মাথা ঝোঁকাল কিশোর। হু!—আচ্ছা, বাসায় রয়ে গেছে, এমন কোন জিনিস দরকার আপনার? বললে দিয়ে যাব এক সময়।
না, দরকার নেই, মাথা নাড়ল লারিসা। যা যা লাগে, চাইলেই পাওয়া যায় এখানে। খালি পছন্দসই খাবার দিতে চায় না। এছাড়া সব রকমভাবে সাহায্য করে নার্সেরা। চুপ করল একটু। হয়ত, আগামীকালই ছেড়ে দেবে ওরা আমাকে। কাল নাহলে পশু তো ছাড়বেই।
লারিসাকে গুড বাই জানিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। মনে ভাবনা। যা সন্দেহ করেছিল, মিসেস ডেনভারের কল্যাণে ছায়াশ্বাপদের কথা অলিভারের বাড়ির আর কারও জানতে বাকি নেই। বাইরেরও কজন জানে, কে জানে! ডাকপিয়নসহ হয়ত পোস্ট অফিসেরও সবাই জানে। গির্জার ওরাও জানে নিশ্চয়। হয়ত পুরো পাড়াই খবরটা জেনে গেছে। তবে, লোকেরা জানে, জ্যান্ত কুকুর আনবেন অলিভার।
মূর্তিটার কথা কজন জানে? টমি গিলবার্ট? জ্যাকবস? জিজ্ঞেস করতে হবে স্টকব্রোকারকে। ওখানেই যাবে এখন কিশোর। হ্যামলিন ক্লিনিক কোথায়, চেনে না সে। ট্যাক্সি নেয়া স্থির করল।
ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডে চলে এল কিশোর। সারির সবচেয়ে আগের গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল, হ্যামলিন ক্লিনিক কোথায়, চেনেন?
অবশ্যই। উইলশায়ার আর ইয়েলের মাঝামাঝি
যাবেন?
এস।
অবাক হয়ে দেখল কিশোর, প্যাসিও প্লেসের দিকে ছুটেছে ট্যাক্সি। আরে! মিস্টার অলিভারের বাড়িতে চলে যাবে নাকি? দূর, কি বোকামি করেছে! অলিভারকে জিজ্ঞেস করলেই হত। তার বাড়ির মাত্র দুটো ব্লক দূরে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল ট্যাক্সি। ছোটখাট একটা আধুনিক বাড়ি। গেটের কপালে বড় করে লেখা: হ্যামলিন ক্লিনিক।
ড্রাইভারের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে হাসপাতালে ঢুকে পড়ল কিশোর। রিসেপশন রুমে ঢুকেই থমকে গেল। সেন্ট্রাল হাসপাতালের তুলনায় এটা রাজবাড়ি। প্রাইভেট ক্লিনিক, যারা প্রচুর পয়সা খরচ করতে পারে, তাদের জন্যে। পুরু কার্পেটে ঢাকা মেঝে। দামি আসবাবপত্র। ঝকঝকে একটা ডেস্কের ওপাশে বসে আছে হালকা। লাল পোশাক পরা স্মার্ট রিসেপশনিস্ট। কাছে এসে জ্যাকবসের রুম নাম্বার জানতে চাইল কিশোর। মিষ্টি করে হাসল মেয়েটা। একটা খাতা খুলে নাম মিলিয়ে কেবিন নাম্বার বলে দিল।
দোতলায় কোণের দিকে বেশ বড়সড় একটা ঘর। দুটো খোলা জানালা দিয়ে। রোদ ঢুকছে। বিছানায় শুয়ে আছে জ্যাকবস। লাল মুখ ফেকাসে সাদা হয়ে গেছে। বিছানার পায়ের কাছে একটা আর্মচেয়ারে বসে আছে তার ভাগ্নে বব বারোজ। চোখমুখ কালো করে রেখেছে।
কিশোরকে দেখেই বলে উঠল জ্যাকবস, উপদেশ দিতে এসেছ তো? যেতে পার। অনেক হয়েছে। সারাটা দিন আমার কান ঝালাপালা করে ফেলেছে বব।
সব সময় বলেছি, আবারও বলছি, ঘোষণা করল বব। ওই সিগারেট তোমাকে খাবে! এবারে বেঁচ্ছে কোনমতে, এর পরের বার আর বাঁচবে না।
একশো বার বলছি, আমি ক্লান্ত ছিলাম, মুখ গোমড়া করে ফেলেছে। জ্যাকবস। ক্লান্ত ছিলাম, সেজন্যেই ঘটল এটা। জানিসই তো, খুব হুঁশিয়ার থাকি আমি। সিগারেট নিয়ে বেডরুমেও যাই না।
তাহলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাওয়ার জন্যে বুঝি সোফায় শুয়েছিলে?
গুঙিয়ে উঠল জ্যাকবস। উফ, আর পারি না! বাঁচাল ভাগ্নের চেয়ে খারাপ জীব আর কিছু নেই পৃথিবীতে!
তাই ঘটেছিল, না? মাঝখান থেকে কথা বলে উঠল কিশোর। সিগারেট মুখে। নিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?
তাই হয়ত হবে! স্বীকার করল জ্যাকবস। এছাড়া আর কি হতে পারে? মনে আছে, মিসেস ডেনভার অ্যাক্সিডেন্ট করার পর ঘরে ঢুকেছি…ভীষণ ঘুম পেয়েছিল—শেষ একটা সিগারেট ধরিয়ে ছিলাম সোফায় বসে-তারপর আর কিছু মনে নেই। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। জেগে উঠে দেখলাম ধোয়ায় ভরে গেছে ঘর। চোখ জ্বালা করছে। ভাল দেখতে পাচ্ছি না। এর মাঝেই দরজাটা খুঁজে বের করতে গেলাম। তারপর তো বেহুশ!
ভুল দিকে দরজা খুঁজতে গিয়েছিলেন, বলল কিশোর। বেডরুমের দিকে চলে গিয়েছিলেন।
মাথা ঝোঁকাল জ্যাকবস। তুমি বের করে এনেছ আমাকে।
আমি একা নই, জানাল কিশোর। রবিন, মুসা আর টমিও সঙ্গে ছিল। টমিকেই ধন্যবাদ দেয়া উচিত আপনার। আগুন লেগেছে, সে-ই দেখেছে প্রথমে।
অদ্ভুত একটা ছেলে! বিড়বিড় করল জ্যাকবস। দেখতে পারতাম না ওকে। অথচ ও-ই আমার জান বাঁচাল।
মিস্টার জ্যাকবস, বলল কিশোর। মিস্টার অলিভার একটা কুকুর আনাচ্ছেন, শুনেছেন আপনি?
কুকুর! বালিশ থেকে মাথা তুলে ফেলল জ্যাকবস। কুকুর দিয়ে কি করবে?
জানি না। শুনলাম, কুকুর আনবে শুনে মিসেস ডেনভার খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
ওই মহিলা! ও-তো খামোকাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। কতখানি সত্যি বলেছে তাই বা কে জানে! এত বেশিকথা বলে, মিথ্যে না বললে পাবে কোথায় কথা? আবার বালিশে মাথা রাখল জ্যাকবস। টান টান করল শরীরটা। ওই বাড়িতে আর থাকছি না আমি। কিশোরের দিকে তাকাল। তোমরাও চলে যাও ওখান থেকে। বাড়িটা মোটেই নিরাপদ না।
উঠে দুপা এগিয়ে এল বব। ওসব নিয়ে ভেব না এখন। ডাক্তার বলেছে, চুপচাপ বিশ্রাম নিতে। আমি যাচ্ছি, ঘরদোর পরিষ্কার করে ফেলিগে। কিছু মেরামতের থাকলে তা-ও করে ফেলব। আগে ভাল হয়ে ওঠো, তারপর খুঁজে পেতে। ভাল আরেকটা বাড়ি দেখে উঠে যাব।
হাসল জ্যাকবস। আসলে ছেলেটা তুই খারাপ না, বব। একেক সময় ভাবি, . আমি তোর গার্জেন, না তুই আমার!