যাচ্ছি, কিশোরের দিকে ফিরল বব। তুমি?
আমিও যাব।
ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে এল দুজনে।
খুব বেশি বিড়ি খায় আমার মামা, তিক্ত কণ্ঠে বলল বব। খাটেও সাংঘাতিক, দুশ্চিন্তাও বেশি। আগুন লেগেছে, একদিক থেকে ভালই হয়েছে।
ঝট করে চোখ ফেরাল কিশোর ববের দিকে।
না না, খারাপ অর্থে বলিনি, তাড়াতাড়ি বলল বব। হাসপাতালে একটু বিশ্রাম নিতে পারবে। ইদানীং খুব বেশি নার্ভাস হয়ে পড়েছিল, ঘুমাতই না বলতে গেলে। বড় বেশি ভাবত। অযথাই চমকে চমকে উঠত। এটা লক্ষ করছি ক্রিসমাসের পর থেকে। ব্যবসা সুবিধের যাচ্ছে না কিছুদিন ধরে। সেটাই কারণ হতে পারে। তার ওপর অতিরিক্ত সিগারেট। শরীর তো খারাপ হবেই। এবার আর না ঘুমিয়ে পারবে না। ঘুমোতে না চাইলে ঘুমের বড়ি খাওয়াবে ডাক্তাররা। সিগারেট ছুতেও দেবে না। দিন দুয়েক বিশ্রাম হবে।
এবং সেটা ভালই হবে, রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে, হাঁটতে হাঁটতে বলল কিশোর। ইদানীং ওই বাড়িটাতেও অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা ঘটছে! যে রাতে চোর এসেছিল, তুমি ও-বাড়িতে ছিলে না, না?
নাহ্…একটা মজা মিস করেছি। বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। মামার কাছে শুনলাম, চোর এসেছিল।
মিস্টার অলিভার যে কুকুর আনাচ্ছেন, এটা শুনেছ?
না। বুড়িটাকে সহ্যই করতে পারি না আমি, কথা বলতে এলে পালাই। নইলে হয়ত শুনতে পেতাম।
অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে এসে পৌঁছুল ওরা। চত্বর পেরিয়ে জ্যাকবসের ফ্ল্যাটের কাছে এল।
ভাঙা জানালার দিকে চেয়ে শিস দিয়ে উঠল বব। শার্সিতে ভাঙা কাঁচের কয়েকটা টুকরো লেগে আছে এখনও। পর্দার জায়গায় ঝুলছে কয়েক ফালি পোড়া ন্যাকড়া।
কাঁচের মিস্ত্রিকে খন্ত্র দিতে হবে আগে, পকেট থেকে চাবির গোছা বের করল বব। একটা চাবি বেছে নিয়ে তালায় ঢোকাল। বাইরের অবস্থা দেখেই ভেতরে কি হয়েছে বুঝতে পারছি। এমন হবে জানলে কে যেত মামাকে একা ফেলে! মোচড়। দিয়ে তালা খুলে ফেলল। দরজা খুলে ঢুকে গেল ভেতরে।– কিশোরও ঘুরে দাঁড়াল। ব্যালকনির সিঁড়ির দিকে এগোল। মনে ভাবনা।
লারিসা ল্যাটনিনার বিষ খাওয়াটা কি নিছকই দুর্ঘটনা? জ্যাকবস কি সত্যিই জানে না। কুকুর আনার কথা? যতখানি নিরীহ আর নিরপরাধ মনে হচ্ছে বব বারোজকে, আসলেও কি তাই? তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সন্দেহ পুরোপুরি গিয়ে পড়ে টমি গিলবার্টের ওপর। সে-ই একমাত্র লোক, যে জানতে পারে হাউণ্ডের মূর্তিটার কথা। আরও একটা যদি আছে এখানে-যদি সত্যিই মিস্টার অলিভারের ঘরের ছায়াটা সে-ই হয়। আরেকটা কথা মনে এল কিশোরের। কেউ একজন চাইছে, অ্যাপার্টমেন্ট হাউসটা আর তার আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে দিতে। তা-ই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এরপর কাকে সরানর পালা? নিশ্চয় তিন গোয়েন্দা!
১৬.
বেল বাজাল কিশোর।
দরজা খুলে দিল মিকো ইলিয়ট। এস। মাত্র ফিরেছে তোমার বন্ধু রবিন। কিছু একটা শোনার জন্যে অস্থির হয়ে আছে। তোমার অপেক্ষাই করছে।
একটা সোফায় বসে আছে রবিন। কোলের ওপর খোলা নোট বুক।
পুরানো ধাঁচের একটা চেয়ারে বসা মিস্টার অলিভার। কিশোরকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, লারিসা কেমন আছে?
ভাল, জানাল কিশোর।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। জ্যাকবস? তাকে দেখতে গিয়েছিলে?
গিয়েছিলাম। তেমন আহত মনে হল না। তবে বিশ্রাম দরকার। ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছে। ডাক্তাররা পর্যবেক্ষণে রাখতে চাইছেন।
অ।
আপনার কোন অসুবিধে হয়নি তো?
না, মাথা নাড়লেন অলিভার। বসে না থেকে মিকোকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। টাকা তুলে নিয়ে এসেছি, ল্যাম্প রাখা টেবিলটা দেখালেন। মুদি দোকান থেকে জিনিসপত্র আনার একটা বাদামী ব্যাগ পড়ে আছে। টাকা কত তুলে এনেছি, কত জমা দিয়েছি। জীবনে এত অস্বস্তি বোধ করিনি আর কখনও!
বুদ্ধিটা ভালই বের করেছ, বলে উঠল মিকো। বাজারের ব্যাগে করে টাকা নিয়ে আসা। দশ হাজার ডলার! কেউ কল্পনাই করতে পারবে না।
ব্যাগের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে হাসল কিশোর। হ্যাঁ, ভাল বুদ্ধি।
আবার বাজল বেল। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল মিকো।
মুসা ঢুকল। ধপাস করে বসে পড়ল রবিনের পাশে। কোন লাভ হল না! হতাশ কণ্ঠ। মিথ্যে কথা বলেনি টমি। কাজেই গেছে। আর ব্রায়ান এনড্রুও মিছে কথা বলেনি। সে-ও মোটেলে উঠেছে।
লাভ হল না বলছ কেন? জেনে আসাতে সুবিধেই হয়েছে, মুসাকে আর কিছু– বলার সুযোগ না দিয়ে সামনে ঝুঁকল রবিন। সবাই এসে গেছ। এবার আমার কথা শুরু করি।
কি জেনে এসেছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
একই সময়ে একই সঙ্গে দুজায়গায় থাকতে পারে কিছু কিছু মানুষ, কণ্ঠে রহস্য ঢালল রবিন। ধীরে ধীরে বলে গেল সব, যা যা জেনে এসেছে প্রফেসর লিসা রোজারের কাছ থেকে।
তার মানে, রবিন থামলে বলল কিশোর। টমি দেয়াল ভেদ করে যেখানে খুশি ঢুকতে পারে, এটা বৈজ্ঞানিক সত্য।
লিসা খালা তো তাই বলল।
যাক! আজ নিশ্চিন্ত! জোরে শ্বাস ফেলল মুসা। ম্যানেজারকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকতে পারবে না ব্যাটা। কাজেই ছায়া হয়ে এ-ঘরে আসতে পারবে না।
উঠে গিয়ে ব্যাগটাসহ টাকাগুলো ছোট একটা আলমারিতে ভরে তালা দিয়ে দিলেন অলিভার। সতকর্তা। আশা করি, ছায়া মাথাটা এই আলমারিতে সেঁধিয়ে দিতে পারবে না হারামজাদা!–
যদি পারেও, ব্যাগটা ছাড়া আর কিছু দেখতে পারবে না, কথার পিঠে বলল রবিন। ছায়া চোখ দিয়ে লোকে দেখতে পারে, কিন্তু ছায়া আঙুল দিয়ে কিছু নাড়তে পারে না। কাজেই ভয় নেই।