ্ঞানী। আলতু-ফালতু কথা বলেন না। তাছাড়া, ওই ছায়ার। ব্যাপারটার সঙ্গে তাঁর থিওরি পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে।
অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না আর।
জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মুসা। দৃষ্টি রাস্তার দিকে। হঠাৎ বলল সে, জ্যাকবসের ভাগ্নে চলে যাচ্ছে।
তারমানে, এ বাড়িতে এখন আমরা ছাড়া আর কেউ নেই, যে আলমারিতে টাকা রেখেছেন অলিভার, সেটার দিকে চেয়ে আছে কিশোর। ব্যাগ ভর্তি টাকা! রহস্যময় শোনাল তার কণ্ঠ। যেহেতু ব্যাগের ভেতরে রয়েছে, টাকাগুলো অদৃশ্য! হাসি ফুটল তার ঠোঁটে। হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল দুই চোখ। কোন জিনিস আরেকটা জিনিসের ভেতরে থাকলেই অদৃশ্য!
কিশোর, কি বলছ, কিছু বুঝতে পারছি না! বলল রবিন।
একটা গল্প শোনাব?
কিশোর! গুঙিয়ে উঠল মুসা। ফিরে তাকিয়েছে। আর ভুগিও না! বলে ফেল!
খুনের গল্প, কারও দিকেই তাকাল না কিশোর। অনেকদিন আগে একটা বইয়ে পড়েছিলাম। অদৃশ্য একটা অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছিল লোকটাকে।
তাই? আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অলিভার।
ঘরে বসে ডিনার খাচ্ছিল একটা লোক আর তার স্ত্রী, বলল কিশোর। তাদের সঙ্গে সেরাতে খেতে বসেছিল লোকটার এক বন্ধু। দরজা-জানালা সব বন্ধ ঘরের। কি একটা ব্যাপার নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হল লোকটা আর তার বন্ধুর মাঝে। হাতাহাতি শুরু হল এক পর্যায়ে। হাতের নাড়া লেগে টেবিলে বসানো একমাত্র মেমিটা উল্টে পড়ে নিভে গেল। অন্ধকার হয়ে গেল ঘর। অন্ধকারে স্বামীর আর্তনাদ শুনতে পেল স্ত্রী। টের পেল, তার জামার ঝুলে টান পড়েছে। আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল। মহিলা। চিৎকার শুনে ছুটোছুটি করে এল চাকর-বাকরেরা। আবার আলো জ্বালানো হল। দেখা গেল, মেঝেতে মরে পড়ে আছে লোকটা। রক্তাক্ত। বুকের বাঁ পাশে একটা ক্ষত। ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে কাঁপছে বন্ধুটি। মহিলার জামার নিচের দিকে রক্তের দাগ। পুলিশ এল। কিন্তু বন্ধুকে ধরে নিয়ে গিয়েও আবার ছেড়ে দিতে হল। কারণ, যে অস্ত্র দিয়ে মারা হয়েছে লোকটাকে, সেটা পাওয়া গেল না।
আশ্চর্য! বলে উঠল মিকো। কি দিয়ে খুন করা হয়েছিল?
হাসল কিলোর। ব্যাপারটা মেনে নিতে পারল না লোকটার স্ত্রী। তাঁদড় এক গোয়েন্দার কাছে গিয়ে ধর্না দিল। পাওয়া গেল অস্ত্রটা। আবার বন্ধুকে অ্যারেস্ট করল পুলিশ। ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুনের দায়ে ঝুলিয়ে দিল ফাঁসিতে। খুন করা হয়েছিল ছুরি দিয়ে।
ছুরি! চেঁচিয়ে উঠল মিকো। কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল?
বড় একটা কাঁচের ফানেলে পানি ভরে তাতে মানিপ্ল্যান্ট লাগিয়েছিল খুন হওয়া লোকটার স্ত্রী। খুন করেই মহিলার জামায় ছুরির রক্ত মুছে ফেলল বন্ধুটা। ছুরিটা নিয়ে ঢুকিয়ে রাখল ফানেলে।
ওটা তো প্রথমেই পুলিশের চোখে পড়ে যাবার কথা! হাঁ হয়ে গেছে মুসা।
না, কথা না। কারণ ছুরিটা তৈরি হয়েছিল শক্ত ক্রিস্টাল দিয়ে। পানিভর্তি কাঁচের ফানেলে ঢুকিয়ে রাখতেই অদৃশ্য হয়ে গেল। পানি আর কাঁচের সঙ্গে মিশে গেল স্বচ্ছ জিনিসটা। অলিভারের দিকে তাকাল সে হঠাৎ। মিস্টার অলিভার, কেন বিষ খাওয়ানো হল মিস ল্যাটনিনাকে? কারণ, রোজ রাতে নিয়মিত সাঁতার কটিতে। নামত সে সুইমিং পুলে।
ঈশ্বর! চেঁচিয়ে উঠল মিকো।
এবং মিসেস ডেনভার, বলে গেল কিশোর, যতই ছোঁক ছোঁক করুক, আগে তো কেউ কোন ক্ষতি করেনি তার। তার গাড়িতে বোমা মারা হল কবে? পুলের পানি পরিষ্কার করবে, বলার পর। মিস্টার অলিভার, আমরা ক্রিস্টালে তৈরি একটা মূর্তি খুঁজছি। যেটা ওই ছুরির মত জিনিস দিয়েই তৈরি। যেটা পানিতে অদৃশ্য হয়ে যায়।
পুল! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। পুলের পানিতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে মূর্তিটা!
কোমরে হাত রেখে হাসিমুখে উঠে দাঁড়াল কিশোর। আগামীকাল দশ হাজার ডলার দিয়ে মূর্তিটা কিনতে হবে, মিস্টার অলিভার। কেন? আজই যদি পুল থেকে তুলে নিয়ে আসি ওটা? এখনই উপযুক্ত সময়। বাইরের কেউ নেই এখন বাড়িতে।
ঠিক! ঠিক বলেছ! উত্তেজনায় কাঁপছেন অলিভার।
হাসল কিশোর। রবিন, পেছনের গেটে গিয়ে দাঁড়াও তুমি। কেউ আসে কিনা দেখবে। মুসা, সামনের গেটে তুমি থাকবে। রাস্তার দিকে নজর রাখবে।
তুমি? জানতে চাইল মুসা।
সাঁতার কাটতে যাব, শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করেছে কিশোর।
রবিন আর মুসা গিয়ে দাঁড়াল দুই গেটে। কিশোরকে অনুসরণ করে পুলের কিনারে এসে দাঁড়ালেন অলিভার আর মিকো।
খালি গা। ঠাণ্ডায় কেঁপে উঠল কিশোর। একটু দ্বিধা করে নেমে পড়ল সে পানিতে। গলা পানিতে এসে ডুব দিল।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রইলেন অলিভার আর মিকো। এত দেরি করছে। কেন কিশোর! আসলে তিরিশ সেকেণ্ডও যায়নি, এটা খেয়াল করছে না তারা।